ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

নগরীর ২৪টি খালের মধ্যে খনন হচ্ছে ৭টি
বরিশালে হারিয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড
প্রকাশ: শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪, ৩:৩২ এএম  (ভিজিট : ৫১৪)
অবশেষে দখল-দূষণের কবলে হারিয়ে যাওয়া বরিশাল নগরীর ২৪টি খালের মধ্যে প্রধান ৭টি খালের প্রাণ ফেরাতে খনন কাজ শুরু করেছে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এর ফলে নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া আমানতগঞ্জ, জেলখাল, রূপাতলী খাল, পলাশপুর খাল, সাগরদী খাল, চাঁদমারি খাল এবং ভাটারখাল দীর্ঘদিন পরে হলেও অস্তিত্ব ফিরে পেতে যাচ্ছে।

নদীবেষ্টিত জেলা বরিশাল। একসময় একে ধান নদী খালের বরিশাল বলা হতো। কিন্তু কালের পরিক্রমায় জীবনানন্দ দাসের সেই বরিশাল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নদী ও খাল। বিশেষ করে বরিশাল শহরের মধ্য থেকে বয়ে যাওয়া খালগুলো আজ বিলীন হওয়ার পথে। ১৮০১ সালে বাখরগঞ্জ জেলার সদর দফতর বরিশালে স্থানান্তরের মাধ্যমে বরিশাল নগরীর যাত্রা শুরু হয়। মূলত নগরীর অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণে জলাশয় এবং খাল থাকার কারণে যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে ব্রিটিশরা এই শহরকেই নতুন সদর দফতর হিসেবে বেছে নেয়। খালগুলোর সৌন্দর্যে নগরীর চিত্র ছিল অপরূপ। রবীন্দ্রনাথের বজরা এই নগরীতেই ভিড়েছিল। এ ছাড়াও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বরিশালকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘বাংলার ভেনিস’ হিসেবে। 

সব মিলিয়ে সড়কপথের চেয়ে নৌপথই ছিলো বরিশাল নগরীর প্রধান যাতায়াতের মাধ্যম। ধীরে ধীরে নগরীর মধ্য থেকে বয়ে যাওয়া খালগুলো আড়ালে ঢেকে যায়। মানুষের অসচেতনতায় জীবিত খালগুলো মরা খালে পরিণত হয়। এর ফলে অল্প বৃষ্টিতেই বরিশালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে শুরু করে। কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। 

তারা বলছেন, নগরীর বুকে বয়ে যাওয়া সব প্রাচীন খাল ভরাট, দখল ও সংস্কারের অভাবে এ সমস্যা হচ্ছে। খালগুলো সংস্কার ও পুনরায় খালের যৌবন ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আর তা হয়ে ওঠেনি। অবশেষে দখল-দূষণের কবলে হারিয়ে যাওয়া বরিশাল নগরীর ২৪টি খালের মধ্যে প্রধান ৭টি খালের প্রাণ ফেরাতে খনন কাজ শুরু করেছে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বরিশাল-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর প্রচেষ্টায় খালগুলো পুনরায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। একই সঙ্গে ম্যাপ অনুযায়ী উদ্ধার হচ্ছে দখলকরা খালের পাড়। খনন কাজ শেষ হলে নগরীর প্রায় সাড়ে ৫ লাখ বাসিন্দা জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাবে। পর্যায়ক্রমে নগরীর মধ্যে থাকা ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছোট-বড় ৪৬ খালও আসবে সংস্কারের আওতায়। 

সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে বরিশালে ৪৬টি খালের অস্তিত্ব ছিল। তবে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ২৪টিতে। বর্তমানে বড়-ছোট মিলিয়ে টিকে থাকা ২৪টি খালও পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে টিকে থাকা খালগুলো মরাখালে পতিত হচ্ছে। আর হারিয়ে গেছে ২২টি খাল। এর মধ্যে এখন প্রাথমিকভাবে ৭টি প্রধান খালের খনন শুরু হওয়ায় আনন্দে ভাসছে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বরিশাল নগরীর ৭টি খালের ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে খননকাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় পলাশপুর খাল (১ কিলোমিটার ৭০০ মিটার), ১ কোটি ৯ লাখ টাকায় আমানতগঞ্জ খাল (২ কিলোমিটার ৫০ মিটার), ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকায় সাগরদী খাল (৯ কিলোমিটার), ২৮ লাখ টাকায় রূপাতলী খাল (১ কিলোমিটার), ৩২ লাখ টাকায় চাঁদমারি খাল (১ কিলোমিটার ৪২১ মিটার), ৪ লাখ টাকায় ভাটার খাল (১৬০ মিটার) এবং ২৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় জেল খালের (২ কিলোমিটার) সর্বমোট ১৯ কিলোমিটারে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 

নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা জামাল খলিফা বলেন, বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারে খাল উপচে সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকে। ফলে তখন আমাদের যাতায়াতসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এখন খাল খনন হলে হয়তো ওই দুর্ভোগ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে। তিনি আরও বলেন, খাল খননের পাশাপাশি এই এলাকার সড়কগুলো উঁচু করে নির্মাণ না করলে সমস্যা জিইয়ে থাকার আশঙ্কা থেকেই যায়।

এ অবস্থায় খাল খননের পাশাপাশি সড়কও উঁচু করে নির্মাণের দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। বরিশাল নগরীর চায়ের দোকানি শুভ বলেন, একসময় খালের পানি দিয়ে চা বানানো হতো, এখন তা শুধুই স্মৃতি। এখন খাল খনন করা হলে কীর্তনখোলা নদীর জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহিত হয়ে সেই পানি ফিরে আসবে। আর জলাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্তি পাবো। এটাই আনন্দের খবর। 

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওলিদ বলেন, ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়েছে। যা নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হবে। কাজ শেষ হলে আগামী বৃষ্টি মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী। 

এই ৭টি খাল খনন ও উদ্ধারের জন্য ২০২২ সালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম উদ্যোগ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করতে গেলে বাদ সাধেন তৎকালীন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। অবশেষে সেই বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে নবনির্বচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সহায়তায় খাল খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সময়ের আলো/আরএস/ 









https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close