ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মাত্র ২ চিকিৎসকে চলছে নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
প্রকাশ: শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৮:৪৬ পিএম আপডেট: ২৪.০২.২০২৪ ৯:২৩ পিএম  (ভিজিট : ৭০২)
নাটোর রাজনৈতিক ও ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জেলা সদরের সঙ্গে সংসদীয় আসন হলেও আলাদা নলডাঙ্গা উপজেলা। আয়তন প্রায় ১৭৪.৩৯ বর্গ কিলোমিটার। স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১৩ সালের ৭ জুলাই এক প্রজ্ঞাপন মূলে ‘‘নলডাঙ্গা’’ উপজেলা গঠিত হয়। যেখানে ১টি পৌরসভা ৫টি ইউনিয়ন, ৯৯টি গ্রামের প্রায় ২ লক্ষ মানুষের বসবাস।

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামোসহ হাসপাতাল সম্পন্ন করা হলেও তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ চালু হয়নি। সব রকমের সেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া লক্ষে ২০২১ সালে ২৭ জুলাই স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল (এমপি) হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন।  

বহির্বিভাগে মাত্র দুই জন চিকিৎসক নিয়মিত এই উপজেলার আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই হাসপাতালটিতে ২৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। এর মধ্যে কনসালট্যান্ট, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু, কার্ডিওলজি, এনেসথেসিওলজি, চক্ষু ও চর্মরোগসহ ১০ জন বিশেষজ্ঞের পদ রয়েছে।

এছাড়া ১৭ জন মেডিক্যাল অফিসার, ৩১ জন নার্স, টেকনোলজিস্টসহ ৭৩ জন তৃতীয় শ্রেণি এবং ২৮ জন চতুর্থ শ্রেণির পদ সেখানে সৃষ্টি করা হয়েছে। চালুর তিন বছর পরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মন্ত্রণালয় থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ফলে এই উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ নিরাপদ ডেলিভারি, সিজার, অপারেশনসহ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাধ্য হয়ে আশপাশে গড়ে ওঠা ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন অনেকে। যে পরীক্ষা বা চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, সেটাও করিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমন অভিযোগও রোগীরা করছেন।

এদিকে জনবল না থাকায় হাসপাতাল ভবনে রোগী নয়, সাপের অভয়া শ্রমে পরিণত হয়েছে। এই চিত্র দেখে বোঝা যায়, মফস্বলে চিকিৎসাসেবার করুণ চিত্র। এ কারণে সাধারণ চিকিৎসার জন্য জেলা-উপজেলার মানুষ ঢাকায় ভিড় করছেন। যে চিকিৎসা উপজেলায় করা সম্ভব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাই অন্যতম কারণ। তারা ঢাকার বাইরে থেকে জনবল নিয়োগসহ বিভিন্ন প্রস্তাব আসলেও গুরুত্ব দেন না। এমন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, প্রতি ফাইলের সঙ্গে উৎকোচের প্যাকেট না দিলে ফাইল নড়ে না। অথচ এই কাজটি দ্রুত করলে ঐ এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হতো না। নলডাঙ্গা উপজেলার মতো সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবার করুণ অবস্থা বিরাজ করছে।

চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালটি ৩ বছর আগে হয়েছে কিন্তু এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। এখানে শুধু সামান্য ওষুধ দেয়া হয়। হাসপাতালটি চালু হলে আমাদের নাটোর-রাজশাহী যাওয়া লাগে না।

নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসার জানান, জনবল না থাকায় হাসপাতালটির দুই চিকিৎসক দিয়ে কষ্টে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এই দুই চিকিৎসক পালাক্রমে জেলা সদর হাসপাতাল থেকে এসে উক্ত হাসপাতালে বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বাস্তবায়নকারী নাটোর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী শামীম আক্তার জানান, তিন একর জমির উপরে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচতলা বিশিষ্ট ফাউন্ডেশনের উপরে চারতলার হাসপাতাল ভবন ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বাসভবন, চারতলার আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দের বাসভবন, মেডিকেল অফিসারবৃন্দ ও স্টাফ নার্সের বাসভবন, মেডিকেল অফিসার ও স্টাফ নার্সের ডরমিটরি, গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়ার্টার, অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক কাজসহ একটি সাব-ষ্টেশন, আসবাবপত্র সরবরাহ এবং ভূমি উন্নয়নসহ সীমানা প্রাচীর।

নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কার্যক্রম চালু না থাকায় হাসপাতালটি এখন ধুলো আর সাপের অভয়া শ্রমে পরিণত হয়েছে। জনবল নিয়োগসহ পুরোপুরি স্বাস্থ্যসেবা চালুর নিবেদন নিয়ে তিনি নিজেও নাটোর জেলা প্রশাসক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন। তবে ফল আসেনি। হাসপাতালটির কার্যক্রম চালুর জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

নাটোর সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ভবন অবকাঠামো নির্মাণ হলেও নলডাঙ্গা উপজেলায় ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হিসেবে জনবলের অনুমোদন এখনো পায়নি। ফলে পুরোপুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বহির্বিভাগে মাত্র দুই জন চিকিৎসক নিয়মিত এই উপজেলার আগত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। জনবল নিয়োগসহ হাসপাতালটি চালু করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি আসার পূর্বে এবং পরেও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে জনবল পদায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এটি পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স   জনবল সংকট  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close