ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

তীব্র শীতে তেঁতুলিয়ায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:১১ পিএম  (ভিজিট : ৪৭৮)
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বইছে তৃতীয় দফার শৈত্যপ্রবাহ। লাগাতার নিম্ন তাপমাত্রার শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। কঠিন দারিদ্রতায় জীবনযাপন করছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগের দিন (১৮ জানুয়ারি) তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুদিনের এ তাপমাত্রার রেকর্ডে বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। 

শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্য জানান তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

এদিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার আবরণে পঞ্চগড়। কুয়াশার সাথে ঝরছে হিমশীতল শিশির। শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে যানবাহনগুলোকে। টানা শীতের কারণে চরম বিপাকে সময় পার করছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। প্রতিদিন জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে গড়ে ৩০০ রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তির খবর পাওয়া গেছে।

কুয়াশার কারণে সময় মতো কাজে যেতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। শীত ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কমেছে দৈনন্দিন কামাই রোজগার। অভাব-অনটনে দিন কাটছে পরিবার-পরিজন নিয়ে। প্রয়োজনের বাইরে শহরের মানুষজন ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন। মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে অনেককে। 

নিম্ন আয়ের মানুষরা জানাচ্ছেন, তীব্র শীতে দুর্ভোগ আর অভাবের কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে কঠিন দারিদ্রতার ভেতর জীবনযাপন করছেন।

আরিস, জুয়েল ও আবু তাহেরসহ কয়েকজন পাথর শ্রমিক জানান, লাগাতার শীতে বেসামাল পরিস্থিতিতে পড়েছেন তারা। জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই দিনভর নদীতে বরফগলা পানিতে পাথর তুলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাদের। জীবিকার অন্য কোন পথ না থাকায় বাধ্য হয়েই দিনভর ঠান্ডা পানিতে পাথর তুলে পরিবারের মুখে খাবার জুটাচ্ছেন তারা। দিনশেষে পাথর তুলতে গিয়ে ঠান্ডায় জ্বর-সর্দিতে ভুগতে হচ্ছে।

ভ্যান চালক আরশেদ আলী, আব্দুর রহিম, সোহরাব আলী ও ভুট্টু জানান, শীতের কারণে ভ্যানে সহজে চড়তে চান না অনেকে। সকালে সূর্যের মুখ দেখা গেলে কামাই হয়। কিন্তু কুয়াশা আর বাতাসের কারণে ভ্যানে যাত্রী না উঠায় কামাই রোজগার কমে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে জীবন কাটছে।

নারী পাথর শ্রমিক ফিরোজা ও কদবানুসহ বেশ কয়েকজন জানাচ্ছেন, নদীতে পাথর উঠছে কম। তাই কাজও কম। সকালে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে দেরি হলে অনেক সময় মহাজন কাজে নিতে চান না। কাজ না করলেও তো পেটে ভাতও যাবে না। যতো ঠান্ডাই হোক, ঠান্ডায় ঘরে বসে থাকলে তো পরিবারের মুখে খাবার জুটবে না। খুব অভাবে পড়েছি। বাজারের সবকিছুতেই দাম। নিরামিষ খেয়েই কোনভাবে দিন কাটাচ্ছি।

বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। চাষিরা জানাচ্ছেন, ঠান্ডার প্রকোপের কারণে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। বীজতলা কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। চরম বিপাকে পড়েছে আলু চাষিরা। তীব্র শীতের কারণে ক্ষেতের আলুতে ছত্রাকের আক্রমণ বেড়েছে। পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। অতি মাত্রায় শীতের কারণে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর্লি ব্লাইট দেখা দেয়ায় ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে ২-১ দিন অন্তর অন্তর ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শীতের কারণে প্রচুর রোগী শীতজনিত রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। ডায়রিয়া, হাপানি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক রোগী। এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু। এজন্য শিশুদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, ১০ ডিগ্রির নিচে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হওয়ায় দুইদিন ধরে তেতুলিয়া জুড়ে মৃদু
শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন এ জনপদ। গতকাল বেলা ১১টার সময় সূর্যের মুখ দেখা গিয়েছিল। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে যে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি এ জনপদের সব বয়সী মানুষজন শীত দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close