ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আদমদীঘিতে চড়া দাম রাখছে ব্যবসায়ীরা
তরমুজ কেজি দরে বিক্রির কথা জানে না চাষিরা
প্রকাশ: শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪, ৪:৪৩ এএম  (ভিজিট : ৬১৮)
তরমুজ কেজি দরে বিক্রি করা যাবে না বলে নির্দেশনা থাকলেও আদমদীঘির ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। অপরিপক্ব তরমুজ তারা বাজারে কেজি দরে বিক্রি করছে চড়া দামে। ইফতারিতে রসালো ফলের চাহিদা অনেক। আর এ সুযোগে অত্যধিক মুনাফালোভী টাউট ব্যবসায়ীরা ফ্রিস্টাইলে দাম হাতিয়ে নিচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। কিন্তু তরমুজের উৎপাদক চাষি এর মূল্য পায় যৎসামান্যই। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া-দালালরাই সব লাভের গুড় খেয়ে নেয়। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তরমুজ কী করে কেজি দরে বিক্রি হয় তা নিয়ে আদমদীঘির স্থানীয় প্রশাসনেরও কোনো রা নেই।

যে চাষি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তরমুজ উৎপাদন করে সে কিন্তু জানে না তার এ ফল বাজারে বিক্রি হয় কেজি দরে। পাইকাররা তার কাছ থেকে পিস হিসেবেই তরমুজ কিনে নেয়। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে বগুড়ার আদমদীঘিতে তরমুজ ব্যবসায়ীদের এ স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। কৃষকের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ব তরমুজ পিস হিসেবে কিনে নিয়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে। তা ছাড়া বেশির ভাগ তরমুজের দোকানে বিক্রয় মূল্যের তালিকাও নেই। যদিও তরমুজ বিক্রেতারা বলছে, তারা কেজিতেই তরমুজ কিনেছে। 

তবে প্রান্তিক কৃষকরা জানেনই না, তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হয়। তারা পিস হিসেবে বিক্রি করেন। এরপর যতবার তরমুজ হাত বদল হয় ততবারই দাম বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ভোক্তার কাছে এসে ঠেকে কেজিতে। যার দাম কৃষকের কাছে অকল্পনীয়। 

উপজেলার কয়েকজন প্রান্তিক তরমুজ চাষির সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা জানিয়েছে, তরমুজ কেজিতে বিক্রি হয়-এ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তারা শুরু থেকেই তরমুজ পিস হিসেবে কেনাবেচা করে আসছেন। তরমুজের কেজি কত সে সম্পর্কে কেউ কেউ সংবাদ মাধ্যম থেকে জানলেও বেশির ভাগেরই তা অজানা। 

তরমুজ চাষিরা জানান, দুইভাবে তরমুজ বিক্রি করেন তারা। প্রথমত, ক্ষেত চুক্তি, এতে পুরো ক্ষেতের তরমুজ অনুমান করে একসঙ্গে বিক্রি করে দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের কাছে। এতে মূল চাষির ব্যয়ের সঙ্গে লাভ ধরে দাম নির্ধারণ করে তারা। বিক্রির পর ব্যবসায়ীরা তাদের সময়-সুযোগ অনুযায়ী ক্ষেত থেকে তরমুজ নিয়ে যায়। 

দ্বিতীয়ত, ক্ষেত থেকে তরমুজ কেটে শত হিসাবে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ ক্ষেত্রে ওজন ও আকার অনুযায়ী ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়।

সরেজমিন সান্তাহার রেলগেট চত্বরে তরমুজের বাজারে দেখা যায়, অপরিপক্ব তরমুজ ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। গরমের মৌসুমে রমজানের সময় তরমুজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সান্তাহারের ব্যবসায়ীরা ৭-৮টি তরমুজের দোকান খুলে বসেছে। রমজানে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম পেতে ক্ষেত থেকে তুলে নেয় অপরিপক্ব তরমুজ। বেশির ভাগ তরমুজ ছোট ও মাঝারি সাইজের। 

ক্রেতাদের অভিযোগ ব্যবসায়ীরা তরমুজ পিস হিসাবে কিনে তা কেজি হিসাবে বিক্রি করছে। অবশ্য বিক্রেতাদের অনেকেই বলছেন তারাও কেজি হিসাবেই তরমুজ কিনেছেন এবং সে কারণেই কেজি দরেই বিক্রি করছেন। যদিও উপজেলার বেশির ভাগ তরমুজের দোকানে বিক্রয় মূল্যের তালিকা নেই।

আদমদীঘি কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, সাধারণত ডিসেম্বর মাসে তরমুজের আবাদ শুরু হয়। এর ফল ওঠে এপ্রিলে। পরিপক্ব তরমুজ উঠতে উঠতে চৈত্র বা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ চলে আসে। কিন্তু কোনো কোনো চাষি অধিক মূল্যের আশায় আগেভাগেই অপরিপক্ব তরমুজ তুলে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন।প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫-৩০ টন তরমুজ হয়ে থাকে। কৃষকরা তরমুজ পিস হিসাবে বা সমগ্র ক্ষেতের তরমুজ একত্রে বিক্রি করে দেয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা পিস হিসেবে ক্রয়কৃত তরমুজ ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকে। আর এর চাপ পড়ে ভোক্তাদের ওপর।

সান্তাহার রেলগেটের তরমুজ ব্যবসায়ী আজাদ বলেন, মোকামেই আমরা বেশি দামে তরমুজ কিনেছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। 

আরেক বিক্রেতা মাসুদ বলেন, এই দাম থাকবে না। আমদানি বাড়লে দাম কমবে। আমরা পিস হিসেবেই কিনেছি। ক্রেতারা আমাদের ভুল বোঝে। 

স্কুল শিক্ষক সৌরভ হাসান বলেন, ৮০ টাকা কেজি দরে ৩ কেজি ওজনের একটি তরমুজ কিনলাম। দামটা বেশি। বাচ্চারা খেতে চেয়েছে। আমাদের মধ্যবিত্তের সাধ আর সাধ্যের মাঝে ফারাক অনেক। তবে প্রশাসনের মনিটরিং থাকা দরকার। অপরিপক্ব তরমুজ বেশি দামে কিনতে হলো।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close