ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

একটি কুঁড়ি দুটি পাতার জীবনগাথা
প্রকাশ: শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ২:২৮ এএম  (ভিজিট : ৫৯৮)
একটি চা গাছ কতদিন বাঁচে? এ প্রশ্ন জাগতেই পারে আমাদের মনে। চা গাছ তো আর অমর বৃক্ষ নয়, যে আজীবন মাটি আঁকড়ে ধরে বেঁচে থেকে তাৎক্ষণিক উদ্দীপ্ত হওয়ার জন্য মানুষের মুখে পানীয়ের জোগান দেবে। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে চা গাছও একদিন মরে যায়। তবে সে মৃত্যু কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’। কিছুটা দুঃখবোধ থেকেই যায় তার পাতা, ডালপালা আর ফুলের হাহাকারের মধ্যে, যা কেউ কখনো দেখে না। বোঝে না। বয়সের একটা সীমারেখা পেরোলেই নতুন বাগান করার প্রয়োজনে বয়স্ক চা গাছকে মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হয়! এটাই চা উৎপাদনের চিরাচরিত নিয়ম। 

বাংলাদেশের মানুষের মতোই আয়ুষ্কাল চা বৃক্ষের। এ দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর, চা গাছেরও প্রায় তাই। অন্যদিকে পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে দিনরাত চুমকে চুমকে তৃপ্তি বিলিয়ে যাওয়া চায়ের চাহিদা কালের পরিক্রমায় ঊর্ধ্বমুখী। তাই উৎপাদনও থেমে নেই ‘ক্যামেলিয়া সিনেনসিস’ বৈজ্ঞানিক নামের এ বৃক্ষের। উৎপাদনে অক্ষম চায়ের গাছ উপড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে চলে নতুন চারা রোপণের আয়োজন। সত্তর বছর পর্যন্ত উৎপাদনশীলতার দীর্ঘ টার্গেট নিয়ে মাটিতে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে একেকটি শিশু চা গাছ। মাটির বুক থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার শারীরিক শক্তি অর্জন করে সে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীমঙ্গলের একটি চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে রোপণ করা শিশু চা গাছগুলো সজিবতা ছড়াচ্ছে। সারিবদ্ধ চা গাছের দলগত অবস্থান সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে টিলাজুড়ে। পাশাপাশি রয়েছে পুরোনো চা বাগানও। সেকশন (চা আবাদের সুনির্দিষ্ট এলাকা) ঘিরে এ যেন পুরোনো আর নতুন চা বৃক্ষের দারুণ এক মেলবন্ধন। চা বাগানের মেঠোপথ দিয়ে হেঁটে গেলেই চোখে পড়ে ডানদিকে আর বামদিকে তাদের সম্মিলিত বয়সভিত্তিক উপস্থিতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, আবাদ করা এ নতুন চা গাছ বিটি-২ জাতের। বিটি-২ উচ্চ ফলনশীল জাতের (ক্লোন) চা গাছ। টেকশই এবং গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনের লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপযুক্ত অভিযোজন কৌশল উন্নয়নের আওতায় এ প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

নতুন ‘প্লান্টেশন’ অর্থাৎ নতুন আবাদ প্রসঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশি চা সংসদ (বিটিএস) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র টি-প্লান্টার জিএম শিবলির সঙ্গে। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, চা গাছের সব পাতা চা উৎপাদনে কাজে লাগে না। কোয়ালিটি চায়ের জন্য শুধু ‘দুটি পাতা এবং একটি কুঁঁড়ি’ই উত্তোলন করা হয়। আর একেকটি চা গাছে এ দুটি পাতা একটি কুঁঁড়ির সবচেয়ে ভালো মান অক্ষুণ্ন থাকে প্রায় ৭০ বছর পর্যন্ত। তারপর চা গাছ তুলে ফেলে সেখানে নতুন করে প্লান্টেশন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, নতুন রোপণ করা চা চারাকে আমরা ‘ইয়াং-টি’ বলে থাকি। এসব চারাগাছ কলম থেকে উৎপন্ন করা। সেগুলোকে ইরিগেশনের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সেচ দেওয়া হচ্ছে যাতে ইয়াং-টিগুলো পানিশূন্যতায় না পড়ে। গৃহপালিত পশুর আক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আবাদিভূমির চারদিকে বেড়া দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও মাটির প্রয়োজনীয় সার, পুষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নিতে হয়।

রোপণের প্রায় ৬ মাসের পর থেকে এ ইয়াং-টির পাতাগুলো ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে (চা প্রক্রিয়াজাতকরণ) যাবে বলে জানান জিএম শিবলি।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close