ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ধূসর চরে সবুজ স্বপ্ন
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৪:২৯ এএম  (ভিজিট : ৩২৮)
তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনাবেষ্টিত উত্তর জনপদের জেলা গাইবান্ধার প্রায় ৩৫ শতাংশই নদী ও চরাঞ্চল। জেলার মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ মানুষের বসবাস সুন্দরগঞ্জ সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের ১৬৫টি চর-দ্বীপচরে। সেখানে অন্ততপক্ষে ৪৭ শতাংশ মানুষেরই জীবনমান দারিদ্র্যসীমার নিচে। বন্যা, নদীভাঙন, শৈত্যপ্রবাহ এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেই কেটে যায় এসব মানুষের যাপিতজীবন। এখানে যেন জীবন চলে জীবনের প্রয়োজনে।

চর-দ্বীপচরের প্রতিটি বালুকণায় মিশে আছে তাদের হাড়ভাঙ্গা খাঁটুনি। যাদের শ্রমে ঘামে কমলা-হলুদ সোনায় ভরে ওঠে বিস্তীর্ণ বালুচর। গবাদিপশুর একটা বড় অংশও আসে চরাঞ্চলের গতরখাটা মানুষের গোয়াল থেকে। অথচ এই জনপদে ওদের জীবনটা কখনো কখনো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মকাল মানে দুঃখ-কষ্টের পাহাড় এখানে। নদ-নদী সব শুকিয়ে যায়। তখন মাইলকে মাইল পাড়ি দিতে হয় হেঁটে। এখানে রোগে-শোকে পর্যুদস্ত হলেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে নিরুপায় সাধারণ মানুষ। তারপরও এতটুকু মান-অভিমান নেই কৃষিকে জড়িয়ে থাকা এসব মানুষের।

গাইবান্ধার ১৬৫টি চর-দ্বীপচরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। সমুদ্রের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো খেলে যায় সবুজ পাতা। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে ওঠে কৃষকের স্বপ্ন। এবার এসব বালুচরে বাদামের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বালুচর এখন আর অভিশাপ নয়। বালুচরে ধান এবং ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বাদাম চাষ করে চরাঞ্চলের হাজারো কৃষক এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনাবেষ্টিত জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চর-দ্বীপচরের প্রায় ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়েছে। গত বছর বাদামের বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অনেক চাষিই এ বছর বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। 

সদর উপজেলার কুন্দেরপাড়া, কড়াইমারি, রায়দাসবাড়ি, খামারগোঘাট, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লাটশালা, কাপাসিয়াচর, কাজিয়ার, খয়দার, ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ীর, আলগা, জিগাবাড়ি, গাবগাছি এবং খাটিয়ামারি চরাঞ্চলে বাদামের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। বাদামের চারায় সবুজ হয়ে আছে বিস্তৃত চর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেড়ে ওঠা বাদামের গাছ ভালো ফলনের জানান দিচ্ছে। বিঘাপ্রতি ৫-৬ হাজার টাকা লগ্নি করে কাঁচা বাদাম বিক্রি হবে অন্তত ২১ হাজার টাকার। ফলন ভালো হওয়ায় চরের চাষিরা বাদামে স্বপ্ন বুনছেন। 

স্থানীয়রা জানান, একসময় এসব চরে এভাবে বাদাম চাষ হতো না। বাদাম চাষের কারণে চরে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। ধান চাষের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় অনেকেই বাদাম চাষে ঝুঁকছেন। চরে বাদাম চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় অনেক চাষির পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। তারা জানান, প্রতি বছর জুলাই থেকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব চরে দফায় দফায় বন্যা হয়। বন্যায় বসতভিটা, আবাদি জমি ভেঙে নদীগর্ভে চলে যায়। এরপর বন্যার পানি নেমে গেলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে জেগে ওঠা চরের জমির প্রকৃতি বুঝে স্থানীয় চাষিরা বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে টিকে থাকতে জেগে ওঠা বালুচরে ডিসেম্বরের শেষে বাদাম চাষ করেন। 

চাষিরা জানান, বালুচর হলেও বন্যার কারণে পলিও পড়ে। যে কারণে চরে চাষাবাদ করা যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমিতে চাষ ছাড়াই বাদাম আবাদ করা যায়। লাঙল দিয়ে চাষ করে লাইন করে বীজ বপন করা হয়। বাদামের জমিতে চাষ, সার প্রয়োগ, নিড়ানি এবং সেচ দেওয়ার তেমন প্রয়োজন হয় না। বেশি ভালো ফলনের জন্য কিছু সার ছিটাতে হয়। সার, বীজ ও শ্রমিক বাবদ বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। মার্চের শেষে ও এপ্রিলের শুরু থেকে বাদাম জমি থেকে উত্তোলন শুরু হয়। বেশিরভাগ জমিতে এখন বাদামের গাছ বড় হয়েছে। প্রতিটি গাছের গোড়ায় থোকা থোকা বাদাম ধরে। বাদামের চারার পাতা হলুদ হয়ে খসে পড়তে থাকলে বাদাম জমি থেকে উত্তোলন করা হয়। 

ফুলছড়ি উপজেলার গাবগাছি চরের বাদামচাষি আবদুর রউফ মিয়া বলেন, অল্প খরচে বাদাম চাষ করা যায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ দ্বিগুণ। প্রতি একরে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। বাদাম তুলে শুধু রোদে শুকালেই অনেক দিন রাখা যায়। ভালো দাম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি করা যায়। 

সদর উপজেলার কড়াইমারি চরের বাদাম চাষি রানা মিয়া বলেন, গত বছর ১৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে লাভ করেছি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় এবার ১৭ বিঘা জমিতে বাদাম লাগাইছি। আকাশের অবস্থা ভালো হলে এবারও ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, জেলার চারটি উপজেলার চরাঞ্চলে ২ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের বিনা মূল্যে সার ও বাদামের বীজ বিতরণ করেছি। ভালো ফলনের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে বাদাম চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর বাদাম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close