ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইউটিউব দেখে ‘রঙিন ফুলকপি’ চাষে সফল মানিক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৫:২১ পিএম আপডেট: ০৯.০২.২০২৪ ৫:২৬ পিএম  (ভিজিট : ৭০৯)
শখের বসে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মানিক রতন। সবুজ পাতার মাঝে গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুলকপি। দূর থেকে দেখলে বোঝা যাবেনা, কাছ থেকে কপির রঙে মুগ্ধ করবে। রঙিন কপি দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুলকপি মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে।

জেলায় সাদা রঙের কপি নিয়মিত চাষ হলেও এ বছর প্রথম রঙিন কপি চাষ হচ্ছে। খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশি। রঙিন কপির চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারে। দূর দুরন্ত থেকে সাধারণ মানুষ ছুটে আসছেন এ কপি দেখতে। কৃষকরা উচ্চ মূল্যের এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কপি বিক্রি শুরু হয়েছে। ১৫ কাঠা জমিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রঙিন কপির গাছ রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের হুচুকপাড়ার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মানিক রতন। ১০ বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর ছোট বেলা থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি কৃষি চাষ শুরু করেন সংসারের হাল ধরতে। অভাব অনটনের সংসারের কারণে ছোট বেলায় কৃষির সাথে মিশে যান। পাশাপাশি নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। বাবার রেখে যাওয়া মাঠের কৃষি জমিতে বছর জুড়ে সবজি, ধানসহ অন্য ফসল চাষ করেন। নতুন নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কারণ বিদেশি জাতের ফসল চাষ লাভজনক ও খরচ তুলনামূলক কম। আর বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকে। ইউটিউবে দেশি-বিদেশি ফসল চাষ দেখেন। পছন্দের চাষ দেখলেই আগ্রহী হয়ে উঠেন। বীজ অথবা চারা পেলেই চাষ শুরু করেন।

তিনি ইউটিউব দেখে এ বছর রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হন। রঙিন ফুলকপির বীজ দেশের বাজারে না পেয়ে ভারতে ছুটে যান। কিছু দিন অবস্থান করেন বীজের জন্য। সেখানে বীজ পেতে দেরি হওয়ায় দেশে ফিরে আসেন। গ্রামের সার, বীজ ও কীটনাশকের একটি দোকানে রঙিন কপির বীজের কথা বলে রাখেন। ভাগ্য ভাল হওয়ায় ওই দোকানি সংবাদ দেন অল্প পরিমাণে বীজ পাওয়া যাবে। তাতেই তিনি রাজি হয়ে যান। সিনজেনটা কোম্পানির প্রতিনিধির মাধ্যমে রঙিন ক্যারেনটিনা ও ভেলেনটিনা জাতের ২০ গ্রাম বীজ সংগ্রহ করেন।

ভেলেনটিনা বেগুনি ও ক্যারেনটিনা হলুদ জাতের বীজ চারা তৈরির জন্য বীজতলায় রোপণ করেন। নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয় বীজতলার। ২৫-৩০ দিনের মধ্য চারা লাগানোর উপযুক্ত হয়। এরপর বীজতলা থেকে চারা গুলো সংগ্রহ করা হয়। চারা গুলো জমিতে রোপণের পর নির্দিষ্ট পরিমাণ সার, কীটনাশক, সেচসহ সব ধরনের পরিচর্যা করতে হয়। গাছ বড় হওয়ার পর ছোট ছোট গুটি বাধতে শুরু করে। তারপর ৬৫-৭৫ দিনের মধ্য কপি বাজারে বিক্রির উপযুক্ত হয়।

রঙিন ফুলকপি চাষে ১৫ কাঠা জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। প্রতিটি গাছেই ছোট বড় কপি রয়েছে। কপির ওজন ১ কেজি থেকে প্রায় দেড় কেজি পর্যন্ত। সবুজ পাতার মাঝে পূর্ণতা পেয়েছে গোলাপি ও হলুদ ফুলকপি। প্রতি কেজি কপি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। দেশের বাজারে রঙিন কপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন স্থানীয় বাজারে ২০০-২৫০টি পরিপক্ব কপি বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছে। মানিক রতন ১৫ কাঠা জমিতে প্রায় ৩৫০০টি হলুদ ও বেগুনি জাতের ফুলকপি লাগান। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক রহিম সরদার জানান, হাটে সবজি বিক্রি করে গ্রামের ভেতর দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। হঠাৎ হলুদ ও গোলাপি রঙের কপি দেখা ক্ষেতের সামনে দাঁড়ায়। রঙিন কপি এর আগে কখনও দেখিনি। কপি দেখে খুব ভাল লাগলো। বীজ পেলে এ জাতের কপি চাষ করবো। রঙ দেখে মানুষ ক্ষেতে ভিড় করবে।

রঙিন কপি চাষি চুয়াডাঙ্গা আলোকাদিয়া গ্রামের হুচুকপাড়ার মানিক রতন বলেন, ইউটিউবে নিয়মিত আধুনিক চাষ সম্পর্কে ভিডিও দেখি। যে চাষটি পছন্দ হয় সেটি করার চেষ্টা করি। অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়না বীজ ও আবহাওয়ার কারণে। রঙিন কপি চাষ করব, কিন্তু দেশে বীজ না পেয়ে ভারতে যায়। ভারতেও বীজ পায়নি। সিনজেনটা কোম্পানির মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করি। মাঠে কপি অনেক সুন্দর হয়েছে। গাছ গুলো অনেক সবুজ ও সতেজ। কপি ধরার পর থেকে ভাল লাগে। বাজারে ভাল দামে বিক্রি করছি এখন। সব কপি বিক্রি করতে পারলে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিন্তে আজিজ জানান, চুয়াডাঙ্গার মাটি কৃষির জন্য উর্বর। এখানে সব ফসল চাষ করা সম্ভব। উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। রঙিন কপির বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিক্রি শুরু হয়েছে। দাম ভাল পাচ্ছে। খরচ তুলনামূলক কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মানিককে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হয়। এ কপি চাষ জেলায় বড় পরিসরে চাষ করতে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  রঙিন ফুলকপি চাষ   গোলাপি-হলুদ রঙের ফুলকপি   রঙিন ফুলকপির বীজ   কৃষি উদ্যোক্তা   চুয়াডাঙ্গা   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close