ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

শিক্ষক সমিতির বাধায় কুবিতে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত
প্রকাশ: বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪, ৯:৪৩ পিএম  (ভিজিট : ৯৮৪)
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির বাধার মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার (৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নিয়োগ বোর্ডের দুই সদস্য না থাকা এবং প্রশ্নপত্র সিলগালা না করায় নিয়োগ পরীক্ষা অবৈধ দাবি করে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শিক্ষক নেতারা। 

নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা পরও পরীক্ষা শুরু করতে না পারায় এ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে প্রশ্নপত্র আগেই দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা।

জানা যায়, এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা  উপাচার্যের কার্যালয়ে যান এবং নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ, নিয়োগ নীতিমালা বহির্ভূত নিয়োগ বন্ধসহ বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন। কিন্তু পরীক্ষা সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলে নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা পর পরীক্ষা শুরু করতে গেলে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। 

তাদের অভিযোগ, উপাচার্যের কক্ষে শিক্ষক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উপাচার্য নিজে প্রশ্নপত্র টাইপিং করেন। পরবর্তীতে  প্রশ্নপত্র সিলগালা না করে কর্মচারীকে দিয়ে পরীক্ষার হলে প্রশ্ন প্রেরণ করে। এসময় কোন নিরাপত্তা ছাড়া প্রশ্নপত্র উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের হাতে দেখা যায়। তারা উভয় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য বলে দাবি করেন। তবে নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন সরকার না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষক নেতারা। এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু আগে থেকেই উপাচার্যের দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি প্রার্থী সাবেক শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এসময় শিক্ষকদের বাধার মুখে আরও প্রায় দেড় ঘণ্টা পর এ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী।
  
নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের সভাপতি ড. মখছেদুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও অনুষদের ডিন অধ্যাপক আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কয়জন অধ্যাপক ১ম ও ২য় গ্রেডে আবেদন করেছেন তাদের পদোন্নতি না দেওয়া এবং ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তার সমাধান না করে প্রফেসর নিয়োগের বোর্ড আয়োজন করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, একজন ডিন হিসেবে এসব আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি বোর্ডে যাইনি। এছাড়া আমি জানতে পেরেছি, কিছু অছাত্র বোর্ড শুরু হওয়ার আগে উপাচার্যের দপ্তরে অবস্থান নিয়েছে। যারা গত ১৯ তারিখ শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে। নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে আমি সেখানে যাইনি।

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড সকাল সাড়ে ১০টায় বসার কথা ছিল। যেখানে যাচাই বাছাই করে ৩৫ জন‌ পরীক্ষার্থীকে ডাকা হয়।

এসব বিষয়ে শিক্ষক নেতারা জানান, উপাচার্য নিজের এলাকার প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে আগে থেকেই প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। নতুন শিক্ষক নিয়োগের অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু ইউজিসির যে অভিন্ন নীতিমালা রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে স্বীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিয়োগের শর্ত শিথিল করা যাবে। কিন্তু বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে নিয়মকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের মত অবৈধ শর্ত দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আমাদের দাবি সকল অবৈধ পদোন্নতি ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা কোন নতুন নিয়োগ দিতে দিব না। এসময় শিক্ষক নেতারা উপাচার্যের বিভিন্ন ‘অনিয়ম’ তুলে ধরেন এবং নিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের সুরাহার দাবি জানান। 

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রসেসিং যেমন হওয়া উচিত তেমনটা হয়নি। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার প্রশ্নের সিকিউরিটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সিলগালা বিহীনভাবে বিভিন্ন কর্মচারীদের কাছে ১০ মিনিট প্রশ্ন ছিল। কাজেই এই নিয়োগ সার্কুলার অবৈধ এবং সার্কুলারে অসংগতি রয়েছে। আমি উপাচার্য মহোদয়কে অনুরোধ করেছি আপনি পরীক্ষা স্থগিত রাখেন। কিন্তু তিনি জোর করে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। যা কখনোই কাম্য নয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মঈন বলেন, বিভাগীয় প্রধান ও ডিনের অনুপস্থিতিতে পরীক্ষা চলতে পারে। ডিন ও চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি সবাই আমরা আছি। ডিন এবং চেয়ারম্যান দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন। কিন্তু ওনারা কেনো আসেন নাই আমাদের তা জানায় নাই। শিক্ষক সমিতি কতগুলো অন্যায্য দাবি নিয়ে আসছে সেটার সাথে এই পরীক্ষা এই নিয়োগের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। সুতরাং তাদের বাঁধার মুখে স্থগিত করা হয়েছে।

নির্দিষ্ট প্রার্থীকে (আব্দুর রাজ্জাক ও জান্নাতুন নেছা) নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের চিনিও না। যারা অভিযোগ করেছে সে অভিযোগের যদি কোনো প্রমাণ থাকে আমাকে দাও। আমি এই প্রার্থীর কাউকেই চিনি না।  

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ নিয়োগ নীতিমালা বহির্ভূত অবৈধ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিজ্ঞপ্তি বাতিল, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা এবং বর্তমান উপাচার্যের আমলে ইতিপূর্বে নিয়োগ, পদোন্নতি ও স্থায়ী করণে যত অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্য হয়েছে সেগুলোর নিষ্পত্তি করার পর নীতিমালা অনুসরণ করে পুনঃ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে যথাযথভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করার দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি।

সময়ের আলো/আরআই
 


আরও সংবাদ   বিষয়:  শিক্ষক সমিতির বাধা   নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত   কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)  




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close