ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

ফাল্গুনই আমাদের ভাষার মাস
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ২:২২ এএম  (ভিজিট : ৭৫৬)
পৃথিবীতে বহু জাতিসত্তা রয়েছে। এক একটি জাতিসত্তা একেকটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ভাষার ওপর একটিমাত্র জাতিসত্তা বিদ্যমান। একটিমাত্র জাতি ভাষা দিয়ে পুরো পৃথিবীতে পরিচিত। সেই জাতির নাম বাঙালি এবং সেই ভাষাটির নাম বাংলা ভাষা। ইউনেস্কোর ঘোষণা অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ভাষা হলো বাংলা। বাঙালি হলো পৃথিবীর একমাত্র জাতি, যারা নিজ ভাষাকে রক্ষায় জীবন দিয়ে লড়াই করেছে। রক্তের দামে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজের প্রাণের ভাষাকে, মায়ের ভাষাকে। আর এই ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। তাই তো একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে।

বাংলা ভাষার আঁতুড়ঘর নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ থাকলেও বাংলা ভাষার আদি যে চর্যাপদ সে বিষয়ে পণ্ডিতগণ একমত। মহামহোপাধ্যায় হর প্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবার (রয়েল লাইব্রেরি) থেকে একটি পুরোনো পুথি উদ্ধার করেন। এই পুথিই চর্যাপদ হিসেবে পরিচিতি পায়। এই চর্যাপদকেই বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়। আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ তাদের গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, চর্যাপদই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন। চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে!  ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে চর্যাপদের রচনাকাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী (৬৫০-১২০০)। আর আচার্য সুনীতিকুমার 

চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, চর্যাপদের রচনাকাল দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী (৯৫০-১২০০)।  তবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বাংলা ভাষার একটি চমৎকার দৃঢ় অতীত রয়েছে যা কোনোভাবেই ফেলনা নয়। 

চর্যাপদ যে বর্তমান বাংলা ভাষার পূর্বপুরুষ তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন স্বয়ং বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি যখন ভানু সিংহ নামে তার সাহিত্যকর্ম করতেন, তখন তার লেখায় চর্যাপদের প্রভাব ছিল স্পষ্ট।

বাংলা ভাষার মাধুর্যে আকর্ষিত হয়ে অনেক ভিন্ন ভাষার মানুষ যে বাংলাকে নিজের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে ১৮০১ সালে যখন বাংলা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হয় এবং তার প্রধান ছিলেন একজন ইংরেজ, মিস্টার উইলিয়াম কেরি।  আবু সাঈদ আইয়ুব একজন উর্দু ভাষার মানুষ ছিলেন। তিনি ভিন্ন ভাষায় রবীন্দ্রনাথকে পড়ে এমনভাবে তার প্রেমে পড়লেন যে তিনি বাংলা ভাষাকে এতটাই ভালোবেসে ফেললেন যে পরিণত বয়সে বাংলা শিখলেন এবং রবিঠাকুরের ওপর গবেষণাও করলেন। এমনকি বাংলায় তিনি তার স্থায়ী আবাস গড়ে তুললেন। 

বাঙালির জীবনে কালের আবর্তে আবারও ফিরে এসেছে সেই ঐতিহাসিক মাস। এটা শোকের মাস যেমন, তেমনি আবার গৌরবের মাস। এটা  বিজয়ের মাস। রফিক,  জব্বার, বরকতের রক্তের তথা বাঙালির রক্তের বলিদানের সার্থকতার মাস। এই মাস বাংলা ভাষার ইতিহাসকে সৃষ্টিকারী ফেব্রুয়ারি মাস। কিন্তু কষ্ট একটাই, বাংলা ভাষাকে বাঙালি বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেও, ফেব্রুয়ারিকে এখনও ফাল্গুনে পরিণত করতে পারেনি। তবুও আশায় বুক বাঁধি যে ফেব্রুয়ারি নয়, ভাষার মাস ফাল্গুন মাস এটাই হোক পরিচয়।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close