ঝিনাইদহের ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের দুটি লিফট ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। লিফট দুটি বন্ধ থাকায় ৮ তলা ভবন হাসপাতালটিতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, আইসিইউ ইউনিটের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় লিফট দুটি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা দ্রুত এই দুর্ভোগ দূর করতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে ভোগান্তির কথা স্বীকার করেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ভোগ হলেও কিছু করার নেই।
জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যার ৮ তলা হাসপাতালটি ২০২১ সালে নির্মাণ করা হয়। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী সেবা নিতে আসেন। আর হাসপাতলে ভর্তি থাকে অন্তত ৩০০-এর রোগী। রোগী ও স্বজনদের চিকিৎসা সেবা নিতে দিনে বেশ কবার ৮ তলা ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে ওঠানামা করতে হয়। বর্তমানে ৯ তলায় আইসিইউ ইউনিট নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় বন্ধ রয়েছে লিফট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রসূতি নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী রোগীদের। লিফট বন্ধ থাকায় অসুস্থ রোগীরা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গিয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করেই লিফট বন্ধ করে চলছে নির্মাণকাজ।
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগর বাথান গ্রামের হাকিম মিয়া জানান, শ্বাসকষ্ট নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে হাসপাতালের ৬ তলায় এসেছেন তিনি ডাক্তার দেখাতে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে তার হার্ট বিট অনেক বেড়ে গেছে। হাসপাতালের বন্ধ লিফট দ্রুত চালুর দাবি জানান তিনি।
শহরের হামদহ এলাকার বিপ্লব বলেন, লিফট বন্ধ থাকায় কয়েক দিন আগে সিঁড়ির মধ্যেই দুই গর্ভবতী নারী সন্তান প্রসব করেছেন। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুত লিফট দুটি চালু করা না হলে এমন ঘটনা আরও ঘটবে।
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়ীয়া গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, গায়ে, হাতে, মাজায় ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। এসে দেখি লিফট বন্ধ। ফলে হেঁটে ৫ তলায় উঠেছি ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে আমরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। লিফট চালু থাকলে এই দুর্ভোগ হতো না।
কলাবাগান এলাকার মানোয়ার হোসেন বলেন, আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এই হাসপাতালে এসেছি। এসে দেখি লিফট বন্ধ। এই রোগী নিয়ে কীভাবে ওপরে উঠব, কীভাবে ডাক্তার দেখাব বুঝতে পারছি না। জরুরিভাবে লিফট দুটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ রেজাউল ইসলাম রোগীর ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালের লিফটের বিপরীতে সিঁড়ির বিকল্প কিছু নেই। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। ৮ তলা ভবনের ওপরে ৯ তলার কাজ চলমান রয়েছে। এতে গত ১৫ দিন ধরে লিফট বন্ধ রয়েছে। আরও ১ মাস বন্ধ থাকবে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের ৯ তলা ভবনের কাজ চলমান। দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা সাময়িকভাবে লিফট বন্ধ রেখেছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
সময়ের আলো/আরএস/