ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সদ্য আবিষ্কৃত নোয়াখালীর কূপ থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে দৈনিক ১০ মি. ঘনফুটের বেশি
আশা জাগাচ্ছে নতুন গ্যাসকূপ
প্রকাশ: সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪, ৫:৫০ এএম আপডেট: ১১.০৩.২০২৪ ৬:০৪ এএম  (ভিজিট : ৫২৩)
ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকায় আনা শুরু হয়েছে গত ডিসেম্বর মাসে। একই মাসে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর অনুসন্ধান কূপ খনন করে তিনটি স্তরে নতুন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। প্রথম স্তরে পাওয়া গেছে জ্বালানি তেলের সন্ধানও। তিন মাস না যেতেই আবারও সুখবর নিয়ে এসেছে বাপেক্স।

সংস্থাটি বলছে, এবার নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়া ইউনিয়নে আরও একটি গ্যাসকূপের সন্ধান মিলেছে। এই গ্যাসকূপ উপজেলার শাহজাদপুর-সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রের ৩ নম্বর কূপ। এই কূপ থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর রোববার সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে। টেন্ডার পাওয়া কোম্পানিকে দিয়ে চলতি বছরের মধ্যে কূপ খননকাজ শুরু করাতে চায় জ্বালানি বিভাগ। চলমান গ্যাস সংকটের মধ্যেই একের পর এক গ্যাসকূপ আবিষ্কার ও সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান আশা জাগাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে। 

পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স বলছে, তারা কাজ করছেন বলেই একের পর এক কূপ আবিষ্কৃত হচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে, আরও বাড়বে। তবে গ্যাসের চাহিদা অনেক বেড়েছে, কূপ আবিষ্কৃত হলেও সেগুলো থেকে উৎপাদন শুরু করতে সময় লাগবে। রাতারাতি সম্ভব না। সাগরে গ্যাস কূপ আবিষ্কৃত হওয়ার পর তা থেকে সরবরাহ শুরু হলে সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় ৫ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে দেশে গ্যাসের যে সংকট তা গ্যাসের অভাবের কারণে নয়; বরং এর জন্য দায়ী দেশে মজুদ থাকা গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহারের ব্যর্থতা। আগেই বলা হয়েছে, বর্তমান গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কূপের সংখ্যা বাড়ালে এবং দেশে ৪৯টি উৎপাদনরত গ্যাসকূপে কারিগরি দুর্বলতা দূর করলেই গ্যাস উত্তোলনে মাত্রা বাড়বে। এখন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশে যে গ্যাস আছে, একের পর এক কূপ আবিষ্কারই তার প্রমাণ। এ ছাড়া দেরিতে হলেও সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কাজ শুরু হলে এর সুফল পাওয়া যাবে। এই কাজ আরও আগে শুরু করা দরকার ছিল, তা হলে এই সংকটে পড়তে হতো না।

গ্যাস প্রাপ্তির তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) প্রকল্প পরিচালক প্রিন্স মো. আল হেলাল বলেন, গত বছরের নভেম্বরে শুরু হওয়া কূপ খননের কাজ শেষ হয় গত শুক্রবার। প্রাথমিকভাবে কূপটির তিনটি জোনে গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এখন কূপটিতে চলছে ডিএসটি টেস্ট। এটি শেষ হলে জানা যাবে এখানে কী পরিমাণ গ্যাস মজুত আছে। কূপটির মোট ৩ হাজার ৩৮৫ মিটার গভীরে খনন করা হয়েছে। যার মধ্যে লোয়ার জোনের ৩০৪১ মিটার থেকে ৩ হাজার ৪৬ মিটার এবং ৩ হাজার ৫৭ মিটার থেকে ৩ হাজার ৬৪ মিটার পর্যন্ত টেস্ট কার্যক্রম চলছে। 

বাপেক্সের চরকাঁকড়া ৩ নম্বর কূপের ড্রিলিং ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এই কূপ থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে লোয়ার জোনে গ্যাসের চাপ দেখে মনে হচ্ছে, এই কূপ থেকে আরও বেশি পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে গ্যাসকূপ আবিষ্কারের খবরে উল্লাস প্রকাশ করে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস দেওয়ার আগে এলাকায় গ্যাসসংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আফসার বলেন, অতীতেও আমাদের এলাকায় গ্যাস পাওয়া গেছে। সে সময় আমাদের গ্যাস না দিয়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হয়েছে। আমাদের এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি হলো-এবার যেন কোম্পানীগঞ্জবাসী গ্যাসসংযোগ পায়। 

এ বিষয়ে স্থানীয় চরকাঁকড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ সবুজ বলেন, এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করার পাশাপাশি আমরা কোম্পানীগঞ্জবাসী যেন গ্যাস পাই-এটা এলাকাবাসীর জোর দাবি।

পেট্রোবাংলা বলছে, দেশে আগের চেয়ে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে। কাজ করা না হলে এই উৎপাদন বাড়ত না। এ ছাড়া দেশের স্থলভাগে গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৬টি কূপের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। গ্যাস সংকট কাটাতে বিশেষ আইনে ভোলায় গ্যাজপ্রমকে ৫টি কূপ, চীনের কোম্পানি সিনোপ্যাককে সিলেট গ্যাসফিল্ডের (এসজিএফএল) পাঁচটি কূপ এবং উজবেকিস্তানের কোম্পানি এরিয়েলকে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির (বিজিএফসিএল) ৭টি কূপ খননের কাজ দেওয়া হয়েছে। ১০ মার্চ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র উন্মুক্ত করা হবে। ২৬ থেকে ২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০টি কূপ খনন করার স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের মধ্যে সংস্থাটি তাদের নিজস্ব গ্যাসফিল্ডে মোট ১৯টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে অনুসন্ধানরত ৯টি এবং উন্নয়ন কূপ ১০টি। এর মাধ্যমে নতুন করে আরও ১৮ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট গ্যাস যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক বিইআরসি সদস্য (গ্যাস) মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, গ্যাসকূপ আবিষ্কার ও আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান ভালো খবর। আমাদের দেশে গ্যাস রয়েছে, আমরা গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে পারি, সেটা এতদিন করা হয়নি। নতুন আবিষ্কৃত নোয়াখালীর গ্যাসকূপ থেকে দৈনিক ২০ থেকে ২৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, সাগরে গ্যাসকূপ আবিষ্কার করতে যে খরচ হয়, মাটিতে গ্যাসকূপ আবিষ্কার করতে তার ৩ থেকে ৪ ভাগের ১ ভাগ খরচ হয়। সমুদ্রের গ্যাস আনতে ৩ থেকে ৮ বছর লাগে। স্থলের গ্যাস আনতে ১ বছর লাগে। তাই স্থলের গ্যাসকূপে জোর দেওয়া উচিত। গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে যে কূপগুলো চলমান আছে সেগুলোতে কার্যক্রম বাড়ানোর বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, গ্যাসকূপ আবিষ্কার হওয়া আমাদের জন্য সুসংবাদ। তবে কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এর বিকল্প নেই।

সময়ের আলো/আরএস/







https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close