ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন, এমপি হওয়ার দৌড়ে তারা
প্রকাশ: বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:২৩ এএম  (ভিজিট : ৬৫২৪)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্নের পর এবার সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোট করার লক্ষ্যে চলতি মাসের শেষ দিকে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এবার সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন দলের শতাধিক নেত্রী। বিশেষ করে মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীরা এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নারীনেত্রী, সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকা শিল্পীরাও রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হওয়ার দৌড়ে। 

সংবিধান অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দলের ৬ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য থাকলে ওই দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হবেন। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ ৩৭টি এবং জাতীয় পার্টি ২টি সংরক্ষিত নারী সদস্য পাবেন। 

সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য একত্রে জোট বাঁধলে অথবা ৬ জন করে জোটবদ্ধ হয়ে প্রার্থী দিলে ১০টি আসনে স্বতন্ত্র মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে তাদের আরও দুটি ভোট অবশিষ্ট থাকবে। জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টির একটি করে আসন রয়েছে। ফলে তারা স্বতন্ত্র দুজন সংসদ সদস্যের সমর্থন দিয়ে প্রার্থী দিলে একজন মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার সুযোগ পাবেন। আর স্বতন্ত্ররা জোটবদ্ধ হতে না পারলে আইন অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই আসনে প্রার্থী নির্বাচিত করার সুযোগ পাবে। 

তবে স্বতন্ত্র এমপিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগ সংরক্ষিত নারী এমপি মনোনয়নের বিষয়ে আগ্রহী নন। তাদের অনেকে চাইছেন তাদের সমর্থন দলকে দিতে। আওয়ামী লীগ সভাপতি যাদের মনোনয়ন দেবেন তাদেরই নির্বাচিত করার পক্ষে তারা। ফলে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপির অনুপাতে ৩৭টি আসন পেলেও স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিয়ে ৪৫টি থেকে ৪৭টি আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ পেতে পারে। 

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানান, সংরক্ষিত নারী আসনের ভোটের জন্য সংসদ সচিবালয় থেকে সংসদ সদস্যদের তালিকা কমিশন পেয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে। এরপর যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তবে এটিই হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। পরবর্তীতে কমিশনের অনুমোদনক্রমে তফসিল ঘোষণা হবে। কোটা অনুযায়ী একক প্রার্থী থাকলে আর ভোটের প্রয়োজন হবে না। আগামী সপ্তাহে এই প্রস্তাবনা কমিশনে ওঠার পর এ তফসিল ঘোষণা হলে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে।

আগে প্রথাগতভাবে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীরাই নির্বাচিত হতেন। ২০০৪ সালের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে কোন দলের কতজন প্রতিনিধি রয়েছেন তার আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেই হিসেবে একটি রাজনৈতিক দলের যদি ৬ জন এমপি থাকেন, তা হলে ওই দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হবেন। সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে বিজয়ী এমপিদের ভোটের মাধ্যমে। 

জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন অনুযায়ী সংসদের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার তারিখের পরবর্তী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত সদস্যদের রাজনৈতিক দল বা জোটওয়ারী সদস্যদের পৃথক তালিকা প্রস্তুত করবে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের মোট আসন সংখ্যার আনুপাতিক হার অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল ও জোটের অনুকূলে সংরক্ষিত মহিলা আসন বণ্টন করবে।

সংরক্ষিত আসনের এমপি কারা হচ্ছেন তা নিয়ে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, জাপার দুটি আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন দলের চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের এবং আরেক কো-চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম। এ দুজনই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেত্রীদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ত নারীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। এ ছাড়া মনোনয়ন পেয়েও জোট বা শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া এবং যোগ্যতায় এগিয়ে থাকার পরও নানা কারণে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে যাদের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি এমন নারী নেত্রীরা মনোনয়নে এগিয়ে থাকবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নেত্রী ও বিশিষ্টজনদের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। দলের দুর্দিনে ত্যাগী ও নিবেদিত প্রয়াত নেতা-মন্ত্রীদের স্ত্রী-কন্যাদের যারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তারাও মনোনয়ন পেতে পারেন। 

আওয়ামী লীগের মহিলা এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরও শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া তিন নেত্রী লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরুজা বারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি। 

এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি অভিনেত্রী তারানা হালিম, সাবেক এমপি যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজী সারোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফারজানা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক নিলুফা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাহেরা খাতুন লুৎফা ও সাধারণ সম্পাদক শামীমা রহমান। 

আওয়ামী লীগের বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা এমপিদের মধ্য থেকে এবারও এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, ঢাকার ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, নাহিদ ইজহার খান, সুবর্ণা মুস্তাফা, চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়শা খান, খুলনার অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার, নরসিংদীর তামান্না নুসরাত বুবলী, কুমিল্লার আরমা দত্ত, গোপালগঞ্জের নার্গিস রহমান ও খাগড়াছড়ির বাসন্তী চাকমা। 

শহিদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহিদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ ও শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে এফবিসিসিআইর পরিচালক শমী কায়সার আলোচনায় রয়েছে। এ ছাড়া নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নেহরিন মোস্তফা দিশি, ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, নুসরাত ফারিয়া, অরুণা বিশ্বাস, নুসরাত ইমরোজ তিশা, তানভীন সুইটি, অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তারসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বেশ ক’জন আলোচনায় রয়েছেন। 

এ ছাড়া শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী স্বতন্ত্র এমপিদের কেউ কেউ ৬ জনের জোট গঠন করে নিজেদের স্ত্রীদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি বানাতে চান বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সময়ের আলোকে বলেন, ‘সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগসহ দলের ও সহযোগী সংগঠনের ত্যাগী নেত্রীরা প্রাধান্য পান। প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ ছাড়া অগ্নিসন্ত্রাস ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। এবারও এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দল মনোনয়ন দেবে।’

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close