ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে খানাখন্দে দুর্ঘটনা
২৩ কিলোমিটারে এক বছরে ২৯ জনের মৃত্যু
ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল
প্রকাশ: শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪, ১২:৫৫ এএম  (ভিজিট : ৪৭৪)
ছোট-বড় গর্ত, খানাখন্দসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাই অংশের ১৭ কিলোমিটার সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধামরাইয়ের কালামপুর থেকে মানিকগঞ্জের তরা ব্রিজ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়কে ৩৯টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপরও বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও সরেজমিন ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি মহাসড়কের বারবাড়িয়া এলাকা থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে দেখা যায়, অন্তত শতাধিক জায়গায় ছোট-বড় গর্ত এবং ফাটলসহ অসংখ্য খানাখন্দ।

এর মধ্যে ইনসেপটার পর থেকে বাথুলি এক্সেল লোড পর্যন্ত সড়কের উভয় লেনে, বালিথার অশোক লেল্যান্ডের সম্মুখভাগ, বালিথার একেএস ও একেএসের পার্কিং এলাকার সম্মুখভাগ, শ্রীরামপুরে ডিভাইডারের দুই লেন, ডাবরের সামনে উভয় লেন, কালামপুর বিসিকের সামনে থেকে ভায়াডুবি বিলের সামনে সড়কের উভয় লেন, জয়পুরা কালভার্টের পরের ডিভাইডারের উভয় লেন এবং আলাদিন পার্কের গেটের ২০ গজ আগে থেকে ধামরাই রেডিও অফিস পর্যন্ত খানাখন্দে একাকার। এসব খানাখন্দেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে ঠিক কোন এলাকা বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছেই কোনো তথ্য নেই।

তবে দুর্ঘটনার শিকার অনেকেই জানান, খানাখন্দের কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা। এমনই একজন নাজমুল করিম। পেশাগত কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় সড়কের গর্তে ছিটকে পড়ে তার বাইক। মহাসড়কে পড়ে গুরুতর আহত হন। কর্মহীন থাকতে হয় প্রায় একমাস। তার ভাষ্য, মহাসড়ক ফাঁকা থাকায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। প্রায় তিন মাস আগে ওই দুর্ঘটনার পর বাইক চালানো বাদ দিয়েছেন। খানাখন্দভরা সড়কে চলাচল নিয়ে আতঙ্কের কথাও জানান তিনি। এদিকে খানাখন্দের কারণে ব্যস্ত সড়কে ছিটকে পড়ে চলাচলরত অন্য গাড়ির চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ও অন্যান্য যাত্রীদের প্রায়ই মৃত্যু ঘটছে।

সড়কের যানবাহনের চালকরাও জানিয়েছেন ঝুঁকির কথা। সেলফি পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক শুক্কুর আলী বলেন, ‘গাড়ি প্রায়ই গর্তে পড়ে জাম্প করে ওঠে। গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট হয়।’

একই কথা বলেন আন্তঃজেলা ট্রাকের চালক বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, ‘লোড গাড়ি চালাতে হয় চাপ নিয়ে। গর্ত, ভাঙাচুরা ও উঁচুনিচু সড়কের কারণে গাড়ি বড় ঝাঁকুনি দেয়। ভয়ে থাকি।’ দুর্ঘটনায় হতাহতের তথ্য থাকলেও ছোটখাটো দুর্ঘটনার তথ্য নেই মহাসড়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হাইওয়ে পুলিশের কাছে।

পুলিশ জানায়, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধামরাইয়ের কালামপুর থেকে মানিকগঞ্জের তরা ব্রিজ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়কে ৩৯টি দুর্ঘটনায় ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে দুর্ঘটনার কারণ ও প্রকৃতি সম্পর্কে তেমন তথ্য নেই তাদের কাছে।

অপরদিকে নিরাপদ সড়ক চাই (নিশচা) আন্দোলনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরে ইসলামপুর থেকে বারবাড়িয়া পর্যন্ত সড়কে ৯৫ দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু ও ১৪০ জন আহত হয়েছে।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনটির মতে, মহাসড়কের খানাখন্দ, বেপরোয়া যানবাহন চলাচল, অবৈজ্ঞানিকভাবে সড়ক নির্মাণসহ নানা কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়িয়েছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মহাসড়কের ঢুলিভিটা এলাকায় মূল লেনে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় বেপরোয়াভাবে আসা বেসরকারি একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারান ৪১তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. রুবেল পারভেজসহ দুজন। ওই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, পরিবহন চলাচল করে মূল লেনে। যাত্রীরা সেই পরিবহন ধরতে সড়ক বিভাজক টপকে মূল লেনে যান। অথচ যাত্রীবাহী বাসের সার্ভিস লেনে চলাচল কিংবা মূল লেনে যাত্রী ওঠানামা বন্ধে কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই। সবকিছু মিলিয়ে সাম্প্রতিককালে আরও অনেকেই একইভাবে মহাসড়কে প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এসব দুর্ঘটনা রোধে সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আলাদা কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ধামরাই উপজেলা কমিটির সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, ‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও ধামরাই অংশে প্রচুর খানাখন্দ। সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করে। দ্রুতগামী গাড়িগুলো গর্তে পড়ে সেটা পার করার সময় উঁচু হয়ে যায়। মোটরসাইকেল ছিটকে পড়ে। সড়ক সমান্তরাল না হওয়ায় এটি একটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।’

গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু বলেন, ‘আমরা নিয়মিত সড়ক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। আমি সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। মহাসড়কের যেসব জায়গায় খানাখন্দ আছে তারা ঈদের আগেই সব ঠিক করে দেবে।’

এ অঞ্চলের সড়কের দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নয়ারহাট কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের রাস্তায় গর্ত যে আছে এরকম নয়। হয়তো কিছু রাস্তায় ট্যাক হইছে। আমাদের এখানে অলরেডি এ কাজটি করতে বড় ধরনের প্রোগ্রাম নেওয়া লাগবে। কিছু কিছু জায়গায় কাজ করা হয়েছে। আর কিছু কিছু গ্যাপে কাজ করা হয়নি গত কয়েক বছর। আমরা কাজের প্রস্তাব দিয়েছি। তবে একটু সময় লাগবে।’


সময়ের আলো/আরএস/






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close