ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
‘ঝুলে যাওয়া কি সমাধান হতে পারে’ বলা মেয়েটাই ঝুললো সিলিংয়ে
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৪, ৫:৩৮ পিএম আপডেট: ১৭.০৩.২০২৪ ৪:১০ পিএম  (ভিজিট : ১৬৬৩)
জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। ছবি: ফেসবুক

জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। ছবি: ফেসবুক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘কনসার্ট ফর জহির’ এর স্টেজে উপস্থাপনা করেছিলেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। কনসার্টে উপস্থিত হাজারো শিক্ষার্থীকে সুইসাইডের বিরুদ্ধে সবাইকে এতো চমৎকার ভাবে মেসেজ দিয়েছিলো অথচ সেই মেয়েটাই মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সুইসাইডের পথ বেছে নিলো।

“জোনাক পাখি, জোনাক পাখি, মৃত্যু কত দূরে! ঝুলে যাওয়া কি সমাধান হতে পারে?” এ গভীর লাইন বলা প্রাণবন্ত মেয়েটাই ঝুলে পড়লো সিলিংয়ে।

গতকাল শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে ফাইরুজ নগরীর বাগিচাগাঁও ‘পিসি পার্ক স্মরণিকা’ নামের ১০ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার বাসায় গলায় রশি বেঁধে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।
প্রয়াত বাবা জামাল উদ্দিনের সাথে ফাইরুজ অবন্তিকা। ছবি: ফেসবুক

প্রয়াত বাবা জামাল উদ্দিনের সাথে ফাইরুজ অবন্তিকা। ছবি: ফেসবুক


মৃত্যুর ১০ মিনিট পূর্বে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন অবন্তিকা। তাতে আম্মান সিদ্দিকী নামে তার এক সহপাঠীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন।

ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা লিখেছেন ‘আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম... এটা সুইসাইড না, এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার।’

অবন্তিকার মা কুমিল্লায় সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েকজন সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের মানসিক উৎপীড়নের কারণেই তার মেয়ে আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম বলছেন, দু’বছর আগে ফাইরুজ অবন্তিকার সাথে তারই কয়েকজন সহপাঠীর বিরোধ শুরু হয় ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ে। এ নিয়ে থানায় একটি জিডিও হয়। পরে উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

যদিও এরপরেও জিডিটি আর তুলে নেয়া হয়নি এবং এ নিয়ে অবন্তিকার বাবা-মাও কয়েকবার এসে প্রক্টর অফিসে অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার ঘনিষ্ঠ অনেকে ফেসবুকে লিখেছেন ওই ঘটনার পর থেকে ব্যাপকভাবে মানসিক উৎপীড়নের শিকার হচ্ছিলেন অবন্তিকা।

আইন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, এরপর থেকে সহপাঠীরা অনেকে তার সাথে বসতো না, কথা বলতো না এমনকি তিনি বুলিংয়ের শিকার হয়ে আসছিলেন। এক পর্যায়ে হল ছেড়ে অন্যত্র আরেক ছাত্রীর সঙ্গে থাকতে বাধ্য হন তিনি।

" align=


নাশিয়া জাহিন রোদেলা তার ফেসবুকে লিখেছেন, “আমার সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বলতো যে, ভার্সিটিতে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে। ওরই কিছু সহপাঠী পুরো ব্যাচকে ওর বিরুদ্ধে উস্কায়া দিসে। দিনের পর দিন পুরো ক্লাস এর মানুষ ওর সাথে বসতো না, কথা বলতো না। ওরা চাইছিলো অবন্তী যেন আর কন্টিনিউ করতে না পারে। এরপরেও মেয়েটা মনকে শক্ত করে ক্লাস এ যেতো। ওকে দেখলে লিটারেলি ওর সামনে বুলি করতো, হ্যারেস করতো। পুরোটা ক্লাস”।

তাসপিয়া ইসলাম নামে এক জবি শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, নারী নির্যাতন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সমানে সমানুপাতিক। গত ১৮ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্তার শিকার হয় নাই এমন একটা মেয়ে পাবেন না। যেই মেয়েগুলো পরিবার থেকে দূরে মেসে থাকে তাদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় একটা আজাব। এমন অসংখ্য নজিরবিহীন অত্যাচারের দুঃস্মৃতি জমে আছে পুরান ঢাকায়।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবন্তিকার বন্ধু ও সহপাঠীরা বলেছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমে তার সরব উপস্থিতি ছিল। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অবন্তিকা উপস্থাপনা করতেন হাসিমুখে।

জানা গেছে, শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকাকে তার বাবার কবরের পাশেই দাফন করা হয়েছে। শনিবার বিকাল ৩টায় কুমিল্লা সরকারি কলেজ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অবন্তিকার বিভাগের সহপাঠীরা ছাড়াও স্থানীয় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে ক্যাম্পাসে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন অবন্তিকার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা   ফাইরুজ অবন্তিকা  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close