ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:৪১ এএম  (ভিজিট : ৪৫৮)
ধারণাকে সত্যি প্রমাণ করে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে ওই খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। ওয়াশিংটন দাবি করছে, আলজেরিয়া প্রস্তাবিত রেজ্যুলেশন যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাকে ঝুঁকিতে ফেলবে। তবে মার্কিন মিত্ররা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হোয়াইট হাউসের ভেটো দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। আর বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভেটো দিয়ে গাজায় ইসরাইলের ‘হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার’ সবুজ সংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুদ্ধবিরতির পক্ষে আলজেরিয়ার আনা প্রস্তাবে যে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় আগেই। সেই ধারণা মঙ্গলবার সত্যি হয়। পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে ১৩টিই আলজেরিয়ার প্রস্তাবিত এই খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল আরেক স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য।

নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য পাঁচটি। এর মধ্যে রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। স্থায়ী সদস্য দেশগুলোর এককভাবে কোনো প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করে তা বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে। যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে নতুন খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর অর্থ হলো প্রস্তাবটি গৃহীত হবে না।

আলজেরিয়ার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ার পর জাতিসংঘে উত্তর আফ্রিকা দেশগুলোর প্রতিনিধি বলেছিলেন, ‘এটি ফিলিস্তিনিদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে’ এবং এই সাক্ষ্য দেবে, ‘দুর্ভাগ্যবশত নিরাপত্তা পরিষদ আবারও ব্যর্থ হয়েছে’। ‘নিজের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, ইতিহাস আপনাকে কীভাবে বিচার করবে’, বলেন অমর বেন্দজামা। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর বলেছেন, ‘মার্কিন ভেটো ছিল একদম বেপরোয়া ও বিপজ্জনক’।

ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাও এর সমালোচনা করেছেন। ফ্রান্সের প্রতিনিধি নিকোলাস ডি. রিভেরি গাজার এমন দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে প্রস্তাবটি পাস না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমরা লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের ওপর এমন কোনো চাপ নেই যা আমাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে পারবে।’

ইসরাইল নিরাপত্তা পরিষদের যেকোনো রেজুলেশন মেনে চলতে বাধ্য, কারণ এগুলো আইনত বাধ্যতামূলক। এটিই সাধারণ পরিষদ থেকে নিরাপত্তা পরিষদের মূল পার্থক্যের জায়গা। তবে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিলেও, এই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া রেজুলেশনে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। যেখানে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি ও গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর বাধাগুলো তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। মার্কিন খসড়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, রাফায় একটি বড় স্থল আক্রমণ হলে বেসামরিক নাগরিকদের আরও ক্ষতি হবে এবং তারা আরও বাস্তুচ্যুত হবে। এই ধরনের পদক্ষেপ আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে জাতিসংঘের যুদ্ধের বিষয়ে ভোটের সময় ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি এড়িয়ে গেছে। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাম্প্রতিক এই ইস্যুতে প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত ফ্রাঙ্ক লোয়েনস্টাইন এই পদক্ষেপকে আমেরিকান নীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বিবিসি ওয়ার্ড সার্ভিসকে বলেছেন, ‘আমার মতে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও তার সরকারের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। তারা মানবিক সহায়তা ও বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমানোর বিষয়ে আমাদেরকে ধারাবাহিকভাবে উপেক্ষা করছে এবং এখন তারা এই রাফা আক্রমণের পন্থা খুঁজছে। আমরা তীব্রভাবে এটির বিরুদ্ধে বলে আসছি।’

লোয়েনস্টাইন আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন ফিলিস্তিনিদের হত্যা বন্ধে আমেরিকানদের চাপের মধ্যে রয়েছেন।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমেরিকান যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ইসরাইল সরকারের জন্য একটি সমস্যা হতে চলেছে।’

চীনের বক্তব্য : ফিলিস্তিনের গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আনা প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে চীন। বেইজিং বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ‘ভুল বার্তা’ এবং গাজায় ইসরাইলের ‘হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া’কে সবুজ সংকেত দেবে। যুদ্ধ শেষ করার চলমান আলোচনাকে তাদের ভেটো ‘বাধাগ্রস্ত’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবি ‘পুরোপুরি অসমর্থনযোগ্য’। যুদ্ধক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া ক্রমাগত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়াকে সবুজ সংকেত দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।

ঝাং জুন আরও বলেন, ‘এই যুদ্ধ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও বড় ধরনের যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছে। শুধু গাজা যুদ্ধের আগুন নেভানোর মাধ্যমে আমরা পুরো অঞ্চলে নরকের আগুন ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে পারি।’


সময়ের আলো/আরএস/ 









https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close