বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে আয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বাড়তিই থাকছে। আয়ের বিপরীতে ব্যয় কত দিনে কমবে তা নিশ্চিত হতে পারছেন না খোদ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীরা। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ব্যয়ের সঙ্গে আয় সমান হতে আরও সময় লাগবে বলে জানান তারা। টানেলে কর্মরত সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারাও বলছেন, পরিচালন ব্যয় এখনও অনেক বেশি। তবে তাদের দাবি, ব্যয়ের তুলনায় আয় কম হলেও একসময় পরিচালন ব্যয় কমবে। বাড়বে টোল খাত থেকে আয়। ওই সময় পর্যন্ত পৌঁছতে আরও সময় লাগতে পারে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস সময়ের আলোকে বলেন, আয়ের চেয়ে এখনও পরিচালন ব্যয় বেশি। তবে সেটা হয়তো দীর্ঘ সময় থাকবে না। একসময় পরিচালন ব্যয় হবে আয়ের চেয়ে কম। টোল আদায় থেকে লাভই হবে। তবে এটা কত দিন পর হতে পারে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের ২৯ অক্টোবর টানেলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১ মাসে টানেল থেকে টোল আদায় হয় ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ সময় টানেলে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় হয় ৭১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অপরদিকে চালু হওয়ার পর গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসে টানেলে যানবাহনের টোলবাবদ মোট আয় হয় ১২ কোটি ৪৯ লাখ ২৩ হাজার ১৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রথম মাসের তুলনায় টোলবাবদ পরবর্তী ২ মাস ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে আয় আরও কমে যায়।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওমর ইমাম বলেন, টোল আদায়ের বর্তমান পদ্ধতি আরও আধুনিক করতে হবে। তখন বোঝা যাবে আসলে টোল কত আদায় হচ্ছে। বিপরীতে ব্যয়ের হিসাবটাও তখনই যথার্থ হবে। তবে আমি মনে করি, টানেলের সঙ্গে সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন হওয়ার পাশাপাশি চলাচল বাড়লে আয় বাড়বে। তখন পরিচালন ব্যয়টা মুখ্য থাকবে না। আয়ের খাত বড় হবে।
টানেল প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ সময়ের আলোকে বলেন, টানেলে যানবাহন চলছে। গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। টানেলে টোল খাত থেকেই আয় হবে। এ ছাড়া আয়ের অন্য কোনো খাত নেই। তবে এখনো পরিচালন খাতে ব্যয় বেশি।
কর্ণফুলী টানেল সাইট কার্যালয়ে কর্মরত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্টাফদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ সব খাত হিসাব করে নির্ধারণ হয় পরিচালন ব্যয়। আয়ের সঙ্গে হিসাব করলে পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। তবে ইকোনমিক জোন সৃষ্টি হলে, শিল্পায়ন বাড়লে গাড়ির চলাচলও বাড়বে। তখন হয়তো পরিচালন খাতে ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি হবে। আমার মনে হয় সেই সময়ের জন্য বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।
এক মাসে ৭০ কোটি টাকা পরিচালনা ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো ১ মাসে হয়তো এত ব্যয় হয়েছে। এখন এত অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। আগের চেয়ে পরিচালন ব্যয় অনেক কমেছে। টানেলের ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন বলেন, ধীরে হলেও টানেল থেকে আয় বাড়ছে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানেলে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ১৫০ টাকা। পরিচালন ব্যয় কত হয়েছে-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সেই হিসাব আমার কাছে নেই।
টানেল পারাপারে বর্তমানে যানবাহনভেদে পৃথক হারে টোল আদায় হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাইভেট কারের টোল ২০০, মাইক্রো বাস ২৫০ টাকা। ৩১ বা তার চেয়ে কম আসনের বাসের টোল ৩০০ টাকা। এর চেয়ে বেশি আসনের বাসের জন্য ৪০০ টাকা। তিন এক্সেলের বাসের জন্য ৫০০ টাকা। পাঁচ টন পর্যন্ত ট্রাকের টোল ৪০০ টাকা। পাঁচ থেকে আট টন পর্যন্ত ট্রাকের টোল ৫০০, আট থেকে ১১ টন পর্যন্ত ট্রাকের টোল ৬০০ টাকা। পাশাপাশি তিন এক্সেলের ট্রাক-ট্রেইলারের টোল ৮০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রাক-ট্রেইলারে টোল ১ হাজার টাকা। চার এক্সেলের বেশি হলে এক্সেলপ্রতি আরও ২০০ টাকা বেশি টোল দিতে হয়।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ আর্থিক সহায়তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ অক্টোবর টানেল উদ্বোধন করেন। পরদিন ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয় যানবাহন চলাচল। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এ টানেল কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সময়ের আলো/আরএস/