ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

প্রণোদনার বাদামের বীজে বিপাকে কৃষক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৪, ৩:৪৬ এএম  (ভিজিট : ৪৮৬)
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় কৃষি প্রণোদনার নিম্ন মানের বীজ বাদাম রোপণ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। প্রণোদনার বিতরণকৃত ১৫ টন বীজ বাদাম আবাদ করে হাতিয়ার কোথাও এখন পর্যন্ত বাদামের চারা গজায়নি। ইতিমধ্যে ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও দু-চারটি ব্যতীত তেমন কোনো বাদাম বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটেনি। আবাদ মৌসুম শেষ হতে চললেও ভেজাল বীজ বাদাম আতঙ্ক বিরাজ করছে চাষিদের মধ্যে।

উপজেলার শূন্যেরচর গ্রামের কৃষক রাশেদ জানান, কৃষি তালিকাভুক্ত পাশের বাড়ির শাহজাহানের কাছ থেকে তিনি সরকারি বীজ বাদাম কিনে রোপণ করেছেন। অথচ একটা বীজও উঠেনি। আর বাজার থেকে যেগুলো কিনেছেন সেগুলোর চারা গজিয়েছে। তিনি জমিতে রোপণকৃত বাদামের সারিগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে দেখান যে, সবগুলো বাদাম পচে গেছে।

রেহানিয়া গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, আমার একটা হাত নেই, প্রতিবন্ধী মানুষ। ধার করে কাজের লোক খাটিয়ে এক একর ৬০ শতক জমিতে বাদাম চাষ করেছি। সরকারি একটি নাম পেয়েছি। বাকি বীজ কৃষি তালিকাভুক্ত  ইসমাইল এবং রিপনসহ কয়েকজন থেকে বাজার দামের চেয়ে ৪০ টাকা কম দামে কিনেছি। রোপণের ১৬-১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও সরকারি এ বীজ বাদামগুলোর চারা এখনও গজায়নি। অথচ ঘরের বীজ বাদামগুলোর চারা উঠে গেছে এক সপ্তাহ আগে। তিনি বলেন, সরকারি বীজগুলো না উঠায় তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

কৃষকদের এসব অভিযোগে জানা যায়, এবারের প্রণোদনার বীজ বাদাম নিম্ন মানের এবং বিকৃত রঙের। এসব বীজ বাদাম সরকারি বিপুল অর্থ ব্যয় করে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে আশানুরূপ ফলদায়ক না হওয়ায় এতে যেমন সরকারি অর্থের ক্ষতিসাধন হচ্ছে তেমনি কৃষকরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

নলচিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনছুর উল্লা শিবলী জানান, বাদামগুলো নিম্ন মানের ছিল। তাই কৃষি অফিসারসহ আমরা কৃষকদের বলেছি, আপনারা এগুলো বিক্রি করে ভালো বীজ কিনে নেবেন। উপজেলার চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রণোদনার ১.৫ টন বীজ বাদাম ভেজাল এবং বিরূপ রঙের হওয়ায় তা গ্রহণ করেননি। যদিও বাকি দশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালিকাভুক্তদের মধ্যে উক্ত বাদামগুলো বণ্টন করে দেয়। চরঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আজাদ বলেন, আমি সেই বীজ ফেরত দেওয়ার পর ২৩ জানুয়ারি আমার ইউনিয়নের জন্য নতুন বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। দ্রুত তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল বাছেদ সবুজ মুঠোফোনে জানান, বীজগুলো নিয়ে প্রথম থেকেই একটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে আট ধরনের বীজ দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে বাদাম বীজ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। কেননা মানঘোষিত বীজে যে গঠন থাকার কথা, সেটি ছিল না। বাদাম বীজের রং ভালো ছিল না। যে কারণে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানরা এসব বীজ গ্রহণ করলেও ৫ নং চরঈশ^র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তা গ্রহণ করেননি। চেয়ারম্যানের তীব্র আপত্তির মুখে বাদামগুলো পরিবর্তন করে দিতে বিএডিসি বাধ্য হয়েছে।

গত বছরও বাদাম বীজ অঙ্কুরোদগম না হওয়ার পরেও এবারও কেন একই ধরনের বীজ বিতরণের জন্য দেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে কৃষি অফিসার বলেন, বিএডিসি থেকে বলা হয়েছে সাধারণভাবে বীজগুলো কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করার ১৫ দিনের মধ্যে রোপণ করার নির্দেশনা থাকলেও তা আমাদের সে সময় অবহিত করা হয়নি। আমরাও কৃষকদের তা অবহিত করতে পারিনি। তবে এ বছর সব নির্দেশনা বিতরণকালে কৃষকদের বলে দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেন বীজ অঙ্কুরোদগম হয়নি তা আরও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ব্যাখানুযায়ী সরবরাহকৃত মানঘোষিত বীজের ৭০ শতাংশ অবশ্যই অঙ্কুরোদগম হয়। কিন্তু এবারের বীজে শতকরা ৮০ শতাংশ অঙ্কুরোদগম হবে। কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করার ১৫ দিনের মধ্যে মাঠে না লাগাতে পারলে বীজ পানি শোষণ করে অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

কৃষকরা বীজ রোপণের পর ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও বীজ অঙ্কুরোদগম না হওয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন নোয়াখালী জেলার উপ-পরিচালক (বীজ বিপণন) কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, মাঠ পর্যায়ে তীব্র ঠান্ডাজনিত ও ফিজিউলজিক্যাল এক্টিভিটির কারণে অঙ্কুরোদগম হতে আরও বিলম্ব ঘটতে পারে। তবে আমাদের সরবরাহকৃত বীজের জার্মিনেটেড শতকরা হার ৭০ ভাগের ওপরে। ঠান্ডার প্রভাব কমতে শুরু করলেই দেখা যাবে বীজ থেকে গাছ গজাচ্ছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close