পবিত্র রমজানের এক পুণ্যময় আয়োজন ইফতার। ‘ইফতার’ অর্থ রোজা ভাঙা বা সমাপ্ত করা। সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা সমাপ্ত করার নামই ইফতার। ইফতার কেবল পেটের ক্ষুধা নিবারণ নয়, এটি একটি স্বতন্ত্র ইবাদতও। ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকা, দোয়া করা এবং সময় হওয়ামাত্র দ্রুত ইফতার করে নেওয়া পুণ্যের কাজ। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি)
ইফতার রোজাদারকে পুণ্য ও পুরস্কার অর্জনের সুযোগ করে দেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। নানারকম মজাদার খাবার সামনে নিয়ে মহান আল্লাহ পাকের হুকুমের অপেক্ষায় বসে থাকা ও হুকুম হলে খাবার মুখে দেয়া, ধৈর্যশীল ও অনুগত বান্দার আলামত। ইফতারের এ বিধান ইসলামের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা এবং আধ্যাত্মিকভাবের যে প্রতিফলন ঘটে, তা সত্যিই অতুলনীয়।
ইফতারিতে বাহারি খাবাব কিংবা অধিক পরিমাণ খাওয়া মুমিনের জন্য আনন্দের নয়। বরং হালাল খাদ্যবস্তু দ্বারা ইফতার করতে পারাই তৃপ্তি। চাই একটি খেজুর কিংবা সামান্য পানি দিয়ে হলেও। খেজুর বা মিষ্টান্ন দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দ্বারা; নিশ্চয় পানি পবিত্র’ (আবু দাউদ : ২৩৫৭)। ইফতারে বিশেষভাবে লক্ষণীয় অপচয় না করা। কারণ অপচয়কারী শয়তানের ভাই। তাই যতটুকু খেতে পারব, ততটুকুই যেন ইফতারির আয়োজন রাখি আমরা।
হালাল খাদ্যে দ্রুত ইফতার করার মধ্যে যেমন পুণ্য রয়েছে, তেমনি অন্যকে ইফতার করানোর মধ্যেও ফজিলত রয়েছে। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে পাবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পানিমিশ্রিত এক কাপ দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দিয়েও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও আল্লাহ তাকে সেই পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’
ইফতারের পূর্বে রোজাদারের দোয়া কবুলের কথা বলা হয়েছে হাদিসে। এটা নিশ্চয় রোজাদারের জন্য বিশেষ পুরস্কার। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. রোজাদারের দোয়া ইফতার করা পর্যন্ত, ২. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর দোয়া, ৩. মাজলুমের দোয়া। (মুসনাদে আহমদ : ৯৭৪৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই প্রিয় যে আল্লাহ তায়ালা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দারা যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)
এ ছাড়াও ইফতারের পূর্বমুহূর্তটি রোজাদারের খুব আনন্দের সময়। কেউ আনন্দ পায় ইফতার তৈরি করে, কেউ মিলেমিশে ইফতার করে, কেউ আনন্দ পায় অন্যকে ইফতার করিয়ে।
তবে দুঃখজনক হলো, অনেকেই ইফতারে অতিরিক্ত খাবার নিয়ে অপচয় করি। কিছুটা খেয়ে বাকিটা ফেলে দিই। অথচ আমাদেরই আশপাশে কত গরিব রোজাদার আছেন; যারা ইফতারির তেমন আয়োজনে করতে পারে না। মজাদার কিছু তো কল্পনাই করতে পারে না। তাই, আমাদের ইফতারিতে অতিরিক্ত কিছু না রাখি, অপচয় না করি, অসহায়-গরিবদের জন্য কিছু ব্যবস্থা করি। মহান আল্লাহ আমাদের রোজা ও ইফতার কবুল করুন।
সময়ের আলো/জেডআই