ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ব্রম্মপুত্রের অসময়ে তান্ডব, নদীপাড়ে বসতভিটা হারানোর শঙ্কা
প্রকাশ: শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪, ৯:৫৯ এএম  (ভিজিট : ৩৮৬)
অসময়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে যমুনায়। নদীতে চলে যাচ্ছে তীরবর্তী ফসলি জমি। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বসতবাড়ি। এমন ঘটনা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী এলাকায়। অসময়ে ভাঙনে আবাদি জমি ও বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় বিচলিত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।

​সানন্দবাড়ী দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার একটি প্রসিদ্ধ জনপদ। এ অঞ্চলে রয়েছে বৃহৎ হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। উপজেলা সদর থেকে অন্তত ত্রিশ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সানন্দবাড়ী হাট-বাজার জামালপুর জেলার বৃহৎ হাট-বাজার। সরকার প্রতি বছর এ হাট-বাজার থেকে সর্বাধিক রাজস্ব পেয়ে থাকেন। যমুনা নদীর ভাঙনে এখন সে হাট-বাজার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রম্মপুত্র নদীর পূর্বপাড় ষেঁষে তুমুল স্রোত। মাঝখানে বালিয়াড়ী। পানি কমে যাওয়ায় নদীর বুকে জেগে ওঠেছে ছোট বড় বালুচর। পূর্বপাড়ে তীব্র স্রোত থাকায় ফসলী জমি ভাঙছে অবিরত। বিগত কয়েক বছরের ভাঙনে ইতোমধ্যে নদীর গর্ভে সানন্দবাড়ী সদরের পশ্চিমের কয়েকটি গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। তার মধ্যে মন্ডলপাড়া, মৌলভীরচর মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, বাহির পশ্চিমপাড়া, পাটাধোয়াপাড়া, খোলাবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রাম যমুনার ভাঙনে বিগত সময় বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে অন্তত ২ হাজার পরিবার এবং কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। ফসলি জমি ও ভিটামাটি সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। এক সময় যাদের সব ছিল আজ তারা নিঃস্ব।

জীবন-জীবীকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এক সময়ের জোতজমার মালিক কৃষক আজ হয়েছে ভ্যান-রিক্সা চালক, মুটে-মজুর। অনেকেই অন্যের জমিতে বসতি গড়ে জীবন-যাপন করছেন। তাদের দিন কাটছে মানবেতর। নদীটি প্রতিবছর বর্ষার শুরুতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙতে শুরু করে। কিন্ত এ বছর বর্ষা মৌসুম ছাড়াও অসময়ে শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের পাটাধোয়াপাড়া, মন্ডলপাড়ার একাংশ, মৌলভীরচরের একাংশে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙছে কৃষকদের আবাদি জমি। ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ।

তীব্র শীতে যখন কাঁপছে সারা দেশ তখন সানন্দবাড়ী অঞ্চলের নদী পাড়ের মানুষগুলোর চোখে নেই ঘুম। ভাঙনের আতঙ্কে কাটছে তাদের দিন। তারা চমকে উঠছেন পাড় ভাঙনের শব্দ আর তীব্রতারেতের ছলাৎছলাৎ ধ্বনিতে। অনেকেই ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে ছুটছেন উর্দ্ধতন মহলে। অসময়ে এ অঞ্চলে নদী ভাঙনের খবরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স। পরিদর্শন করে তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। 

সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়ার ময়নাল হক বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে এ অঞ্চলে ব্রম্মপুত্র নদীর তীব্র ভাঙন চলছে। পাটাধোয়াপাড়া গ্রামটি ইতোমধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেই সাথে বিলীন হয়ে গেছে মন্ডলপাড়া, মৌলভীরচর মুন্সিপাড়া, চুনালীপাড়া, চিথুলীয়া, বাহির পশ্চিমপাড়া, পাটাধোয়াপাড়া, খোলাবাড়ীসহ কয়েকটি গ্রাম। গ্রামগুলোর মানুষেরা আজ নিঃস্ব। জীবন-জীবীকার তাগিদে তারা পাড়ি জমিয়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

সানন্দবাড়ী পশ্চিমপাড়ার আপেল মাহমুদ বলেন, এক সময় আমাদের আবাদি জমি, বসতি ভিটা সব ছিল। সর্বনাশা ব্রম্মপুত্রের ভাঙনে সব বিলীন হয়ে গেছে। এখন আমি অন্যের জমিতে ঘর উঠিয়ে দিনাতিপাত করছি। দিন মজুরী করে দিনযাপন করছি। আমাদের দুঃখ যেন এতো দিনেও ঘুচছে না। এ বছর ব্রম্মপুত্র নদী অসময়ে ভাঙন শুরু করেছে। মাথা গুজার শেষ সম্বলটুকুও বুঝি শেষ হয়ে যায়।

মন্ডলপাড়ার পল্লী চিকিৎসক মজিবর রহমান জানান, ব্রম্মপুত্র রাক্ষুসী নদী। প্রতি বছর বর্ষায় পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে এ অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। কিন্তু এ বছর শীত মৌসুমেও এ নদী ভাঙছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে আমাদের। ভিটামাটি হারানোর শঙ্কায় আমরা বিচলিত। জানিনা আমাদের এ দুঃখের শেষ কোথায়? কবে সরকার আমাদের এ অঞ্চলকে ভাঙনের হাত রেখে মুক্তি দেবে।

চুনালীপাড়া আসগর আলীর ভাষ্য, আমাদের বড় দুঃখের কপাল। আগে আমাদের বসতভিটা আবাদী জমি সব ছিল। কিন্তু সর্বনাশা ব্রম্মপুত্র সব কাইড়া নিছে। এক বছরে ব্রম্মপুত্রের তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বসতভিটা আবাদি জমি। এখন আমরা সহায় সম্বলহীন। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে জীবনযাপন করছি। তিনি ব্রম্মপুত্রের ভাঙন থেকে সানন্দবাড়ী অঞ্চলকে রক্ষার কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

কথা হয় চরআমখাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম লাভলুর সাথে। তিনি বলেন, বর্ষা কালে ব্রম্মপুত্রের ভাঙন তীব্র হয়। কিন্ত এ বছর ব্রম্মপুত্র যেমন ভাঙন দেখাচ্ছে, তাতে এলাকাবাসী শঙ্কায় পড়েছেন। দু'এক বছরের মধ্যে সানন্দবাড়ী বিলীন হয়ে যাবে নদীর গর্ভে। বিলীন হবে ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, পুলিশ তদন্তকেন্দ্র, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। তিনি দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।

চরআমখাওয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল ইসলামের ভাষ্য, অসময়ে নদীতে এতো তীব্রতারেত আমি কখনো দেখিনি। তীব্র ভাঙনের ফলে কয়েক বছরেই ব্রম্মপুত্র নদীতে সানন্দবাড়ী অঞ্চলের কয়েকটি বির্ধত গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পাড়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে পাটাধোয়াপাড়া, মন্ডলপাড়া ও মৌলভীরচরের একাংশ। অসময়ে ব্রম্মপুত্র নদীর ভাঙন ওই গ্রামগুলোতে চেপেছে। দ্রুত ভাঙন রোধ না করা হলে ভাঙনের কবলে পড়বে সানন্দবাড়ী সদর। তিনি নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী ও স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে দাবি জানান।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সানন্দবাড়ীর ওই স্থানে নদী ভাঙন রোধে জুরুরী ভাবে ৯০০ মিটার বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে প্রাক প্রতিরক্ষামূলক কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। পাশাপাশি ওই স্থানে স্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোধে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তার জন্য একটি প্রকল্প পাঠিয়েছি। প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। স্থায়ী ভাঙন রোধের এ প্রকল্পটিতে ইটের ব্লক করে স্থায়ী ভাবে ভাঙন রোধ করা হবে।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close