ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দৌলতপুরে সবজি চাষ করে নারীদের বাড়তি আয় ও ভাগ্যবদল
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:২৩ পিএম  (ভিজিট : ৪৬৪)
রুলির বাড়িতে আকাশী নারী দলের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় একটি সবজির বীজ ব্যাংক। সেখানে রয়েছে ৩২ রকমের শাকসবজির বীজ। নিজ বাড়ির পাশে সবজি ক্ষেতে  কাজ করছেন রুলি। কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইত পুর ইউনিয়নের শীতলাইপাড়া গ্ৰামের ১২ জন নারী বাড়ির পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষ করছেন।

পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে তারা এসব সবজি বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন। কৃষি বিভাগের ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে নিজেদের পরিশ্রমে এ সাফল্য পেয়েছে  নারীরা। ‘আকাশী নারী দল’ নামের একটি সংগঠন করে তারা এ কাজ করছেন।

শশীদারপুর গ্রামে গিয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে নারী দলের নেত্রী রুলি আসেন। তিনি নিয়ে যান দলের আরেক সদস্য রুলির পুষ্টি নিরাপত্তার ছোট বাগানে। বাড়ির পাশের এক শতক জমিতে সেই বাগান। স্বামীকে নিয়ে শাকসবজির বেড তৈরিতে ব্যস্ত দেখা যায় রুলি কে। বেড তৈরির পর সেখানে ছিটালেন লালশাকের বীজ। অন্যান্য বেডে দেখা যায় পালংশাক, মুলা, টমেটো, কাঁচা মরিচ। মাচায় দেখা যায় শিম ও লাউ।

রুলিং খাতুন, দৈনিক সময়ের আলো কে বলেন ‘বাড়ির পাশে জাগাটা জঙ্গল হয়ে পড়ে থাকত। ট্রেনিং নিয়ে এখন আমরা সেখানে বিষ (কীটনাশক) ছাড়া হরেক রকম শাকসবজি ফলমূল তৈরি করি এবং নিজে খাই, ও পাড়া প্রতিবেশী কে দিয়ে থাকি। তিন মাস দরে বাজারের সবজি কেনা লাগেনি। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু সবজি বাজারে বিক্রি করে  টাকা হয় তখন আমি আনন্দ পাই।’

রুলির বাড়িতে আকাশী নারী দলের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় একটি সবজির বীজ ব্যাংক। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঝকঝকে তকতকে বাড়ির আলপনা আঁকা মাটির দেয়ালে ঝুলছে সারি সারি প্লাস্টিকের বোতল। এগুলোতে রয়েছে ৩২ রকমের শাকসবজির বীজ। নাম রাখা হয়েছে বীজ ব্যাংক। এ বীজ ব্যাংক থেকে বীজ নিয়ে সংগঠনের বাইরের নারীরাও লাউ, শিম, কুমড়ার গাছ লাগান।

আকাশী নারী দলের সভানেত্রী রুলি খাতুন  প্রায় দেড় শতকের সবজি ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, নানা রকমের সবজির গাছ সেখানে। এর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, পালংশাক, লালশাক, বরবটি, ঝিঙে, টমেটো, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া ইত্যাদি। ভেড়ামারা মহিলা অনার্স কলেজ থেকে বিএ পাস করা রুলি খাতুন বলেন, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে যাওয়ার আগে তারা কোনো দিন কোনো সরকারি অফিসে যাননি। তাই মনে ভয় ছিল, কিন্তু অফিসে গিয়ে সব ভয় দূর হয়ে যায়।

তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আলাদা আলাদা জমিতে (বেড) তৈরি করে চাষ করতে শিখেছেন। কৃষি অফিস তাদের জৈব সার ও ১৭ ধরনের বীজ দিয়েছে। পোকা মাকড়ের আক্রমণ রোধ করার জন্য শিখিয়েছে নিমপাতা ও ছাই ব্যবহার করা। তাই তারা কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ছাড়াই সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন, এবং প্রতিবেশীদের দিতে পারছেন। প্রয়োজনে বিক্রি করতে পারছেন তাদের দেখে গ্রামের অন্য নারীরাও আগ্রহী হচ্ছেন।

রুলি খাতুন আরও বলেন, ‘আকাশী নারী দল’ সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা নারীরা ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করে স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরির জন্য আটটি পরিবার রিংস্ল্যাব পেয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে গ্রামের সবাইকে এ সুবিধা দেওয়া হবে। এ ছাড়া গ্রামের কয়েকজন নারী মাতৃত্বকালীন ভাতা, সরকারি সহায়তার চাল, ওএমএস ও টিসিবির পণ্য কেনার সুবিধা পেয়েছে। তারা নিজেদের অধিকারের বিষয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন। 

দৌলতপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম, দৈনিক সময়ের আলো কে বলেন, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান’ তৈরিতে শতভাগ সাফল্য দেখিয়েছেন দৌলতপুর উপজেলার, শীতলাইপাড়া ও শশীদারপুর গ্রামের নারীরা। তাদের এ সাফল্যে অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close