বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে ৩৪ জন কূটনীতিককে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল পরিদর্শনে নিয়ে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মঙ্গলবার সকালে টানেল পরিদর্শনের পর বিদেশি অতিথিদের ট্রেনে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘অ্যাম্বাসেডর আউটরিচ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় কূটনীতিকদের জন্য এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কূটনীতিকদের মধ্যে ২৪টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মিশন প্রধান রয়েছেন।
এর আগে সকালে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।
বিমানবন্দর থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল পরিদর্শন করেন তারা। দুপুরে ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়ার মুহূর্তে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
হাছান মাহমুদ বলেছেন, কূটনীতিকরা বাংলাদেশকে জানার মাধ্যমে তারা তাদের দেশকে বার্তা পৌঁছে দেবে। বাঙালি জাতির সামর্থ্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে তাতে আমাদের দেশকে তারা ভালোভাবে জানতে পারছে। এ পরিদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের এ খবরগুলো তারা বিশ^ময় ছড়িয়ে দেবে। বিদেশি কূটনীতিকরা যাতে দেশ ও দেশের অগ্রগতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারেন সে জন্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আউটরিচ প্রোগ্রাম করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যেন আমাদের দেশকে জানে, দেশে যে বিরাট উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ হচ্ছে সেগুলো যেন তারা স্বচক্ষে দেখে, সেই কারণেই তাদের চট্টগ্রামে আনা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনযোগে তারা কক্সবাজার যাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাম্বাসেডরস আউটরিচ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে এ সফরের আয়োজন এবং এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উদ্যোগ। তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ট্রেন লাইন হয়েছিল ১৯৩০ সালে। কিন্তু তার অনেক আগেই চট্টগ্রাম থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ট্রেন লাইনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। অর্থাৎ ১৯০০ সালের পরপরই সেটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু দেশ বিভাগ হলো, দেশ বিভাগের পর বাংলাদেশ হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু তিনিও বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। কারণ তাঁকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় হত্যা করা হয়েছিল। বরং তিনি বিধ্বস্ত যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরিভাবে পুনর্গঠন করার আগেই তাঁকে হত্যা করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ জনপদের মানুষ যে স্বপ্ন ১২৫ বছর আগে দেখেছিল, সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এটি একটি অসাধারণ কাজ। তাই আজ আমরা কূটনীতিকদের চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে করে কক্সবাজার নিয়ে যাচ্ছি।
নিজেও চট্টগ্রাম থেকে এই প্রথম ট্রেনে কক্সবাজার যাচ্ছেন উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, কূটনীতিকদের আনার মূল উদ্দেশ্য তারা যেন বাংলাদেশকে জানে এবং চেনে, আমাদের দেশে যে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, এ সমুদ্রসৈকতের খবরটা যেন তাদের মাধ্যমে বিশ^ময় ছড়িয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও উন্নয়ন সম্পর্কে তারা যেন ভালো করে জানতে পারে, সে জন্যই তাদের আমরা নিয়ে এসেছি।
বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে কোনো কথাবার্তা হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা তো সবসময়ই হয় এবং তারা অনেকেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছে। এবারও যদি তারা সুযোগ পায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাবে।
বিদেশে প্রতিনিধিদের এ পরিদর্শনের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে কি না সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, অবশ্যই তারা বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে জানতে পারবে, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার সফরে এসেছে তারা। আজ চট্টগ্রামে কয়েক ঘণ্টা কাটাল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম টানেল তারা দেখল। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার কোথাও নদীর তলদেশ দিয়ে রোড টানেল নেই। সেটি তারা দেখল, এপার থেকে ওপারে গিয়ে আবার ফিরে এলো। এই যে অসাধারণ উন্নয়ন, যেগুলো আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে মানুষ কল্পনাও করেনি, সেগুলো আজকে বাস্তব। সেই বাস্তবতা আজ কূটনীতিকরা নিজের চোখে দেখেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ডেনমার্ক, কসোভো, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ভ্যাটিকান, ভুটান, স্পেন, আর্জেন্টিনা, লিবিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মিসর, ফ্রান্স এবং এফএও, আইইউটি, একেডিএন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ২৪ জন মিশন প্রধানসহ ৩৪ জন কূটনীতিক সদস্য এ আউটরিচ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
সময়ের আলো/আরএস/