প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ৪:৩২ এএম (ভিজিট : ৫০৮)
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিএনপিবিহীন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। পশ্চিমা দেশের চাপের কাছে মাথা নত না করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন বন্ধ না করে এগিয়ে যান। নির্বাচনের তিন দিন পর ১০ জানুয়ারি নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। নির্বাচনের আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র এ নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছিল এবং এ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও চিন্তা করছিল। কিন্তু সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করার ব্যাপারে ছিল বদ্ধপরিকর। তাই বলা চলে নানা সমীকরণে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।
এখন আলোচ্য বিষয় হলো সামনের সময়ে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকারের? এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাবে? ইতিমধ্যে দেশ উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে রয়েছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যেসব বড় বড় প্রকল্প বিদেশিদের সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে সেগুলো পড়তে পারে চ্যালেঞ্জের মুখে। একদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি অন্যদিকে বহিঃবিশে^র নানামুখী চাপ। এ ছাড়াও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে বিদেশি প্রভূদের সন্তুষ্ট রাখা বড় কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনে হয়। তবে এ কথা মানতে হবে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন চাপ মাথায় নিয়েই বলা চলে একহাতে সামলে যাচ্ছেন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে নতুন-পুরোনো সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে মন্ত্রিসভা।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে যারা সমালোচিত হয়েছেন তাদের বাদ রাখা হয়েছে এবারের মন্ত্রিসভায়। বিশিষ্টজনদের মতে, এবারের মন্ত্রিসভা তুলনামূলকভাবে অনেক স্মার্ট হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও এর প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের কার্যক্রমে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কূটনীতিতে অস্বস্তি কাটানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সামনের সময়গুলোতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের পথ খুঁজবে, যেহেতু তাদের কথামতো নির্বাচন করা হয়নি। বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাধা তৈরি করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য থাকবে দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করা।
সে জন্য তারা বিরোধীদলীয় শক্তিকে ব্যবহার করতে চাইবে আর যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসেনি তাই তারা চাইবে যেকোনো মূল্যে দেশের সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে এ কারণে অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে সরকার। সংসদেও বিরাজ করতে পারে অশান্তি। কারণ বিরোধী দল হিসেবে জাপা তাদের নিজেদের দল ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, এর প্রভাব পড়তে পারে সংসদেও।
অন্যদিকে বিএনপিকে ভবিষ্যতে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে হবে। তাদের এটি মনে রাখতে হবে যে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করতে হবে। আমাদের দেশে কোনো সরকারের আমলেই বিরোধীদের রাজনীতি করা সহজ ছিল না। কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই সামনে এগোতে হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীর ওপর হামলা-মামলা কোনো সময়ই কম ছিল না। তাই রাজনীতি হতে হবে দেশের জনগণের সঙ্গে ও মাঝে দেশকে বাঁচিয়ে। না হলে হতে হবে দেশবিরোধী।
অন্যদিকে সরকারকে মানুষের আস্থা ধরে রাখার জন্য সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে হবে এবং বিরোধীদেরও রাজনীতি করা সুযোগ দিতে হবে। জনগণ যদি তাদের আস্থার প্রতিদান না পায় তা হলে সুযোগ মতো তারাই মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ যে দলই আন্দোলন করুক তাতে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে আন্দোলনে সফল হওয়া যাবে না। তাই সবক্ষেত্রেই জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রভাষক
আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজ, ময়মনসিংহ
সময়ের আলো/আরএস/