ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বিশেষজ্ঞদের অভিমত
মিয়ানমার সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধে কঠোর হতে হবে
প্রকাশ: সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৪:১৬ এএম  (ভিজিট : ৬৪৪)
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী এবং বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে (বাংলাদেশ অংশে) বসবাসরত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, সর্বমোট অর্ধশতাধিক বিজিপির (মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী) সদস্য সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার বলেন, এ বিষয়ে চীনের সহায়তা প্রত্যাশা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারের সংঘাতের উত্তাপ যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধে কঠোর হতে হবে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির গোলাগুলির ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এমন অবস্থায় নিজেদের স্বার্থ ঠিক রাখতে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর গভীর নজর রেখেছে। বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সীমান্তে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক রয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ একাধিক চ্যানেলে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। চীন বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে বেইজিং নেপিডোর দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের নেপিডো এবং সিটওয়েতে বাংলাদেশের দুইটি মিশন রয়েছে। ওই মিশন দুইটি থেকেও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা ইস্যুতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কাউকেই কিছু জানান হয়নি।

সীমান্তের চলমান পরিস্থিতিতে ঢাকা মনে করে যে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে যে গোলা ছোড়া হচ্ছে তা বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে নয়। দেশটির অভ্যন্তরীণ উত্তেজনাতেই গোলা এসে সীমান্তের এপারে (বাংলাদেশ অংশে) আসছে। ঢাকার কূটনীতিকরা আশা করছেন যে শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রোববার ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে সেতুমন্ত্রী সীমান্তে চলমান ঘটনায় চীনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। এর আগে, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের জানিয়েছেন যে চীন রাখাইনে অস্ত্রবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। চীন আশা করছে যে রাখাইনে অস্ত্রবিরতি হলে তা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনা পুনরায় শুরুর পথ সুগম করবে এবং তা সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রোববার সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে চীনের সহায়তা প্রত্যাশা করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না, যুদ্ধ চাইও না। তার মানে এই নয় যে, আমাদের গায়ের ওপর পড়ে যাবে, আমরা ছেড়ে দেব, সেটা নয়। আমরা সবসময় তৈরি আছি। আমাদের বিজিবি, ওখানে শক্তি বৃদ্ধি করেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে বলে দিয়েছি, আমাদের কোস্ট গার্ডকে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি যেন কোনোভাবেই আমাদের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ না করতে পারে।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের এক জায়গায় রাখা হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে (বিজিবি) মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন যেন তারা (মিয়ানমার) এদেরকে নিয়ে যায়।

আরাকানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আরাকান আর্মি নামে এক বিদ্রোহী গ্রুপ রাখাইন সাম্রাজ্যের একের পর এক জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ক্রমাগত তারা শক্তিশালী হয়ে আরও সামনের দিকে যাচ্ছে। সেখানে আর্মির (মিয়ানমারের) সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। তাদের একের পর এক ঘাঁটিগুলো আরকান আর্মি দখল করে নিচ্ছে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তাদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। তাদের যুদ্ধ বন্ধে আমাদের কিছুই করা নেই। মিয়ানমারে যে দুটি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে তারা উভয়েই চীনের ক্লায়েন্ট। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ হচ্ছে যে তাদের (মিয়ানমার) ওখান থেকে যেন আমাদের এখানে আর কেউ ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। কেননা বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জায়গা নেই। আমাদের সীমান্তকে কঠোরভাবে প্রটেক্ট করতে হবে। সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রশিদ দৈনিক সময়ের আলোকে বলেন, প্রতিবেশী অঞ্চলে সংঘাত হলে স্পিলওভার ইফেক্ট আসবেই। তাই সীমান্তের ঘটনা স্বাভাবিক। তবে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে যে তাদের ছোড়া গুলি আমাদের নাগরিকদের ক্ষতি করছে। মিয়ানমারের উত্তেজনা থেকে যেন আমাদের দেশে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে। সীমান্তে নিরাপত্তা আরও জোরদার করার পাশাপাশি চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গা ইস্যুও রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় চীন আমাদের কতটুকু সহযোগিতা করতে পারবে সন্দেহ আছে। মূলত আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close