ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের বিচার এবং যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করার দাবিতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন বিরোধী মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বর, ভিসির কার্যালয়সহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মেশকাত তানিশা। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাশফিয়া হাসান মৌরি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়, যেটাকে আমরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বলে জানি যেখানে আমরা জ্ঞানার্জনের জন্য এসেছি, সেখানে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার সেটার বিচার চেয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে আমাদের। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা ছাড়া আর কী? নারীরা এমনি দৈনিক যানবাহন, পথঘাট, এমনকি নিজের বাড়িতেও যৌন হয়রানির শিকার হন, এখন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তচিন্তা চর্চার স্থানেও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।
ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন, শিক্ষকেরা তাদের কর্তৃত্ববাদী আচরণের মাধ্যমে শ্রেণীকক্ষ গুলোকে এক একটি কারাগারে রূপান্তর করেছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে প্রায় প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টেই যৌন নিপীড়নের শিকার অনেক শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। কিন্তু যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর না থাকায় তারা অভিযোগ নিয়ে এগুতে পারে না। অনেকে এগিয়ে আসলেও তাদেরকে ক্লাস রুমে, পরীক্ষায় নানা ভাবে হেনস্তা করা হয়। ক্যাম্পাসকে এবং এর আশেপাশের পরিবেশকে নারীবান্ধব করতে প্রয়োজন ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তন, প্রতিটি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার কার্যকর করা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক বলেন, অতিসত্বর এ অভিযোগ তদন্ত করে বিচার, অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান এবং যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলকে কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই নয়, সমাজের সকল স্তরেই দিন দিন যৌন নিপীড়নের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর বিচার হচ্ছে না—রাষ্ট্র, সরকার, প্রশাসন নিপীড়কদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। এ জন্যে দায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা ফাতেমা এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, নিজ বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। বিভাগের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে ওই নারী শিক্ষার্থীর ওপর নজরদারি করা, সময়ে অসময়ে ফোন করা ও যৌন ইঙ্গিত দেওয়াসহ নানা অভিযোগ এনেছেন ওই ছাত্রী।
সময়ের আলো/আরআই