ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পাকিস্তানে নির্বাচন: ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ: বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:৫৫ এএম  (ভিজিট : ২৮৬)
পাকিস্তানে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচন হয়েছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। বিতর্কিত এই নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় ম্যান্ডেট পায়নি। আবার পিটিআইসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে কারচুপি ও ভোটের ফল পরিবর্তন করে দেওয়ার অভিযোগ সামনে এনেছে। এমন অবস্থায় পাকিস্তানকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের তদন্ত করতে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতা ইমরান খান বলেছেন ফল চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে যাবে তার দল। এদিকে নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে ১৮টি পিটিশন খারিজ। গুলি করে মারা হয়েছে ইমরানের দল সমর্থিত এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে।

তদন্ত চায় যুক্তরাষ্ট্র : জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের পাশাপাশি সামনের দিনগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের সময় অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগের স্বাধীন তদন্ত করার জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে অত্যধিক বিলম্ব করা হয়েছে। যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামী এবং জামিয়াত উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ)-সহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সদ্য সমাপ্ত এই নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ করেছে। যদিও বিলম্বিত ফল প্রকাশের পর পিপিপি, পিএমএল-এন এবং এমকিউএম-পি-সহ অন্যান্য দল জোট সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করেছে। কারণ গত সপ্তাহের এই নির্বাচনে কোনো দলই সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।

তবে ইমরান খানের পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বাধিক আসন জিতেছে। আর এরপর রয়েছে নওয়াজের পিএমএল-এন এবং বিলাওয়ালের পিপিপি। এমন অবস্থায় সোমবার দৈনিক প্রেস ব্রিফিংয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘এখন আমরা মনে করি, পাকিস্তানে আইনিব্যবস্থা নিজেই কার্যকর হবে, এটাই হবে সঠিক প্রথম পদক্ষেপ এবং আমরা মনে করি, এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
মার্কিন আইন প্রণেতারা বাইডেন প্রশাসনকে কথিত নির্বাচনি জালিয়াতির অভিযোগের স্বাধীন তদন্তের জন্য পাকিস্তানকে চাপ দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না, স্বাধীন তদন্ত করার জন্য তারা কোন সংস্থায় প্রস্তাব করছে।’ মিলার বলেন, ‘প্রয়োজনে অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দেখতে পেলে আমরা খুশি হব।’

পৃথক এক প্রশ্নে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং জালিয়াতির যেসব অভিযোগ আমরা উত্থাপিত হতে দেখেছি, তাতে পাকিস্তানের আইনিব্যবস্থার অধীনে এগুলোর সম্পূর্ণরূপে তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। এর পাশাপাশি আমরা সামনের দিনগুলোতেও এটি পর্যবেক্ষণ করা চালিয়ে যাব।’

নির্বাচনি অনিয়মের অভিযোগের সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে মুখপাত্র মিলার বলেন, এটি স্পষ্টতই একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন ছিল, যেখানে জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে বেছে নিতে সক্ষম হয়েছিল এবং ‘আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং আমরা সরকার গঠনের পর তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত’।

মুখপাত্র আরও বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এই ব্যাপারে ইইউ, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিছু অনিয়ম আমরা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াটিতে দেখেছি। আমরা পাকিস্তান সরকারকে নির্বাচনের রায়কে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জানিয়েছি।

১৮টি পিটিশন খারিজ : ফলের বিরুদ্ধে ১৮টি পিটিশন খারিজ করেছে লাহোর হাইকোর্ট। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি আলি বাকার নাজাফি ফর্ম ৪৭ এর ভিত্তিতে সেগুলো খারিজ করেছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের পর নির্বাচনি এলাকার ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে ১৮টি পিটিশন করে কারাবন্দি ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র এবং অন্যান্য প্রার্থীরা। পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ, শেহবাজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ, হামজা শেহবাজ, খাজা আসিফ, আতাউল্লাহ তারার এবং আইপিপি নেতা আউন চৌধুরীর নির্বাচনি জয়ের বিরুদ্ধে আবেদনগুলো করা হয়েছিল। তারা দাবি করেছেন, রিটার্নিং অফিসাররা ফর্ম ৪৫ এবং ৪৭-এ ভোট গণনায় কারচুপি করেছে।
আদালত পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র এবং অন্যান্য প্রার্থীদের আবেদনগুলো শুনেছেন। পরে এ বিষয়টি নিয়ে তাদের পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

স্বতন্ত্র প্রার্থীকে গুলি করে হত্যা : নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা সাবেক সংসদ সদস্য চৌধুরী মুহাম্মাদ আদনানকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডির শহরের সিভিল লাইন এলাকায় দুর্বৃত্তদের হাতে তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে পুলিশ। মুহাম্মাদ আদনান রাওয়ালপিন্ডির এনএ-৫৭ আসন এবং পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদের পিপি-১৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

বিবৃতিতে রাওয়ালপিন্ডি পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু প্রমাণও সংগ্রহ করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের ধরতে দল গঠন করা হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হবে।

এ ঘটনায় রাওয়ালপিন্ডি সিটি পুলিশ অফিসার (সিপিও) সৈয়দ খালিদ হামদানি পোতোহারের পুলিশ সুপারকে অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন।

সর্বোচ্চ আদালতে যাবে পিটিআই : প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান আদিয়ালা কারাগারে মিডিয়ার সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক আলাপকালে বলেছেন, পিটিআই ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফলাফলকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করবে। পিটিআই বলছে, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সদস্যদেরও পদত্যাগ করা উচিত। তার অভিযোগ, কমিশন পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীদের ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে জনগণের দ্বারা তাদের দেওয়া ম্যান্ডেট ছিনিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছিল।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close