‘চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের ১৯৪ একর জমি নিয়ে এ ডিসি পার্ক। একসময় এখানে ছিলো মাদকের আখড়া। আর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং এই অঞ্চলের মানুষের অকৃত্রিম সহযোগিতায় মাদকের আখড়া এখন ফুলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ পার্কটি এখন চট্টগ্রামের মানুষের গৌরবের জায়গা। এ পার্কের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সুনাম দেশ ও দেশের বাইরের মানুষের মাঝে আরো বেশি ছড়িয়ে পরবে।’
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন আয়োজিত চট্টগ্রাম ফুল উৎসব ২০২৪ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এসব কথা বলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছরের বিভিন্ন সময় ফ্লাওয়ার ফেসটিবল হয়। ফেসটিবলকে ঘিরে ঐ শহরে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। সেখানে শুধুমাত্র সে দেশের মানুষ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষও অংশগ্রহণ করে। সুতরাং চট্টগ্রাম ফুল উৎসব শুধু আমার কাছে নয়, বাংলাদেশের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা।
এসময় তিনি আরো বলেন, শুধু ফুল আর দিঘী নয়, এ পার্ককে ঘিরে ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর এটি দেশের অন্যান্য জেলার জন্য হবে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় প্রকল্প। এ প্রকল্পটি আমাদেরকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। এসময় তিনি চট্টগ্রামের ন্যায় উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনা কাজে লাগিয়ে মানুষের মানসিক বিকাশ ও অর্থনীতিক সমৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে সকল জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ জানান। এতে করে আজকের নতুন প্রজন্ম তাদের জীবনকে ফুলের মতন করে গড়ে তোলার সুযোগ পাবে। ফুল যেমন অন্যের জন্য ফোটে, তরুণ সমাজও নিজেদের অন্যের জন্য ফোটাতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, একসময় রাত নামলেই এখানে বসতো মাদকসহ অন্যান্য অসামাজিক কার্যক্রমের আসর। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি এই মাদকের আস্তানাটি উচ্ছেদ করে মোট ১৯৪ একর জমি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নিই। ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ দিনব্যাপী প্রথমবারের মতন ফুল উৎসব আয়োজন করি। সে ফুল উৎসবে ১২২ প্রজাতির ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছিল। আর এ বছর ১২৭ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুল দিয়ে এ পার্কটি সাজানো হয়েছে।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য নতুন প্রজন্মকে প্রকৃতির সাথে যুক্ত করে দেওয়া। সে লক্ষে চট্টগ্রামের ১৯১ টি ইউনিয়নের খাস জমিতে খেলার মাঠ ও কালচারাল সেন্টার করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে ১ শতটি মাঠ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এসময় তিনি বাকি ৯১ টি মাঠ তৈরির কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রকৃতির বর্ণ, গন্ধ ও ছন্দের অনুপ্রেরণায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম ফুল উৎসব ২০২৪ আয়োজন করেছে। এ উৎসব ২৫ জানুয়ারি থেকে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত সর্বসাধাণের জন্য খোলা থাকবে। এবারের ফুল উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে সানসেট পয়েন্ট, মাসব্যাপী আর্ট প্রদর্শনী ও নৌকা বাইচ, স্যুভেনির শপ, ভায়োলিন শপ, ঘুড়ি উৎসব, কিড্স জোন, পিজিওন কর্নার, সেরফি কর্নার, পুতুল নাচ ও ২ থেকে ৯ ফেব্রæয়ারি পিঠা উৎসব এবং ১৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি বই উৎসব।
ফুল উৎসবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে জনপ্রশসান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিচব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে. এম. রফিকুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।
সময়ের আলো/জেডআই