ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দুশ্চিন্তায় আলুচাষী ও হিমাগার মালিকরা
নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ করে চলছে সেতু নির্মাণ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ২:২১ এএম  (ভিজিট : ৩৩৬)
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রজতরেখা নদীতে লোহার খুঁটি দিয়ে আটকিয়ে সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। এতে ওই নদীতে গত ১৫ দিন ধরে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে নৌপথ ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। নদীপথ ব্যবহার করে হিমাগারে আলু রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলা সদর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার শত শত কৃষক। একই সঙ্গে হিমাগারের মালিকরাও পড়েছেন বিপাকে। কেননা নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় ওই নদী হয়ে চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। সেতুটির অবস্থান সদর উপজেলার চরকেওয়ার ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের সংযোগস্থল চরডুমুরিয়া এলাকায়।

মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চরডুমুরিয়া বাজার সংলগ্ন রজতরেখা নদীতে ১০৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ মিটার প্রস্থের এ সেতুটির নির্মাণ শুরু হয়। চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেতুটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে সাগর বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চরডুমুরিয়া বাজার সংলগ্ন বেইলি সেতুর পাশেই দুই লেনবিশিষ্ট নতুন কংক্রিটের সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণাধীন সেতুর দুই পিলারের মধ্যখানে শত শত লোহার খুঁটি বসানো হয়েছে। এতে করে এ নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সময় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সেতুটি সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে নৌপথটি সদর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কৃষক, ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বেশি গুরুত্ব রাখে। এ নৌপথ ব্যবহার করে সদর উপজেলার চরকেওয়ার, মোল্লাকান্দি, আধারা, শিলই ইউনিয়ন এবং টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়, যশলং, কামারখাড়া ইউনিয়নসহ শরিয়তপুর জেলার চরাঞ্চলে উৎপাদিত হাজারো টন আলুসহ শাক-সবজি পরিবহন করে হিমাগার, স্থানীয় বাজার, ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আনা-নেওয়া করা হয়। গত বছর সেতুটি নির্মাণ করতে গিয়ে নদীর দুপাশে অন্তত ৫০ ফুট করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। তখনই নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। নদীর যতটুকু অংশ বাকি ছিল সেটাও এবার বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে।

এদিকে, সদর উপজেলার মুক্তারপুর ও টঙ্গীবাড়ী এলাকায় অধিকাংশ হিমাগারের অবস্থান হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা আলু সংরক্ষণ করতেও এ নদী পথটি ব্যবহার করে থাকেন। নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ করে সেতুর নির্মাণকাজ করায় কৃষকরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

নূরানী কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার বেলাল হোসেন বলেন, আগামী মাসের প্রথম থেকে আলু উত্তোলন শুরু হবে। এ চরাঞ্চলে একটাই ফসল উৎপাদন হয় সেটা আলু। আলু উত্তোলনের পরে সংরক্ষণ করার পরে তারা সারা বছর বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। এসব আলু সংরক্ষণ করার জন্য চরাঞ্চলের হাজার হাজার টন আলু এ নদীপথে যাতায়াত করে। কিন্তু এবার কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। সেতু নির্মাণের কারণে নদীপথটি বন্ধ রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইড ব্যবস্থাপক মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সেতুর মধ্যভাগে ৫টি গার্ডার বসানো হবে। নিয়মিত কাজ করলেও কাজ শেষ করতে অন্তত চার মাসের মতো সময় লাগবে। 

এদিকে ১৫-২০ দিন পরেই নদীর দুই তীরের আলু উত্তোলন শুরু হবে। স্থানীয় কৃষক মো. রিপন হাওলাদার বলেন, এ নদীটি ব্যবহার করে অল্প সময় ও কম খরচে সারা বছর উৎপাদিত শাক-সবজি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় আনা-নেওয়া করি। আলু রোপণ ও উত্তোলন মৌসুমে এ কাজ আরও বহুগুণ বেশি। কিছুদিন পরে নতুন আলু উঠতে শুরু হবে। নৌযান চলাচল করতে না পারলে জমির আলু জমিতে নষ্ট হবে। হিমাগারে নিতে বিকল্প পথ ব্যবহার করা হলে ২০ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা, দুই ঘণ্টার রাস্তা ৮-১০ ঘণ্টা লাগবে। তাই দ্রুত নৌপথ খুলে দেওয়ার দাবি কৃষকদের। কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, কিছু দিনের জন্য হলেও সেতুর লোহার রড খুলে দেওয়া হোক। তাহলে আমরা আলু নিয়ে হিমাগারে রাখতে পারব। জেলা আলুচাষী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাজী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের পরে নৌপথ বন্ধ করুক। এখন আটকালে আলুচাষী-কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগারের মালিকদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডার্সের কাছ থেকে সাব-ঠিকাদারির দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন আমিনুল ইসলাম। নৌপথ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের অনুমতি নিয়ে নদীতে খুঁটি দিয়ে আটকিয়ে কাজ করছেন তারা। গার্ডারের কাজ করতে হলে খুঁটি বসিয়েই করতে হবে।

মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুস হোসেন সাকিব বলেন, নদীতে খুঁটি বসিয়ে কাজের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার অনুমতি নেওয়া হয়েছে। খুঁটি না বসালে গার্ডারের কাজ করা যাবে না। খুঁটি অপসারণের বিষয়ে আমাদের জানানো হয়েছে। এ মুহূর্তে খুঁটি সরানোও যাবে না। নৌপথ ব্যবহারকারীদের সাময়িক কিছু ভোগান্তি হবে। কাজ শেষ হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

সময়ের আলো/ আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close