মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে গোলাগুলি, হালকা ও ভারি অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের শব্দে কম্পিত হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, বাইশফারি, ফাত্রাঝিরি, রেজু আমতলি, গর্জন বনিয়াসহ সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলো। এতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফাটল ধরেছে মাটি দিয়ে তৈরি ঘরের দেয়াল। মাঝে মাঝে গুলি ও খোসা এসে পড়েছে স্থানীয়দের বসত ঘরে। ফলে কোনো কাজেও বের হচ্ছে না মানুষ।
জানা যায়, ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর স্থানীয় কৃষকদের বেশীরভাগ ফসলা জমি সীমান্ত লাগোয়া। সংঘাতটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ হলেও দুপক্ষের ছোঁড়া গুলি ও খোসা মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানীয়দের বসতবাড়ি ও ধানি জমিতে এসে পড়ছে। সীমান্তের খুব কাছাকাছি মিয়ানমার জান্তা বাহিনী হেলিকপ্টার টহল দিচ্ছে। তাতে ভয়ে-আতঙ্কে সীমান্ত লাগোয়া জমিতে চাষাবাদের কাজে যেতে ভয় পাচ্ছে তুমব্রু এলাকার স্থানীয় কৃষকরা।
বান্দরবান জেলার প্রায় ৪৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে ঘুমধুমের সঙ্গে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমানা ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি। এই ইউনিয়নের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।
এই সীমান্তেই এক মাসের বেশি সময় ধরে গোলাগুলি হচ্ছে, মর্টার শেল থেকে গোলা ছোড়া হচ্ছে। পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকেও ছোড়া হচ্ছে গুলি। সব মিলিয়ে ঘুমধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, দোছড়ি ও বাইশারী ইউনিয়নের অন্তত ২২ হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে তুমব্রু বাজার ও আশপাশের এলাকার মানুষ। ৩৩-৩২ নম্বর পিলার এলাকার মানুষের চাষাবাদ এখন পুরোপুরি বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা। জন মানবহীন হয়ে পড়েছে বাজারগুলো। দোকানে তেমন বেচা বিক্রি নেই। তাই অনেকেই বন্ধ রেখেছেন দোকানপাট। কখন যেন উড়ে এসে পড়ে গোলা- এমন আতঙ্ক সর্বত্র।
তুমব্রুর স্থানীয় চা দোকানি বশর এ প্রতিবেদককে বলেন, গতরাতেও ৯ বার ভারী গোলার শব্দ ভেসে এসেছে। মানুষ প্রতিদিন এসব শব্দ শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই তেমন সাড়া নেই। তবে স্কুল শিক্ষার্থী বা শিশুরা ভয় পায়।
তিনি আরো জানান, দোকানের বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। মানুষজন তেমন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরপর টহল দিচ্ছে বিজিবি। মানুষকে সতর্ক করছে, যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হামিদুল ইসলাম জানান, গোলা বর্ষণের খবরে বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা এখন আর আসছেন না। ফলে পণ্য সংকটও বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রশাসন থেকে বার বার জানানো হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
প্রায় এক মাস ধরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল, গোলাগুলিসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষ দিন কাটাচ্ছে আতঙ্কে।
বেশ কয়েকবার মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া মর্টার শেল বাংলাদেশের ভূখণ্ডেও এসে পড়েছে।
গত ২৮ জানুয়ারি সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমান্তের খুব কাছাকাছি সেনাবাহিনীর ৪টি হেলিকপ্টার চক্কর দিতে দেখা যায়।
এদিকে চলমান সংঘর্ষের মাঝে গতকাল (বুধবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিয়ানমারের ভিতর থেকে আকস্মিক একটি মর্টার শেলের খোল এসে পড়েছে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু পশ্চিমকুলের স্থানীয় বাসিন্দা বাহাদুল্লাহ'র বসতবাড়ির উঠানে। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, সংঘর্ষ যেহেতু সীমান্তের কাছাকাছি তাই পরিষদের পক্ষ থেকে স্থানীয়দের সীমান্তের কাছাকাছি না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
সময়ের আলো/আরআই