প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৬:০০ পিএম (ভিজিট : ৫৮২)
রোগীদের চিকিৎসা সেবা নামে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। পরিচালিত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে ব্যাহত হচ্ছে মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। ফলে সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি চরম আকার রূপ ধারণ করেছে। তবে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু তাহের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অবজারবেশন রুম গুলোতে প্রায় তিন মাস বিদ্যুৎ বিহীন রাতে রোগীদের অন্ধকারে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়েছে। রাতের বেলা মোমবাতি জ্বালিয়ে মোবাইলের আলো দিয়ে চিকিৎসা চলছে। নোংরা অস্বাস্থ্যকর টয়লেট এবং কিছু টয়লেটের দরজা একবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যা ব্যবহার করার অনুপযোগী। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ভবন সংস্কারের যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তার কোন দৃশ্যমান কাজ দেখা যায় না। রোগী দেখার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে ঔষধ কোম্পানিদের কাছ থেকে অনারিয়াম নিয়ে মিটিং করেন।
এছাড়াও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের সরকারি গাছ বিক্রি করে দিয়েছে এবং গাছ বিক্রির করার অভিযোগের পর তার বিরুদ্ধে কয়েকটি পত্রিকায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে কোন সুফল হয় নাই।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকাবাসীর কাছ থেকে আরও জানা যায়, হাসপাতালের ভিতরে দুটি কাঁঠাল গাছ কেটে নিয়ে কিছু নিজেদের ফার্নিচার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বাকী গুলো বিক্রি করা হয়েছে বলে জানতে পারি। সরকারি ঔষধ দেওয়া হয় সাধারণ জনগণকে কিন্তু গরীব রোগীদের না দিয়ে তারা সেগুলো রেখে দিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে তাদের অকেজো ময়লার ডাস্টবিনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এভাবে অনেক রোগী ঔষধের অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না। এছাড়াও কিছু ঔষধের গায়ে সরকারি সিল থাকে না সেসব ঔষধ রোগীদের না দিয়ে সেগুলো কি করা হয় তারও কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহেরের বিরুদ্ধেও উঠেছে স্বেচ্ছাচারিতার ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে সরকারি গাছ বিক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের ভিতরে পুকুরের মাছ রাতে অন্ধকারে ধরে নিজে বাসায় নিয়ে যায়। হাসপাতালের কোন কাজ করাতে হলে ঔষধ কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন। ঔষধ কোম্পানির লোক তাকে দেখলেই দূরে সরে যায়। এলাকার প্রভাবশালী লোকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি হাসপাতাল একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে পরিবর্তন করে নিজের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে রেখেছেন। আরও বিভিন্ন রকমের অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
কমলনগর উপজেলার চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের কালাম মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, চারদিন পর আমার বিছানার নোংরা চাদর পরিবর্তন করা হয়েছে এবং আমার নিজের টাকায় চার্জার লাইট কিনে ব্যবহার করি। খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। এছাড়াও ডাল আর পানির তফাৎ বুঝা যায় না।
রামগতি জমিদার হাটের তোফায়েল আহম্মদ নামের আরো এক রোগী বলেন, এই রুমে বাতি নাই, অন্ধকার থাকা লাগে ঠিক মত ডাক্তার নার্সরা আসতে চায় না। বেশি ডাকলে নার্সরা রাগ হয়ে ধমক দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ বলেন, হাসপাতালে অনিয়মের শেষ নেই। পরিবেশ নোংরা, ডাক্তারদের গাফিলতির কারণে সাধারণ মানুষ সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তাহের পাটোয়ারী জানান, আমি যোগদান করার পর হাসপাতালের সৌন্দর্য বিশাল আধুনিকায়ন হয়েছে। রোগীদের সেবার মান উন্নত হয়েছে। তবে ছোটখাটো কিছু কাজ এখনে বাকি রয়েছে। সরকারি বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহারে কয়েকটি নতুন ভবনসহ হাসপাতাল ঝকমক করছে। তবে বিদ্যুতের বিষয়টি কিছুটা অবহেলা হয়েছে কিন্তু এখন আর বিদ্যুতের সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে ডা. আহমেদ কবির সিভিল সার্জনকে না পেয়ে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের হাসপাতালটির মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অনিয়ম পরিচালনা করে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানা আছে কিনা তার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।
সময়ের আলো/আরআই