বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষ ও ওপারে উত্তেজনা কারণে আসন্ন এসএসসি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জনিত ঝুঁকি থাকায় সীমান্তে লাগোয়া ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রটি স্থানান্তর সিধান্তের নিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের বিজ্ঞতির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সীমান্তবর্তী ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার ভেন্যু ছিল। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ওই ভেন্যুর পরিবর্তে ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তারমধ্যে ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা রয়েছে ৪২৫ জন ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসন সংখ্যা রয়েছে ২০০ জন। তবে এবারে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল ৪৬১ জন।
এ বিষয়ে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খায়রুল বশর বলেন, সীমান্তের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী বিকল্প ভেন্যুতে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি যথারীতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
এদিকে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় মিয়ানমারের চলমান সংঘাত জেরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।
পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্তের পরিস্থিতির আগে থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক। সীমান্তের বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ের পর্যায়ের আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং সহসাই একটি সিদ্ধান্ত আসবে যারা মিয়ানমার থেকে প্রাণ রক্ষার্থে এখানে আসছে তাদেরকে ফেরত পাঠানো জন্য। সীমান্তের যারা রয়েছেন বিজিবি সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
এসময় সীমান্তের পরিস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডি আইজি নুরী আলম মিনার বলেন, সীমান্তের পরিদর্শনে ঘুরে যতটুকু দেখলাম এত খারাপ পরিস্থিতি আমাদের নজরে পড়ে নাই। তাছাড়া বর্ডার পাশে অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে যার কারণে সকাল কিংবা বিকেল পরিবেশ শান্ত থাকে ওই সময়ের গুলির শব্দ পেয়েছে সীমান্তবর্তী মানুষ। তাছাড়া বান্দরবানের আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার যৌথভাবে সীমান্তের পরিদর্শন করেছেন। তবে এই মুহূর্তে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলা যায় আর যেটা আছে সেটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেটি বলার আমাদের প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়।
সীমান্তের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ গুজব। এসব বিষয়ের গোয়েন্দা সংস্থা দেখছে আর ক্যাম্প গুলোকে নজর রাখতে তিনটি ক্যাম্পের আর্মড পুলিশ, এফডি এম ব্যাটালিয়ন তার পাশাপাশি কক্সবাজার ও বান্দরবান পুলিশ কাজ করছে। এসব বিষয়ের আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স সাদা ও ইউনিফর্ম পোশাকে নিয়োজিত রয়েছে। আমরা এটা নিয়ে কোন ধরণের আশঙ্কা বা নাশকতার ও থ্রেড এগুলো ফিল করছি না। এগুলো স্বাভাবিক চলছে এবং যদি আরো প্রয়োজন হয় আমাদের তথ্য প্রমাণ বা গোয়েন্দা সংস্থা মাধ্যমে সাইড করব। আমাদের জানা মতে, কোন সন্ত্রাসী প্রবেশ করলে তাদের হেফাজতে আনবো। আমরা এসবের বিরুদ্ধে কোন ছাড় দেবো না।
মিয়ানমার থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ২৩ জনের বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে ডি আইজি বলেন, মামলা দিয়ে আটককৃতদের জেল হাজতের প্রেরণ করা হয়েছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত বা রিমান্ড অর্থাৎ যা যা আইনে থাকে সেগুলো নিয়মের মাধ্যমে শুরু হবে।
এসময় পরিদর্শনে উখিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন, নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান, ঘুমধুম চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজসহ প্রশাসনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সময়ের আলো/আরআই