ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোলায় ৫২ কিমি নদীতীর সংরক্ষণ ও ভাঙন রোধ
ইটভাটার মাটি কাটায় ভেস্তে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪, ১:৪৪ এএম  (ভিজিট : ৪৫৮)
ভোলার মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে পাড় সংরক্ষণ ও বাঁধ নির্মাণসহ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান। এর মধ্যেই পাড় এবং বন বিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরির মচ্ছব চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগ ‘দেখছি, ব্যবস্থা নেব আর চিঠি দিচ্ছি’ বলেই দায় সারছে। হুমকির মুখে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। তথ্য এবং ভিডিও সংগ্রহের জন্য প্রবেশ করলেই সাংবাদিকদের হুমকি দিচ্ছে অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ। 

দ্বীপজেলা ভোলা মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত। চার পাশটা নদীবেষ্টিত বলেই এখানে নদীভাঙন বেশি। জেলার সর্বত্র ভাঙন থাকলেও বর্তমানে জেলার তজুমদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশনে অনেকটা বেশি। বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে তজুমদ্দিন, লালমোহন এবং চরফ্যাশনের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন রোধের জন্য তীর সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও নদীভাঙন রোধের জন্য মির্জাকালু রেগুলেটর থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ চলমান। এর মধ্যে ৩৩ দশমিক ১১০ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং ১৮ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ। 

৫২ কিলোমিটার কাজের জন্য একনেকে পাস হয়েছে পৃথকভাবে এক হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প। সাতটি স্লুইসগেট রয়েছে এ প্রকল্পের আওতায়। চলমান কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীর পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাচরা ইউনিয়নের কাটাখালী স্লুইসগেট সংলগ্ন দক্ষিণ চাচরায় ৫০৫ নামের ইটভাটাটি। একেবারে নদীর পাড়ে অবস্থিত অবৈধ ওই ইটভাটার  লোকজন ভেকু দিয়ে ইট তৈরির জন্য নদীর পাড়ের মাটি কাটছে প্রকাশ্যেই। বাঁধ কেটে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এমনভাবে মাটি কাটছে তাতে সরকারের হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সব কাজ ভেস্তে যেতে বসেছে। নদীভাঙন রোধের জন্য নদীর পাশেই জিও ব্যাগ দেওয়া রয়েছে, অথচ সেখান থেকেই মাটি কাটছে। অবৈধ চিমনির ভাটায় ইট বানাচ্ছে এসব মাটি দিয়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ প্রশাসনের লোক আসে, পরিস্থিতি দেখে, আবার চলে যায়; কিন্তু কিছু বলে না। তাদের ম্যানেজ করেই করা হচ্ছ এসব কাজ। 

এদিকে ‘৫০৫’ নামের ইটভাটার মালিক চাচরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, হ্যাঁ মাটি কাটছি, না কাটলে মাটি পাব কোথায়। প্রয়োজন হলে নদী থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তুলে ভরাট করে দেব। 

একই অবস্থা লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ফাতেমাবাদ রওনক ইটভাটার। তারাও নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে। এরা কারো কথা শুনছে না। সবই ফ্রি স্টাইলে চলছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব হলেও হাজার কোটি টাকার কাজ যাদের মাধ্যমে হচ্ছে, তারা মূলত বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

ইটভাটার জন্য অবৈধভাবে মাটি কাটার কাজ সবচেয়ে বেশি চরফ্যাশন উপজেলায়। এখানে অনেকগুলো ইটভাটা রয়েছে, যারা নদীর পাড় কেটে ইট তৈরি করছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের বেতুয়া লঞ্চঘাটসংলগ্ন কাজী ইটভাটায়। এটি এখন ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে ভাঙন রোধের জন্য। অথচ ফ্রি স্টাইলে নদীর পাড় এবং বনের জমি কেটে ইট তৈরি করছে। বার বার বেতিয়ার লঞ্চঘাটটি ভেঙে গেলেও কারোরই টনক নড়ছে না। 

সরেজমিন গিয়ে এসব কর্মযজ্ঞ দেখা যায়। কাজী ইটভাটা দুটি। একটি ঝিগঝাগ, পাশেই অপরটি অবৈধ চিমনি দিয়ে চলছে। সেটিতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। চরফ্যাশনের যুবলীগ নেতা এবং পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মনির হোসেন এই কাজী ব্রিকসের মালিক। ওই ইটভাটায় গেলে তার ভাগ্নে মো. রাকিব লেবার নিয়ে তেড়ে আসেন। প্রবেশ করার কারণ জানতে চেয়ে প্রবেশ নিষেধ জানিয়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। বলেন, এখানে কারোরই প্রবেশের অধিকার নেই। এটা যুবলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিল মনির হোসেনের ইটভাটা।

অবৈধ ইটভাটায় অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে কেন? এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বলেন, চরফ্যাশনে ২৫টির বেশি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে যারা জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করছে। আর বহু আছে যারা চিমনি ব্যবহার করে। তারা পারলে আমরা কেন পারব না। এরপর ইটভাটার মালিক মনির হোসেনকে ফোন দিলে তিনি প্রাইভেটকার নিয়ে দ্রুত ইটভাটায় চলে আসেন। এ সময় তিনি ফোনে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বাবুলকে বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. তোতা মিয়া এসেছিলেন, তাকেসহ সবাইকে হোটেল মারুফে খাওয়ানো হয়েছে।

অবৈধ ইটভাটা এবং একই নামে দুটি ইটভাটা ও তার ভাগ্নের খারাপ আচরণসহ হুমকির বিষয়ে কাউন্সিলর মো. মনির হোসেন বলেন, কিছু মনে করবেন না, আসলে বয়স কম তো বুঝতে পারেনি। তবে আমরা ভালো নেই, কাঠ না পোড়ালে টিকতে পারছি না। সবাই কাঠ দিয়েই ইট পুড়ছে, কী করব বলেন। পাশেরটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে, তবে খরচ বেশি পড়ছে। নদী ও বনের মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে জায়গা থেকে মাটি কাটছি সেটা আমার নিজের।

এ ছাড়া তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে ঘোষেরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে বহু অবৈধ ইটভাটা রয়েছে, যারা নদীর পাড় কেটে ইট তৈরি করছে। এসব বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জানানো হয়, রওনক, কাজী ও ৫০৫ ইটভাটার মালিকদের পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হাসান মাহমুদ স্বাক্ষরিত নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিসে মাটি না কাটার জন্য বলা হয়েছে। যদি তারা না মানে তা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে নোটিসে।

এসব বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হাসান মাহমুদ বলেন, আমরা জানার পরেই তজুমদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার ৩টি ইটভাটার মালিককে নোটিস করা হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের সমস্যার কথা তুলে ধরে মাটি না কাটার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কথা না শুনলে আইনগত পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এসব বিষয়ে ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, ভোলা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, ভোলা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, আমি ভালোভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। পুরো বিষয়টি আমার জানা নেই। বনের ক্ষতি করে থাকলে বা কোনো অনিয়ম হলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close