ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কৃষি খাতে শীতের বিরূপ প্রভাব
মরে যাচ্ছে আলু-ইরি-বোরোর চারা
প্রকাশ: শনিবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪, ৩:০৫ এএম  (ভিজিট : ৬০৪)
গত কয়েক দিন ধরে কনকনে শীতে কাঁপছে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ। তীব্র শীতে জবুথবু প্রাণ-প্রকৃতি। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত নানা রোগে। শীতের প্রভাবে ভোগান্তিতে পড়েছেন আদমদীঘির খামারি ও প্রান্তিক কৃষকরা। কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিন স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তীব্র শীতের কারণে আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আলু, টমেটো, সরিষা, ইরি-বোরোর বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে আলু ক্ষেতে ব্যাপক হারে লেটব্লাইট বা আলুর মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এই রোগের কারণে পাতায় কালো কালো ফোসকা পড়ে মরে যাচ্ছে তরতাজা সবুজ গাছ। এ রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন আলু চাষিরা। তারা বলছেন, এমনটি ঘটলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী বলেন, কোল্ড ইনজুরির কারণে আলু এবং ইরি-বোরোর চারায় মড়ক ধরেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করে কোনো ফল পাওয়া যাবে না। আবহাওয়া পরিবর্তন হলে প্রাকৃতিকভাবেই এ সমস্যা দূর হবে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫০০ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ হাজার টন বেশি। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ইরি-বোরো বীজ বপন করা হয়েছে প্রায় এক মাস আগে। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের প্রভাবে ব্যাপক হারে চারায় মড়ক ধরেছে। বোরোর চারা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষক ও কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যখন আলুর গাছ সবুজ রং ধারণ করে সজীব হয়ে উঠেছে ঠিক সেই মুহূর্তেই কয়েক দিন থেকে ঘন কুয়াশা ও কনকনে তীব্র শীতের সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় আলু ক্ষেতে লেটব্লাইট বা মড়ক রোগ দেখা দিয়েছে। এতে অধিকাংশ কৃষক আলু ক্ষেত রক্ষায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। টানা শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশার প্রভাবে অধিকাংশ আলু ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা রোগাক্রান্ত আলু ক্ষেতে মেটারিল, মেটাটাফ ও ফোরাম বালাইনাশক সমন্বিতভাবে স্প্রে করার সাত দিন পর স্প্রে করেছেন রিভাস নামের কীটনাশক। তবে অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ক্ষেতে বালাইনাশক স্প্রে করেও সুফল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে উত্তরের অন্যান্য জেলার মতো আদমদীঘি উপজেলার চাষিরাও আগাম জাতের আমন ধান কেটে শুরু করেন আলুর চাষ। মৌসুমের শুরুতেই আলু বীজের চরম সংকট দেখা দিলেও চাষিরা বিভিন্ন উপায়ে চড়া দামে বীজ সংগ্রহ করে আলু রোপণ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই সবুজে ভরে ওঠে আলু ক্ষেত। চাষিরাও বুক বাঁধেন বাম্পার ফলনের আশায়। কিন্তু প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে সবুজ আলু ক্ষেত ছাড়াও ইরি-বোরোর বীজতলা বিবর্ণ হতে শুরু করে। এদিকে আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষে ইরি-বোরো আবাদের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। উপজেলায় এবার ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ইরি-বোরো বীজ বপন করা হয়েছে প্রায় এক মাস আগে।

এদিকে কনকনে শীতে সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষদের দিন কাটছে অতি কষ্টে। শীত নিবারণের জন্য নিম্ন আয়ের মানুষরা ভিড় করছেন পুরোনো কাপড়ের দোকানে। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনালসহ বস্তি এলাকার মানুষ অতি কষ্টে দিন পার করছেন। এলাকার কিছু বিত্তশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান উপজেলার সান্তাহার জংশন স্টেশনে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সান্তাহার রেলস্টেশনে কথা হয় ছিন্নমূল বৃদ্ধ ভিক্ষুক কলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি দিনের বেলা ভিক্ষা বৃত্তি করে রাত কাটান সান্তাহার স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। স্থানীয় ভাষায় তিনি বললেন, আল্লাহ ছাড়া দুনিয়াতে মোর কেহ নাই বারে। দিন তো ভালোই কাটে, রাত আইলেই মোর শরীরে শুরু হয় কাঁপুনি। গেল বার এক সাহেব একখানা কম্বল মোক দিছিল। শীত চলি যাওনের পর থোওনের জায়গা পাইনি। পরে হেইডা বেইচ্যা একখান লুঙ্গি কিনছিনু। এবার এহনও কোনো সাহেব কম্বল নিয়ে আহেনি।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close