ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

হোটেলের পচা-বাসি খাবারে রোজা রাখেন খেয়া নৌকার মাঝিরা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪, ১১:২২ পিএম  (ভিজিট : ৮১৬)
বুড়িগঙ্গা নদীর এপারে ওয়াজঘাট আর ওপারে কালীগঞ্জ। প্রতিদিন এই ঘাট দিয়ে শত শত যাত্রী পারাপার হয়। সেকান্দার মাঝিকে প্রশ্ন করি, আনুমানিক প্রতিদিন কত লোক পারাপার হয় এই ঘাট দিয়ে? সেকান্দার মাঝি আমতা আমতা করতে থাকেন। তার পাশে বসা রফিক মাঝি বলেন, তা ধরেন বিশ হাজার তো হইবই— আমাগো এই ঘাটে সারাদিন-রাইতে প্রায় ৩০০ নৌকা চলাচল করে। বড় নৌকাগুলাতে চার-পাঁচ জন করে যাত্রী উঠে। আর ছোট গুলাতে (রিজার্ভ) এক দুই জন করে পারাপার হয়। রফিক মাঝির কথায় সায় দেয়, ইফতার করতে বসা জহির মাঝি। 

চটজলদি ইফতার সেরে নৌকার মাঝিরা নামাজ আদায় করতে শুরু করে, খেয়া ঘাটটিতে পারাপারের জন্য যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই কোন এক মাঝিরে কণ্ঠে ডাক শুনতে পাই, ঐ রিজার্ভ আহেন, এই দিকে। ঈদের কেনা-কাটা তাই সবার ব্যস্ততা যেন একটু অন্যরকম।

জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রায় ১০ হাজার মাঝি নৌকা বাইয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে বেশির ভাগ মাঝি নৌকায় খায় ও ঘুমায়। তাই রোজা রাখতে পারে না। তা ছাড়া তাদের বাসাবাড়ি নেই। তাদের গ্রামের বাড়িতে কারো কারো ঘরবাড়ি কিছুই নেই। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেন না টাকার অভাবে। দৈনিক খরচের পরে ২০০ টাকাও থাকে না। ঘাট মালিক খাজনা বাবদ নিতেন ১৪৫ টাকা। এরপরে ৩০ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকা করা হয়। গত সপ্তাহ থেকে বাড়তি নিচ্ছে ১৯৫ টাকা। এখন আবার ২২৫ টাকা নৌকা প্রতি খাজনার নামে চাঁদাবাজি করছে।

মাঝিরা আরো জানান, প্রতিদিন সাড়ে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা খরচের পরে সন্তানদের জন্য কিছুই থাকে না। সন্তানকে লেখাপড়া করাতে পারি না। রোজা রাখতে পারি না। সেহেরিতে পচা ভাত খেতে হয়। আর ইফতারিতে বাসি ছোলা বুট খেতে হয়। 

মুনসুর আলী (৬৫) নামে এক মাঝি জানান, ৪০ বছর যাবত নৌকা বাইয়ে জীবন-জীবিকা চালাই। পাঁচ মেয়ে এক ছেলে। আটজনের সংসার তার। গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়ায়। নৌকা ভাড়া ও ঘাট খাজনা বাবদ ৩০০ টাকা দেয়ার পরে যা থাকে তাই দিয়ে সংসার চলে। তিন বেলার এক বেলাও পেট ভরে খেতে পারি না। 

তিনি বলেন, নৌকায় ঘুমাই আর নৌকায় খাই। একটি মেচ বাসা থেকে রাতের খাবার কিনে খাই। তবে বেশির ভাগ সময়ই ভাত কিংবা ডাল পচে যায়। আর তাই খেয়ে রোজা রাখি। তা ছাড়া ইফতারিতেও জোটে বাসি খাবার।

লিয়াকত আলী নামে আরেক মাঝি জানান, তার বয়স (৬০) বছর। ২৫ বছর যাবত নৌকা বাইয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন রোজা রাখতে পারেন না। থাকা, খাওয়া ও ঘুমানো সবাই চলে নৌকায়। শরীরে নানা রোগে জর্জরিত। তা ছাড়া রোজা রাখতে গেলে খাওয়ার সমস্যা হয়। সেহেরি আনতে হয় ম্যাচ থেকে তা শেষ রাতে পচে যায়। আর ইফতার কিনে খেতে হয় বাসি। দোকানিরা ইচ্ছে করেই আগের দিনের ইফতারি তাদের কাছে বিক্রি করে। ওই সব খেয়ে পেটব্যথা ছাড়াও বুক জ্বলে সবসময়। 

হারুন নামে ষাটোর্ধ্ব এক মাঝি জানান, ইফতারি কিনেন বেড়িবাঁধে গড়ে ওঠা হোটেলগুলো থেকে। বাসি পড়া খাবার ওইসব হোটেলে থাকেই। তারা মাঝি জেনেই বাসি ইফতারি বিক্রি করে। কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না। তাহলে মারধর করে। আমরা গরিব বলে সহ্য করতে হয়।

ব্রিজ ঘাটের মাঝি রফিকুল ইসলাম জানান, দৈনিক নৌকা ভাড়া ১০০, ঘাট মালিককে ১৯৫ টাকা ও নৌকা পাহারা বাবদ ১৫ টাকা দেয়ার পরে ৩০০ কিংবা ৪০০ টাকা থাকে। তা দিয়ে নিজে খাবো না বাড়িতে পাঠাবো। ওখানে পাঁচজন খায়। তিন বেলার এক বেলাও পেট ভরে খেতে পারি না। ইফতার আর সেহেরির বিষয়ে সবার একই মন্তব্য।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  বুড়িগঙ্গা নদী   খেয়া নৌকার মাঝিরা   জীবনযাপন  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close