ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সীমান্তে অনুপ্রবেশ থামছে না
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৩:১০ এএম  (ভিজিট : ৭৬০)
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত থামছেই না। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে কোণঠাসা হয়ে একের পর এক মিয়ানমারের জান্তা সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যরা বাংলাদেশে অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করছে। তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দ করে হেফাজতে নিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা।

বুধবার দফায় দফায় গুলিবর্ষণ, মর্টারশেলের মুখে পড়ে জীবন বাঁচাতে অনুপ্রবেশ করেছেন ৬৪ জন। তাদের মধ্যে ওই দেশের জান্তা বাহিনীর সেনা, বিজিপি, কাস্টমস কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে তারা ঢুকে পড়ে। 

বুধবারও অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা সদস্য উলুবুনিয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে। বিজিবি ও গ্রামবাসী তাদের ঢুকতে না দেওয়ায় তারা ওই দেশের সীমান্তবর্তী নাফ নদের চরে অপেক্ষা করছে। নাফ নদের ওপারে গত মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুহুর্মুহু গুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপে আতঙ্কে তারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জালাল আহমেদ। 

তিনি বলেন, গত সোমবার একই পরিবারের ৫ জন এবং মঙ্গলবার ৬ জন হোয়াইক্যংয়ের উলুবুনিয়া সীমান্ত দিয়ে তারা অনুপ্রবেশ করে। তাদের বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আজকালের মধ্যে আরও ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতভর ও বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই দেশে ব্যাপক গুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের শব্দ শোনা গেছে। তবে দুপুরের পর পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত রয়েছে। 

হোয়াইক্যংয়ের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা একজন মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিয়ানমার অভ্যন্তরে কতমুল লড়াইয়ের ফলে আতঙ্কে অনেকে গ্রাম ছেড়ে নাফ নদের চরে আত্মগোপনে রয়েছে। সেখানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশুসহ অপেক্ষা করছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে সময়ের আলোকে জানান তিনি। 

তবে বুধবার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আর একজন রোহিঙ্গাকেও অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।    

বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধীন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এবং তৎসংলগ্ন বিওপি পরিদর্শন করেন বিজিবি মহাপরিচালক। 

পরিদর্শনকালে তিনি সীমান্তে দায়িত্বরত সব পর্যায়ের বিজিবি সদস্যের খোঁজখবর নেন এবং তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবাইকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদা তৎপর থাকার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তিনি দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় বিজিবি সদস্যের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। 

পরে বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘর্ষের জেরে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিজিপি, সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সব সদস্যের খোঁজখবর নেন এবং আহত অবস্থায় আসা ও হাসপাতালে চিকিৎসারত বিজিপি সদস্যদের দেখতে যান। 

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে ধৈর্য ধারণ করে, মানবিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক বজায় রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, অবৈধভাবে আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছে। 

এ সময় তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করছেন বর্ডার এলাকার সাংবাদিকরা, সেজন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ২৬৪ জন বিজিপি সদস্যকে আশ্রয় দিয়েছি। তাদের খাবার ও বাসস্থান সবকিছু জোগাড় করে দিচ্ছি এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। এর মধ্যে যারা আহত ছিল, তাদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এ মুহূর্তে ৮ জন আহত রয়েছে, তার মধ্যে কক্সবাজার হাসপাতালে ৪ জন চিকিৎসাধীন এবং বাকি ৪ জনকে চিকিৎসকের পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। 

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, গত দুদিনের তুলনায় আজকে (বুধবার) ওপারে ফায়ারিং কম। এর আগের গোলাবারুদ-মর্টারশেল আমাদের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে। সেজন্য আমাদের সরকারে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীও সেই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন, আমাদের বিজিবি সদস্যদের ধৈর্য ধরার কথা বলেছেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন মিটিং হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অনুরোধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মিয়ানমারের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। মিয়ানমার থেকে এসে যারা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের নিয়ে যেতে প্রস্তুত। আমরা আশাবাদী শিগগির এর একটা সমাধান হবে। আমার সঙ্গে বিজিপি ডিফেন্স হেডকোয়ার্টারের কথা এবং কীভাবে তাদের প্রত্যাবর্তন করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি।

এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় সেন্টমার্টিন পর্যন্ত চলাচলরত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল স্থগিত রাখার পরিকল্পনা করছে স্থানীয় প্রশাসন। বুধবার সন্ধ্যায় জাহাজ মালিক ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। 

বুধবার সকালে সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। বেলা সাড়ে ১১টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নাফ নদ হয়ে পর্যটন স্পট সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। 

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close