ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বইমেলার মাসে বিশ্বসাহিত্যে যা ঘটেছে
প্রকাশ: সোমবার, ৪ মার্চ, ২০২৪, ১:১৭ এএম  (ভিজিট : ৪৭৮)
বর্ধিত দুই দিন পেরিয়ে অবশেষে এবারের অমর একুশে বইমেলা শেষ হলো। শনিবার মেলার অন্যবারের শেষ দিনের তুলনায় ভিড় এবং বই বিক্রি দুটোই কম ছিল। তবে যারাই এসেছেন তারা কম-বেশি বই কিনেছেন। এ বছর মেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। 

এবার মেলা শুরু থেকেই খুব ভালো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে আগামী বছর মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে না। তবে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহিদ মিনারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে মেলা জড়িত। অনেকেই মনে করছেন, মেলা এখানে থাকা উচিত। 

এবার মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানেও আলোচিত হয়েছে আগামী বছর বইমেলা স্থানান্তরের বিষয়টি। এ বিষয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা এখন ঐতিহ্য হয়ে গেছে। এই বইমেলা প্রস্থানের বিষয়ে কথা উঠেছে। আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে বইমেলা এখানে রাখার ব্যবস্থা করব।অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস প্রায় চলে গেছে। প্রতি সপ্তাহে শিশুদের একটি ছোট বই হলেও কিনে দিন। 

সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ বলেন, বইমেলার স্থায়ী কাঠামো নির্মাণের জন্য চেষ্টা চলছে। কোনো একটি স্থায়ী জায়গায় বইমেলা করার কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন। কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সারা পৃথিবী ঘুরে এসেও এমন একটি বইমেলা খুঁজে পাবেন না। এ বইমেলা আমাদের আবেগের মেলা, জাতিসত্তার মেলা। এই বইমেলা জাতি হয়ে ওঠার বইমেলা, আমাদের মাটি ও মানুষকে ভালোবাসার বইমেলা।

সার্বিক দিক বিবেচনা করলে এবারের মেলা খুব ভালো হয়েছে। এর পরিবেশ আর নান্দনিক আয়োজন মুগ্ধ করেছে সবাইকে। মেলার কেনাবেচাও ছিল বেশ ভালো। সারা মাস বইমেলাকে কেন্দ্র করে বুঁদ হয়েছিলেন পাঠক ও ক্রেতারা। এ সময়ের মধ্যে বিশ্বসাহিত্যেও এসেছে নতুন কিছু খবর, নতুন কিছু সাহিত্য। 

ভারতের ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৭ সালে রোম্যাঁ রোলাঁ বুক প্রাইজ দেওয়া হয়। ফরাসি ভাষায় লেখা উপন্যাসের ইংরেজিসহ যেকোনো ভারতীয় ভাষায় করা সেরা অনুবাদকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। মূলত ভারতে সমসাময়িক ফরাসি সাহিত্যকে সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে পুরস্কারটি চালু করা হয়েছে। 

চলতি বছর রোম্যাঁ রোলাঁ বুক প্রাইজ পেলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখক পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি। ফরাসি উপন্যাসিক জাঁ দানিয়েল বালতাসার লেখা উপন্যাস ‘ল্য দিভঁ দ্য স্তালিন’-এর বাংলা অনুবাদ ‘স্তালিনের ডিভান’ বইটির জন্য তিনি এই পুরস্কার জিতেছেন। স্তালিনের ডিভান বইটি কলকাতার নিউ ভারত সাহিত্য কুটির প্রকাশ করেছে। এর আগে আলজেরিয়ান লেখক কামেল দাউদের ‘মেরসল্ট, কন্ত্রে এনকুয়েতে’ উপনাসের বাংলা অনুবাদ ‘ম্যরসো বিরুদ্ধ-সাক্ষ্য’ এর জন্য তৃণাঞ্জন চক্রবর্তী প্রথম বাঙালি লেখক-অনুবাদক হিসেবে এই পুরস্কার পান। 

স্তালিনের ডিভান উপন্যাসটি সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিনের জীবনের শেষ তিন বছরের ঘটনাকে নিয়ে লেখা হয়েছে। সে সময় স্তালিন তার জন্মভূমি জর্জিয়ায় একটি বনের মাঝখানে একটি ক্ষয়িষ্ণু প্রাসাদে বেশ কিছু দিন কাটাতে আসেন। তার সেই দিনগুলোর কাহিনি এই 
উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে। বিজয়ী অনুবাদক পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জিকে চলতি বছরের এপ্রিলে প্যারিস বইমেলায় আমন্ত্রণ জানানো হবে।

এর মধ্যেই ২০২৪ সালের ওয়াল্টার স্কট প্রাইজের দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের জন্য ব্রিটিশ এই সাহিত্য পুরস্কারটি দেওয়া হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ওয়াল্টার স্কট প্রাইজের দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়। চলতি বছর ১২টি ঐতিহাসিক উপন্যাস এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। 

ঐতিহাসিক কথাসাহিত্যের জনক হিসেবে বিবেচিত স্কটিশ লেখক ওয়াল্টার স্কটের নামে এই পুরস্কারটি ২০১০ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ‘দ্য লং সং’ উপন্যাসের জন্য আন্দ্রেয়া লেভি এবং ‘উলফ হল’, ‘দ্য মিরর অ্যান্ড দ্য লাইট’ উপন্যাসের জন্য হিলারি ম্যান্টেল মর্যাদাবান এই পুরস্কার জিতেছেন। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী লেখক ২৫ হাজার পাউন্ড পান। ওয়াল্টার স্কট প্রাইজ ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় সাহিত্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে একটি। এই দীর্ঘ তালিকা থেকে মে মাসে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর জুনে বিজয়ী লেখকের নাম ঘোষণা করা হবে।

চলতি বছর ওয়াল্টার স্কট প্রাইজের দীর্ঘ তালিকায় স্থান পাওয়া ঐতিহাসিক উপন্যাসগুলোর মধ্যে-অ্যালান স্পেন্সের মিস্টার টাইমলেস ব্লিথ, স্টিফেন ডেইসলির অ্যা বেটার প্লেস
ও কেভিন জ্যারেড হোসেইনের হাংরি ঘোস্ট উল্লেখযোগ্য। 

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন উপন্যাসিক সাবা তাহিরের ৫২৮ পৃষ্ঠার নতুন উপন্যাস ‘এয়ার’ অক্টোবরে প্রকাশিত হবে। নিউইয়র্কভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা পুটনাম বুকস সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইয়াং অ্যাডাল্ট (ওয়াইএ) জনরার এই উপন্যাসটি প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে। 

পুটনাম বুকস এটিকে উত্তেজনায় ভরপুর একটি নির্মম, রোমান্টিক ফ্যান্টাসি উপন্যাস হিসেবে বর্ণনা করেছে। এই উপন্যাসে ক্ষমতার ভার, প্রেমে বিশ্বাসঘাতকতা এবং অনিয়ন্ত্রিত লোভের ধ্বংসাত্মক পরিণতির সঙ্গে লড়াই করা তিন যুবকের জীবনকাহিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন লেখক। সাবা তাহির তার ইনস্টাগ্রামে নতুন উপন্যাসের খবর ঘোষণা করে লিখেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত এই বছরের ১ অক্টোবর আমার নতুন উপন্যাস বের হচ্ছে। বইটির নাম ‘‘এয়ার’’। ২০২০ সাল থেকে এই উপন্যাসটি লেখা শুরু করেছি। এই বইয়ের নতুন নতুন চরিত্রের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত।’ 

৪০ বছর বয়সি এই মার্কিন লেখক ২০১৫ সালে ‘অ্যান এম্বার ইন দ্য অ্যাশেজ’ উপন্যাস দিয়ে সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ফ্যান্টাসি এই উপন্যাসে লায়া নামে পণ্ডিত এক ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যিনি তার অপহৃত ভাইকে উদ্ধার করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন। 
২০২২ সালে সাবার লেখা ‘অল মাই রেজ’ উপন্যাসটি ওয়াইএ ক্যাটাগরিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড জয় করে। এই বইতে ক্যালিফোর্নিয়ার দুই কিশোর-কিশোরীর বর্ণবাদ এবং পারিবারিক সমস্যা মোকাবিলা করার কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। 

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ফিরে এসেছে। গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশে^র অগণিত মানুষ সংহতি প্রকাশ করেছে। ইউক্রেন-রাশিয়াযুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী যে প্রভাব পড়েছে, এই যুদ্ধের প্রভাব তার চেয়ে অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই যুদ্ধ একটি বৈশ্বিক সংকট হয়ে উঠেছে, যা নিয়ে চিন্তিত লেখকরাও।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় গুরুতর আহত শিশুদের জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে নিজেদের স্বাক্ষরিত বই দান করেছেন সালমান রুশদি, স্যালি রুনি, এলিফ শাফাকের মতো বিখ্যাত লেখকরা। এজন্য ‘বুকস ফর গাজা’ নামে একটি ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে। এই ক্যাম্পেইনের আওতায় বিশ্বজুড়ে লেখকরা নিজেদের স্বাক্ষর করা বই দান করেছেন। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই ক্যাম্পেইনটি চালু করেছেন লেখক সোনিয়া ফালেইরো, ফাতিমা ভুট্টো এবং লিটারারি এজেন্ট জুলিয়া চার্চিল। এই ক্যাম্পেইন থেকে সংগৃহীত অর্থ গাসান আবু সিত্তাহ চিলড্রেনস ফান্ডে দেওয়া হবে। এই অর্থ দিয়ে ইসরায়েলি হামলায় গুরুতরভাবে আহত শিশুদের গাজা উপত্যকা থেকে লেবাননে নিয়ে অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। প্রতিটি শিশুর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে যেন তারা যথাসম্ভব স্বাভাবিকভাবে তাদের জীবন পুনরায় শুরু করতে পারে।

এদিকে ফাতিমা ভুট্টো এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্বের কোথাও অন্যায় হলে সে বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকা লেখকদের কর্তব্য। গাজায় যা হচ্ছে তার ভয়াবহতা আমাদের সবার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। তবে আমি আশাবাদী যে আমরা গাজার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য এই শক্তিশালী উপায়ে একত্রিত হতে পারছি। 

বুকস ফর গাজা ক্যাম্পেইনে স্যালি রুনি, নাওমি ক্লেইন, পল হার্ডিং, সালমান রুশদি, জো স্যাকো, আলি স্মিথ, মাইকেল রোজেন এবং ম্যাক্স পোর্টারের মতো লেখকরা তাদের স্বাক্ষরিত বই দান করেছেন। এই বইগুলো বিক্রি করে এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় ৮৫ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে।


সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close