ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সিয়াম-সাধনার আত্মতৃপ্তি
‘প্রতিদিন এতো মানুষকে ইফতারে সাহায্য করি, ভাবতেই শিউরে উঠি’
প্রকাশ: বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪, ৮:৪৭ পিএম  (ভিজিট : ৮৭২)
বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া বাজারে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ সারা দিন রোজা রাখার পর একটু ভালো মানের ইফতার তাদের কাছে বিলাসিতা মনে হয়। তাদের কয়েক প্রকারের ইফতার সামগ্রী কেনাটা অসম্ভব। সেই মানুষদের জন্য সিয়াম-সাধনার আত্মতৃপ্তি এ অনুধাবনকে বুকে লালন করে নোয়াখালীতে দু:স্থ, অসহায়, পথচারী ও নিম্ন আয়ের প্রায় দেড় শতাধিক রোজদারকে প্রতিদিন ইফতার করাচ্ছেন আলোকিত মানবিক অর্গানাইজেশন নামে একটি সংগঠন। প্রতিদিন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের পাশে ইফতার করাচ্ছে এই সংগঠনটি।

সংগঠন সূত্রে জানা যায়, বিগত চার বছর যাবত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সাধারণ মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করে এই সংগঠনটি। এই ইফতারে সামিল হয় নিম্ন আয়ের, সাধারণ খেটে খাওয়া, পথচারী। এছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে এখানে কাজে এসেছে এমন মানুষও এ ইফতারে সামিল হয়। প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের জন্য আয়োজন থাকে। তারপরও দেখা যায় আয়োজনের বিপরীতে ইফতার গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সাধ্য অনুযায়ী দ্রুত আরো ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিদিন ইফতারিতে থাকে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, শরবতসহ সাদা পানি। খরচ পড়ে ৬০ টাকার মতো। একেকদিন একেকজনের সহায়তায় এ ইফতার আয়োজন করা হয়। ইফতার সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করেন। তাদের সফল প্রচেষ্টায় এ ইফতার আয়োজন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে শেষ হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ইফতার আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ বসার জন্য তেরপাল সাজাচ্ছেন। কেউ শরবত করার জন্য পানির ব্যবস্থা করছেন। আবার কেউ ইফতার সামগ্রী ঠিক ভাবে হচ্ছে কিনা তা তদারকি করছেন।

ইফতার করতে আসা রিকশাচালক মো. সিরাজ বলেন, আমরা গরীব মানুষ। এখন যে বাজার তাতে হোটেলে বসে ইফতার করতে ১০০ টাকার উপরে লাগে। এখানে যারা ইফতার করাচ্ছেন তারা অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ।

সাফিয়া নামে এক ভিক্ষুক বলেন, ভিক্ষা করে যে টাকা পাই তাতে একটু ভালো ইফতার আশা করতে পারিনা। এখানে আল্লার ওয়াস্তে ইফতার করানো হয় এটা শুনে ইফতার করতে আসি। পেট ভরে যায়। মনও ভরে যায়। যারা দেয় তারা খুব আন্তরিক। আল্লাহ যেন তাদের ভালো করুক।

মো. ইসমাইল নামে এক পথচারী বলেন, আমি এখানে এসেছি কাজে। ইফতারের সময় হয়ে গেছে। আযান পড়েছে। দ্রুত যাওয়ার সময় দেখলাম অনেক মানুষ ইফতার করছে। দ্রুত চলে এলাম। স্বেচ্ছাসেবীরা যে আপ্যায়ন করেছে তাতে আমি মুগ্ধ।

স্বেচ্ছ্বাসেবক রানা বলেন, ইফতার করাতে ভালো লাগে। মনের টানেই চলে আসি। প্রতিদিন এক সাথে এত মানুষকে ইফতার করাতে সাহায্য করি। এটাই আত্মতৃপ্তি।

নুসরাত নামে আরেক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, প্রতিদিন এতো মানুষকে একসাথে ইফতার করাতে সাহায্য করি, ভাবতেই শিউরে উঠি। সত্যিই এক ভালো লাগার সময় চলে যায়।

তানভির নামে আরেক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, আমরা বেশ কয়েকজন আছি। সবাই মিলে প্রতিদিনের ইফতার আয়োজন সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি। কেউ যেন ইফতার না পেয়ে চলে যায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকি।

আলোকিত মানবিক অর্গানাইজেশন সংগঠনের ইভেন্ট আহবায়ক মিজানুর রহমান বলেন, এ ইফতার আয়োজন মূলত: করোনা মহামারীর সময় থেকে। আমরা প্রতি বছরের মতো এবারো অসহায়, দু:স্থ, পথচারী, গরীব, নিম্ন আয়ের পেশাজীবীদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেছি। এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম তাতে সমস্যায় পড়ে যাই। তারপরেও বিত্তবান, উদার মনের আলোকিত মানুষের সহায়তায় সুষ্ঠুভাবে আয়োজন সম্পন্ন করি। সাথে সাহায্য করে এক ঝাঁক আলোকিত মনের তরুণ। তারা যে ভাবে উদার মন নিয়ে এ প্রতিদিনের ইফতার আয়োজনে সামিল হয় তা সত্যিই এযুগের তরুণদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই নোয়াখালী পৌরসভাকে সুপেয় পানি দিয়ে রোজদারদের সাহায্য করার জন্য। আশা করি সবার সহযোগিতায় পুরো রমজান মাসেই আল্লাহর হুকুমে এ ইফতার আয়োজন চলমান থাকবে। 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  দু:স্থদের ইফতার   আলোকিত মানবিক অর্গানাইজেশন   নোয়াখালী  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close