ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নিলামে ৮ স্কুল পৌনে দুই লাখে বিক্রি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৮:৩১ পিএম আপডেট: ০৬.০২.২০২৪ ৮:৩৪ পিএম  (ভিজিট : ৭৩৭)
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন স্কুল ভবন মাত্র ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। যা বাস্তবে বাজার মূল্য থেকে অনেক কম। সরকারি নিলামের পরে ওই নিলাম কারীদের মধ্যে আবার ফিরতি নিলামে ভবনগুলো ক্রয় মূল্য থেকে বহু গুণ বেশি দামে বিক্রয় হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। একটি মহলকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য নিলাম কমিটি ভবনগুলোর ভিত্তি মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রির জন্য নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রকাশ্য নিলামে ওই ভবনগুলো বিক্রি করা হয়। সে সময় নিলাম কমিটির সভাপতি ও ইউএনও রাবেয়া আক্তার, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন, উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

নিলামে রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছয়গড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুরপুর ক্যাপ্টেন মাহবুব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটামাথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন বিক্রি করা হয়। ৯২ জন ডাককারী নিলামে অংশ নেয়। ৮টি ভবনের ভিত্তি মূল্য নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৬৮ হাজার ১১৬ টাকা। ভিত্তি মূল্যের চেয়ে মাত্র আটশ থেকে তিন হাজার টাকা বেশি মূল্যে এসব ভবন বিক্রি করা হয়। নয় হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩৩ হাজার টাকার মধ্যে এসব ভবন বিক্রি করা হয়।  

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, একটি সিন্ডিকেট নিলাম কমিটিকে ম্যানেজ করে কম দামে স্কুল ভবনগুলো নিলামের মাধ্যমে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে তারা নিজেদের মধ্যে ‘ফিরতি নিলাম’ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট। একটি সূত্র জানায়, ফিরতি নিলামে একটি ভবন ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হয়।

সরজমিনে নয়াদিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও বারান্দাসহ ২৬ ফুট প্রস্থ দু’চালা টিনসেডের পাকা ভবন। ভবনটিতে ৫টি শ্রেণি কক্ষ। কাঠের ৫টি দরজা, ১৪টি জানালা রয়েছে। বারান্দায় টিনের চালা। বাড়ান্দার টিনগুলো এখনও নতুন রয়েছে। এ ভবনটি ৩০ হাজার টাকায় নিলামে কিনেছেন ওই বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আনিছুর রহমান।

স্থানীয় বাসিন্দা সুহেল মিয়া বলেন, দরজা-জানালাগুলোই তো এর চেয়ে (৩০ হাজার) বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। তিনি বলেন, সিন্ডিকেট হয়ে গেছে।

মোগড়া ইউনিয়নের জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও বারান্দাসহ ২৬ ফুট প্রস্থ। একতলা ছাদের ভবনটিতে ৪টি শ্রেণি কক্ষ। লোহার ৪টি দরজা ও ১৬টি জানালা রয়েছে। এই ভবনটি যথেষ্ট ভালো। এটি ২৮ হাজার ৫০০ টাকা নিলাম দেওয়া হয়েছে।

স্কুলের সামনে জাঙ্গাল গ্রামের বাসিন্দা স্বপন মিয়া দাম শুনে তিনি অবাক ভঙ্গিতে বলেন, ‘দামটা অনেক কম হয়েছে।’

রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের কিছু অংশসহ টিনসেডের পুরাতন ২টি ভবন ৩৩ হাজার টাকায় নিলাম দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ ফুট লম্বা টিনসেডের ভবনটি মাত্র ৯ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

জাঙ্গাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনার কলি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মূল্য নির্ধারণ করেছে উনারা ভালো বলতে পারবে। মূল্য নির্ধারণে আমার মতামত নেওয়া হয়নি। তবে দামটা কম হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন জানান, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। নিলাম হওয়া বিদ্যালয় ভবনগুলো সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নেই। উপজেলা প্রকৌশলী মূল্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন ঠিকাদার বলেন, খুব কম দামে স্কুলভবন বিক্রি করা হয়েছে। পরবর্তীতে ওই ভবনগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল  ইসলাম সুমন জানান, নিলাম ডাকের নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। ভবনগুলো মাপজোক করে রেইট শিডিউল অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায়ও এভাবেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নিলাম ডাক কমিটির সভাপতি রাবেয়া আক্তার বলেন, যারা টেকনিক্যাল লোক তারা মূল্য নির্ধারণ করেছে। ভিত্তি মূল্যের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করা হয়েছে। ভিত্তি মূল্যের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, নিলাম কমিটি একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মূল্য নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখেছি। মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় কোন ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা সেটা দেখব।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  নিলামে স্কুল ভবন   পানির দামে বিক্রি   ব্রাহ্মণবাড়িয়া   আখাউড়া  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close