রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে (রমেক) এক বেডে ২ রোগীর থাকার বিষয়টি নিত্যকার চিত্রে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, রমেকের ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দার মেঝেতে শুয়ে কাটে রোগীর দিনরাত। হাসপাতাল সূত্র বলছে, এক হাজার শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি হয় ২ থেকে আড়াই হাজার রোগী। সবসময় চিকিৎসক-নার্সদের সমন্বয়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৫০০ লোকবলের কাঠামোতে বর্তমানে এক হাজার শয্যায় চলছে হাসপাতালটি, এখন শয্যাসংখ্যা এক হাজারের হলেও চিকিৎসা নেয় ২ হাজার থেকে ২ হাজার পাঁচশত রোগী। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ওয়ার্ডে গড়ে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি হন। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হয় অনেক রোগীকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, এক শিশু ভর্তি ছিল শিশু ওয়ার্ডে, গত ২ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ওই বিভাগের ২০৬ শয্যার বিপরীতে রোগী ছিল ৫০৬ জন, সেই হিসেবে এক শয্যার বিপরীতে তিনজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, হাসপাতালের পরিবেশ মোটামুটি পরিষ্কার, তবে মেডিকেল থেকে কোনোরকম ওষুধ পাইনি।
তিনি জানতে চান আদতে কি ওষুধ বরাদ্দ নেই?
লালমনিরহাট কালীগঞ্জ থেকে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আশা মনোয়ারা বেগম জানান, হাসপাতালে বেড নেই, বারান্দায়ও জায়গা নেই। সিঁড়ির কাছে রোগীকে শুইয়ে রাখায় নানা কষ্টে রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। উপায় না পেয়ে তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, শয্যা ৭২টি। আর রোগী সেবা নিচ্ছেন ২১৭ জন। তারপরও চিকিৎসক ও নার্সের বিষয়ে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা আসলে অসহায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি মেডিসিন ওয়ার্ডে ২০৬ বেডের বিপরীতে ৫২৬ জন এবং শিশু ওয়ার্ডে ৭২ বেডের বিপরীতে ২১৭ জন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. ইউনুস আলী শয্যা সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, ৫০০ শয্যার লোকবলে চলছে হাসপাতাল। মঞ্জুরকৃত ৩২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে আছেন মাত্র ২২৫ জন। শূন্য চিকিৎসকের পদ ১০২, নার্স মঞ্জুরকৃত ১ হাজার পদের বিপরীতে শূন্য ২৭টি।
তবে ওষুধ সংকট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেনোপেনেম আন্টি বাইটিক (দামি) ইনজেকশনও আমরা দিই। শয্যা সংকট ও চিকিৎসকসহ নানা সমস্যা সমাধানের জন্য সচিব এবং মহাপরিচালক বরাবর পত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট মো. আকবর আলী বলেন, ষাটের দশকে যাত্রা শুরু করা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রংপুর বিভাগের সব জেলাসহ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিছু সমস্যা আছে, এর সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য রংপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য জিএম কাদেরসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রংপুরসহ ১০টি জেলার মানুষ চিকিৎসা নেয়।
এখানে চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করাসহ অনেক বড় পরিকল্পনা রয়েছে-যা এ মাসেই তিনি উপস্থাপন করবেন বলে জানান।
সময়ের আলো/আরএস/