ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

বদলে যাওয়া বইমেলা
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১:৫৬ এএম আপডেট: ০৯.০২.২০২৪ ২:০৫ এএম  (ভিজিট : ৫০৫)
বাংলাদেশি বইপ্রেমীদের কাছে ফেব্রুয়ারি মানেই বইমেলা। অন্যান্য মাসের নাম ঠিক থাকলেও ফেব্রুয়ারি মানেই বইমেলার মাস। বই-নতুন বই। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে আমোদিত থাকে এই মাস। সারা বছর পাঠকেরা অপেক্ষা করে কবে আবার বইমেলা শুরু হবে। না বললেও চলে, বইমেলা সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকেই বইপ্রেমীরা চেষ্টা করে অন্তত একদিন হলেও বইমেলায় ঘুরে যেতে। প্রিয় বইটি কিনতে। যদি সম্ভব হয় প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নিতে। 

আগে বাংলা একাডেমির চত্বরে জমতো এই প্রাণের মেলা। হাতের তালুর মতো ছোট্ট জায়গা। কত কত স্টল বসত। বইয়ের স্টলগুলো একেকটা রঙিন পৃথিবী। স্টলের সামনে সাজিয়ে রাখা বইগুলো ছিল হরেক রঙের স্বপ্ন। নজরুল মঞ্চে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হতো। কত কবি, লেখক আসতেন। কেউ স্টলে বসতেন। কেউ ঘুরে বেড়াতেন, কেউ বা লিটলম্যাগ চত্বরে দল বেঁধে আড্ডা দিতেন। কিন্তু দিন দিন প্রকাশনীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বাংলা একাডেমির চত্বরে আর সংকুলান হলো না। মেলা স্থানান্তরিত হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিশাল পরিসরজুড়ে বসল বইয়ের মেলা। প্রকাশনীগুলো তাদের সব বই প্রদর্শনের জায়গা পেল। পাঠকরাও বই নেড়েচেড়ে কেনার একটা ফুরসত পেল। বাংলা একাডেমির চত্বরে যখন মেলা হতো, তখন বন্ধের দিনগুলোতে এত ভিড় হতো যে, কোনো কোনো স্টলের সামনে ঘেঁষাই যেত না।

২০১৪ সালে যখন মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তর করা হলো, ঘুচল স্থানাভাব। প্রকাশকরা তাদের চাহিদা অনুসারে স্টল বরাদ্দ নিচ্ছেন এখন। যাদের কম বই, তারা নিচ্ছেন এক ইউনিটের স্টল। এভাবে দুই, তিন, চার ইউনিটের স্টল নিয়ে পসরা সাজান বইয়ের। যাদের এতেও হয় না, তারা নেন প্যাভিলিয়ন। নান্দনিক সজ্জায় সজ্জিত এসব স্টল, প্যাভিলিয়ন দেখলে মনে হয়, বইয়ের জগতে চলে এসেছি। বাহারি রঙের মলাটে কত কত বই। 

কত কত স্বপ্ন। ২০১৪ থেকে ২০২৪। দশ বছর। এই দশ বছরে বদলে গেছে বইমেলার রূপ। কাঠামো। একটা সময় জনপ্রিয় লেখকরা মেলায় এলে অচলাবস্থা তৈরি হতো। এজন্য তো একবার হুমায়ূন আহমেদকে মেলায় যেতেই নিষেধ করা হয়েছিল। গেলেও তিনি যেন স্টলে না বসে কর্মকর্তাদের অফিসে বসে চা খেয়ে আসেন। কারণ তিনি মেলায় এলে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয়। এখন আর সেই সমস্যা নেই। এত বিশাল পরিসর যে, যার ইচ্ছে স্টল বা প্যাভিলিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফ নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দমতো বই কিনছেন। কারো জন্য কারো সমস্যা হচ্ছে না। এখন মেলায় মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ছাড়াও রয়েছে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ। এখানে প্রতিদিনই একাধিক লেখকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের কাছে এও এক অন্যরকম আকর্ষণ। বই কেনার সঙ্গে সঙ্গে লেখকদের কথা শোনা, সরাসরি প্রশ্ন করতে পারার অনুভূতি ব্যক্ত করার মতো নয়। বইয়ের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে চা-কফির দোকান। খাবারের দোকান। শিশুদের জন্য আলাদা শিশু কর্নার। সেখানে শিশুদের বইয়ের পাশাপাশি তাদের বিনোদনের জন্যে রয়েছে সিসিমপুর শো-এর ব্যবস্থা। বাংলা একাডেমির চত্বরে  যে বইয়ের স্পর্শ লাগে না, তা কিন্তু নয়। মুক্তধারার স্টলটি এখনো একাডেমির চত্বরেই বসে। বসে আরও নানান স্টল। সেখানেও প্রতিদিন সেমিনার হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। 

বেশ কয়েক বছর ধরেই কেউ কেউ বইমেলায় প্রবেশের জন্যে টিকিটের ব্যবস্থা করতে বলেন। তাদের চিন্তা উদ্দেশ্য হয়তো মহৎ। তবুও কথা থাকে। মেলা মানেই মেলা, মানুষের মেলবন্ধন। প্রবেশে টিকিটের ব্যবস্থা করলেই যে লোকজনের আনাগোনা কমবে, তা হয়তো নয় কিন্তু এটা করা মোটেই কাম্য নয়। যদি একান্তই কারো মানুষের ভিড়ে বই কিনতে সমস্যা হয়, তাহলে তিনি অনায়াসে ঘরে বসে অনলাইনে বই কিনতে পারেন। এখন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে অনলাইনে বই কেনার। একই বই কখনো কখনো মেলার চেয়ে বেশি কমিশনে অনলাইন থেকে ক্রয় করা যায়। তাহলে কেন, মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আগমনকে বাধা দেয়ার চিন্তা? 
একজন লোক না হয় একটু মেলায় ঘুরতেই এলো। অকারণেই। ক্ষতি কী? সে তো চাইলে অন্য কোথাও তার সময়টুকু কাটাতে পারত। সে বইমেলায় এসেছে, তার মানে বইয়ের প্রতি তার সামান্য হলেও ভালোবাসা আছে। টান আছে। দুই দিন সে ঘুরে চলে গেলেও তিন দিনের দিন একটি বই হয়তো সে কিনবে। সেই বই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর সে না পড়লেও পরিবারের কেউ না কেউ পড়বে। 

না পড়লেও দেখবে। এভাবে বইয়ের প্রতি একটা যোগসূত্র তৈরি হবে। একদিনে কোনো কিছুই বদল সম্ভব নয়। আস্তে আস্তে মানুষ যত বইয়ের কাছে আসবে তত সমাজের পরিবর্তন ঘটবে। আরেকটি প্রসঙ্গে বলে লেখা শেষ করব। শোনা যাচ্ছে, বইমেলা এখান থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে। অনেক পাঠকই ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 

তাদের ভাষ্য, বইমেলা যেন এখানেই অর্থাৎ বাংলা একাডেমির কোলঘেঁষা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হয়। ভেবে দেখুন, একে তো ভাষার মাস। এই মাসেই মেলার খুব কাছে ভাষার জন্য বাঙালি প্রাণ দিয়েছিল। তাছাড়া ১৯৭১ সালে এই মাঠে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু সাত মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আপনি যখন এই মাঠে ঘুরে বই কিনবেন, কখনো কখনো আপনার কানে ভেসে আসবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুর, কখনো আপনার চোখ চলে যাবে সুউচ্চ গ্লাস টাওয়ারের দিকে-তখন কি আপনার অনুভূতির কিছুটা পরিবর্তন হবে না? আমার তো হয়!

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close