অ্যামি এবং আনো যমজ বোন। তাদের জন্মের ঠিক পরেই তাদের মায়ের কাছ থেকে নিয়ে পৃথক পরিবারে বিক্রি করা হয়েছিল। অনেক বছর পর, একটি টিভি শো ও একটি টিকটক ভিডিওর জন্য ঘটনাক্রমে তারা একে অপরকে খুঁজে পেয়েছে। দীর্ঘ যাত্রা শেষে অ্যামি আনো একে অন্যকে খুঁজে পাওয়ার পর তারা তাদের জন্মদাত্রী মাকেও খুঁজে বের করে।
যমজ বোন দুই বোন একে অন্যকে খুঁজে পাওয়ার পর প্রায় দুই বছর নাগাদ তারা তাদের জীবনের অতীতের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে নামে। ভুক্তভোগী দুই বোন যখন অতীতে ফির যায়, তখন তারা বুঝতে পারে জর্জিয়ার হাজার হাজার শিশুর মধ্যে তারা রয়েছে যাদের হাসপাতাল থেকে চুরি করে বিক্রি করা হয়েছিল।
দুইজনের ১২ বছর বয়স থেকেই তারা একে অন্যকে খোঁজার শুরু করে। অ্যামি খভিতিয়া কৃষ্ণ সাগরের কাছে দাদির বাড়িতে তার প্রিয় টিভি প্রোগ্রাম ‘জর্জিয়াস গট ট্যালেন্টে’ দেখতো। ওই শো’তে অ্যামির মতই দেখতে আরেক কিশোরী নাচের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতো।
অ্যামি বলেন, ‘ওই টিভি শো দেখে সবাই আমার মাকে বলতো, আমি কেন অন্য নামে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি।’ সে তার পরিবারের কাছে এ বিষয়গুলো বললে তারা তেমন গুরুত্ব দিতনা। পরিবারের সদস্যরা অ্যামির কথা উড়িয়ে দিত। এ বিষয়ে তার মা তাকে বলতো, ‘প্রত্যেক মানুষেরই যমজ রয়েছে।’
এ ঘটনার ৭ বছর পর ২১ নভেম্বর অ্যামি তার নিজের একটি ভিডিও টিকটকে শেয়ার করে। কৃষ্ণ সাগর থেকে প্রায় ২০০ মাইল দূরে তিবলিসিতে বাস করা আরেক ১৯ বছর বয়সী তরুণী আনো সারতানিয়াকে অ্যামির ভিডিও পাঠিয়েছিল তার এক বন্ধু। অ্যামির ভিডিও দেখে আনো তাকে অনলাইনে খুঁজতে থাকে। তবে পায়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুফে অ্যামির ভিডিও শেয়ার করে তাকে খুঁজতে থাকে আনো। অ্যামিকে চিনেন এমন একজন ভিডিওটি দেখে ফেসবুকের মাধ্যমে দুই তরুণীকে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
আনোর সঙ্গে যোগাযোগ করেই চিনতে পারে অ্যামি। ‘জর্জিয়াস গট ট্যালেন্টে’ তার নাচ দেখেছিল অ্যামি। অ্যামি আনোকে বলে, ‘তোমাকে আমি অনেক দিন ধরেই খুঁজছি।’ উত্তরে আনোও বলে, ‘আমিও তোমাকে খুঁজছি।’
এর কিছুদিন পর তারা তাদের মধ্যে অনেক মিল খুঁজে পেল। তারা দুইজনই কীর্তসখি ম্যাটারনিটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছে। তবে জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী, তাদের জন্ম তারিখ কয়েক সপ্তাহ আগে-পরে। সে হিসেবে তার দুই বোন বা যমজ বোন হতে পারেনা। কিন্তু তারা একই সংগীত পছন্দ করতো, দুইজনই নাচতে খুব ভালোবাসে। দুইজনের চুলের কাটিংও একই। জন্মগতভাবে দুইজনের ডিসপ্লাসিয়া নামক একটি হাড়ের ব্যাধি রয়েছে।
তাদের মনে হচ্ছিল তারা একসঙ্গে এক রহস্য উন্মোচন করছে। ‘যখনই আমি আনো সম্পর্কে নতুন কিছু জানছি, বিষয়গুলো অদ্ভুত হয়ে উঠেছে,’ অ্যামি বলে।
ফেসবুকে পরিচয়ের এক সপ্তাহ পর সরাসরি দেখা করতে অ্যামি যখন তিবলিসির রুস্তাভেলি মেট্রো স্টেশনে লিপ্টের উপরে পৌঁছেছিল, তখন সে এবং আনো প্রথমবারের মতো একে অপরকে সরাসরি দেখেছিল।
‘আয়নায় দেখার মতো দৃশ্য ছিল, অবিকল একই মুখ, অবিকল একই কণ্ঠস্বর। আমি তার এবং সে আম’, অ্যামি বলেন। তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তারা যমজ। আনো বলেন, ‘আমি আলিঙ্গন পছন্দ করি না, তবে আমি তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।’
তারা তাদের পরিবারের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং প্রথমবারের মতো তারা সত্যটি শিখেছিল। ২০০২ সালে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তাদের আলাদাভাবে দত্তক নেওয়া হয়েছিল।
অ্যামি বিচলিত হয়েছিল এবং অনুভব করেছিল যে তার পুরো জীবনটি মিথ্যা ছিল। তিনি বলেন, কিন্তু এটা সত্যি। আনো বলেন, আমার পরিবারের উপর রাগান্বিত এবং বিরক্ত হয়েছিলাম, তবে আমি কেবল চেয়েছিলাম যে কঠিন কথোপকথনটি শেষ হোক যাতে আমরা সবাই এগিয়ে যেতে পারি।
আরও গভীরে গিয়ে যমজ দুই বোন দেখতে পায় তাদের জন্মের তারিখসহ তাদের অফিসিয়াল বার্থ সার্টিফিকেটে বিস্তারিত তথ্য ভুল ছিল।
সন্তান জন্ম দিতে না পেরে অ্যামির মা জানান, তার এক বন্ধু তাকে বলেন, স্থানীয় হাসপাতালে একটি অবাঞ্ছিত শিশু আছে। তাকে ডাক্তারদের টাকা দিতে হবে তবে তিনি তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন এবং তাকে নিজের মতো করে বড় করতে পারেন। আনো মাও একই গল্প বলেন।
পরবর্তীতে অ্যামি তাদের জন্মদাত্রী মাকে খুঁজে বের করতে চেয়েছিল, কিন্তু আনো চায়নি। তার প্রশ্ন, ‘কেন সেই ব্যক্তির সাথে দেখা করবো যিনি আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন?
অ্যামি জর্জিয়ার পরিবারগুলোকে পুনরায় একত্রিত করার জন্য একটি ফেসবুক গ্রুপ খুঁজে পান। সেখানে তাদের ঘটনার একটি পোস্ট শেয়ার করে অ্যামি। ওই পোস্টের কমেন্টে জার্মানির এক তরুণী জানায়, তার মা ২০০২ সালে কির্ৎসখি ম্যাটারনিটি হাসপাতালে যমজ কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এবং তাদের মারা যাওয়ার কথা বলা হয় তখন। এখন তার কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। পরে ডিএনএ পরীক্ষায় জানা যায়, ফেসবুক গ্রুপের মেয়েটি তাদের বোন এবং জার্মানিতে তাদের জন্মদাত্রী মা আজার সঙ্গে বসবাস করছিল।
অ্যামি আজার সাথে দেখা করার জন্য মরিয়া ছিল, তবে আনো ছিল সংশয়ী। তার কথায়, ‘যে আমাদের বিক্রি করে দিয়েছিল, সে কি এখন সত্য কথা বলবে?’ তা সত্ত্বেও তিনি অ্যামিকে সমর্থন করার জন্য জার্মানি যেতে রাজি হন।
অ্যামি এবং আনো জার্মানির লাইপজিগের একটি হোটেলে তাদের জন্মদাত্রী মায়ের সাথে দেখা করে। তাদের তিনজনের যখন দেখা হয়, তখন আজা দুই কন্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, উভয় পাশে একটি করে যমজ। মিনিট খানেক কেটে যায় আলিঙ্গনে, কেউ কথা বলে না।
পরে যমজ দুই বোনকে তাদের মা জানান, সন্তান প্রসবের পর তিনি অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে যান। যখন তিনি জেগে ওঠেন, হাসপাতালের কর্মীরা তাকে বলেছিলেন যে বাচ্চারা জন্মের কিছুক্ষণ পরেই তারা মারা গেছে।
আজা বলেন, অ্যামি এবং আনোর সাথে দেখা করা তার জীবনকে নতুন অর্থ দিয়েছে। ঘনিষ্ঠ না হলেও যোগাযোগ রয়েছে তাদের।
আনো বলেন, আমি সবসময় অনুভব করতাম যে আমার জীবনে কিছু বা কারও অভাব রয়েছে। আমি স্বপ্ন দেখতাম কালো পোশাক পরা একটি ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে, যে আমাকে অনুসরণ করে এবং আমার দিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। সেই অনুভূতি উধাও হয়ে গেল যখন আমি অ্যামিকে খুঁজে পেলাম।
সময়ের আলো/জেডআই