ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সাদুল্লাপুরে ঘাঘটের ভাঙনে সর্বস্বান্ত মানুষ
প্রকাশ: সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪, ৫:২১ পিএম  (ভিজিট : ৯০৬)
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে গেছে ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঘাঘট নদী। আঁকাবাঁকা এ নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু নেই নদী শাসন ব্যবস্থা। ফলে তীরবর্তী মানুষেরা দিনদিন হারাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। আর ভাঙন আতঙ্কে অনেকের রাত কাটছে নির্ঘুমে। দীর্ঘ যুগে নদী শাসন ব্যবস্থা না থাকায় এমন ক্ষতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। 

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বনগ্রাম, জামালপুর, দামোদরপুর ও নলডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে,  নদী ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের মুখে শোনা গেল ভাঙন রোধের নানা দাবি-দাওয়ার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আঁকা বাঁকাভাবে বয়ে চলা ঘাঘট নদীটি বনগ্রামের টুনিরচর থেকে শুরু হয়ে নলডাঙ্গার শ্রীরামপুর গিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সীমানায় ঠেকেছে। এখানে একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি অবাধে বালু উত্তোলন বাণিজ্য করায় নদী ভাঙন আরও বেশি আকার ধারণ করছে। অথচ ভাঙন রোধে সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছে না পদক্ষেপ। কোন কোন স্থানে জিও ব্যাগ, ব্লক স্থাপন করা হলেও তা টিকসই হচ্ছে না। যার কারণে গত একযুগে সাদুল্লাপুরের ঘাঘট নদীর ভাঙনে সহস্রাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। এই নদীর অংশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেই আশ্রয় হয়েছে বাস্তুহারা কিছু সংখ্যাক পরিবারের। একই সঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চলে গেছে নদীগর্ভে। বর্তমানে শত শত পরিবার নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি কয়েক যুগেও ঘাঘট নদী শাসন না করায় সিট জামুডাঙ্গা (মুন্সিপাড়া), উত্তর ভাঙ্গামোড় (কুটিপাড়া), জামুডাঙ্গা, টুনিরচরসহ আরও একাধিক স্থানে ভাঙন অব্যাহত। এছাড়া চাঁন্দেরবাজার, মহিষবান্দি, ছোট দাউদপুর, হামিন্দপুর ও শ্রীরামপুর গ্রামের নদীতীর পরিবারদের দিন কাটছে আতঙ্কে। প্রতি বছরের বন্যা আর নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অনেকে। কেউ কেউ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পথে বসেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।  

উত্তর ভাঙ্গামোড় (কুটিপাড়া) নামক স্থানের বাসিন্দা ফুল মিয়া, ও বাকী মিয়াসহ আরও অনেকে বলেন, এই মৌজাস্থ ঘাঘটে বাঁক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ স্থানে লুপ কাটিংয়ে গতিপথ সোজা করা হলে নদী ভাঙন থেকে রক্ষাসহ চাষযোগ্য হবে জমি। এ নিয়ে ইউএনও বরাবর আবেদন করেছেন বলেও জানান তারা। 

পাতিল্যাকুড়া-চকদাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা খরিপ উদ্দিন জানান, কয়েক বছর আগে ভাঙনে বিলীন হয়েছে তার ঘরবাড়ি। একমাত্র বসতভিটা হারিয়ে তিনি এখন ঠাঁই নিয়েছেন ভাইয়ের বাড়িতে। 

ইতোমধ্যে নদীতে চলে গেছে আবাদি জমি। এখন হুমকির মুখে রয়েছে বসতভিটে। যেকোনো মুহূর্তে ভাঙনে বিলীন হতে পারে ঘরবাড়ি। এমন চিন্তায় ঘুম আসে না বলে জানালেন সিট জামুডাঙ্গা (মুন্সিপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া, আজিজার ও নীল মিয়া। এছাড়া প্রফুল্য চন্দ্র নামের এক বাসিন্দা বলেন, পূর্বে নদীটি সোজা ছিল কিন্তু ইদানিং নদী ঘন ঘন বাঁক নিয়েছে। আর মেশিন বসিয়ে আলু উত্তোলন করা ভাঙন আরও বেড়েছে। প্রতি বছরেই নদী ভেঙে ভেঙে আঁকাবাঁকা হয়ে বয়ে যাচ্ছে। আর নদীর পেটে বেশি পরিমাণ পলি ধারণ করেছে। তাই নদীটি শাসন করা জরুরি। 

এদিকে, বেশি বেশি বাঁক নিলে এবং পলি ধারণ করার কারণে নদীর পার ভাঙে। তাই নদীর গতিপথ সোজা করে পানিপ্রবাহ সচল করতে নদী শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ঘাঘট নদী ভাঙন রোধে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সভায় আলোচনা করেছেন বলে জানালেন দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। ইতোমধ্যে ওই নদীর একাধিক পয়েন্টে ভাঙন রোধে কাজ করা হয়েছে। আবারও ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হবে জানিয়েছেন গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক।

সময়ের আলো/আরআই
 


আরও সংবাদ   বিষয়:  ঘাঘট নদী ভাঙন   সর্বস্বান্ত মানুষ   সাদুল্লাপুর   গাইবান্ধা  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close