ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মোবারকগঞ্জ সুগার মিল
যান্ত্রিক ত্রুটিতে অর্ধেকে নেমেছে চিনি উৎপাদন
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪, ৭:১৪ এএম  (ভিজিট : ৫৪২)
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ভারী শিল্প মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে ২০২৩-২৪ সালের মাড়াই উদ্বোধনের পর প্রায় অর্ধেক সময়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ ছিল। ফলে চলতি মাড়াই মৌসুমে কাক্সিক্ষত চিনি উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা মিলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের। 

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার মিলের ডোঙ্গায় আখ ফেলে মাড়াই উদ্বোধন করেন বিএসএফআইসির প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম। মাত্র একদিন পরই শনিবার রাত ১২টার দিকে বয়লারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায় মিলের কার্যক্রম। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর রোববার বিকাল ৫টার দিকে আবার মাড়াই শুরু হয়। কিন্তু ১৩ ঘণ্টা পর আবারও যান্ত্রিক ত্রুটিতে মাড়াই বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। সেদিন মিলের যন্ত্র বিভাগের শ্রমিক ও কর্মচারীদের চেষ্টায় ৮ ঘণ্টা পর শুরু হয় মাড়াই। এভাবে মাড়াই শুরুর মাত্র ৪ দিনে ২৪ ঘণ্টাই বন্ধ থাকে মিলটি। আর চলতি মৌসুমের ২৩ দিনে প্রায় অর্ধেক সময়জুড়েই বন্ধ ছিল মাড়াই। মিলের রেকর্ড অবশ্য বলছে, ২৩ কার্যদিবসে মাড়াই বন্ধ ছিল ১০৪ ঘণ্টা। 

চলতি মৌসুমে ৬০ লাখ টাকার বাজেট ধরে পুনঃমেরামতের কাজ করা হয়। মিলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিলে মাড়াই শুরুর আগেই ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বাজেট ধরে যন্ত্রপাতি পুনঃমেরামতের কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে পুনঃমেরামত কোনো কাজেই আসেনি। 

চলতি মাড়াই মৌসুমে ৪০ দিনে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে তিন হাজার মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে মাড়াই শুরু হয়। চিনি আহরণের গড় ধরা হয় ৬ শতাংশ। কিন্তু ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মিলের চিনি আহরণের গড় ছিল ৪.২ শতাংশ। এদিন পর্যন্ত ২৩ কার্যদিবসে মিলটি চিনি উৎপাদন করে ১৪ হাজার ৪০৪ বস্তা। একই পরিমাণ রিকভারিতে গত বছর ওই সময়ে ২৫ থেকে ২৭ হাজার বস্তা চিনি উৎপাদন করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চিনি উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন, চিনি উৎপাদন নির্ভর করে মাড়াইয়ের ওপর। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাড়াই কম হওয়ায় চিনির উৎপাদনও কম হবে। এটাই স্বাভাবিক। ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, মিলের যন্ত্রপাতি পুরোনো হওয়ায় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।  

এদিকে মিলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর মাড়াই শুরুর আগে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বাজেট ধরে পুরোনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন ও মেরামতের কাজ করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়েছে গোপনে। শ্রমিকরা বলছেন, আগে এসব কাজের জন্য ওপেন টেন্ডার করা হলেও এখন আর তা হয় না। তাদের অভিযোগ, মিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে নামসর্বস্ব কাজ করে বাকিটা আত্মসাৎ করেছেন শ্রমিক নেতা ও মিলের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মিলের মাড়াই শুরুর আগেই সব ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্র পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। চলতি মৌসুমে ৬০ লাখ টাকার বাজেট ধরে পুনঃমেরামতের কাজ করা হয়। তারপরও ত্রুটিটা এবার একটু বেশি হচ্ছে। এ কারণে মাড়াই কম হয়েছে। ফলে চিনি উৎপাদনও কম হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেন্ডারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব টেন্ডার ওপেন হয়। অফিসিয়াল যে নিয়ম আছে তা মেনেই সব কাজ সম্পন্ন করা হয়। মিলের মাড়াই স্বাভাবিক করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

এর আগে আখের অভাবে মাত্র ২৮ দিনে শেষ করা হয় গত ২০২২-২৩ সালের মাড়াই মৌসুম। ওই মৌসুমে কৃষকরা মাঠে আখ রোপণ না করায় মিলের রেকর্ড অনুযায়ী, সবচেয়ে কম সময় উৎপাদনে ছিল মিলটি। এ সময় মিলটি ৩৫ হাজার ৩৬০ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে ১ হাজার ৭৪৫ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করেছিল। ওই বছর আখের মণ ছিল ১৮০ টাকা। 

এদিকে মিলের রেকর্ড বলছে, অতীতে প্রতি মৌসুমে মিল এলাকার কৃষকরা ৮ থেকে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আখ চাষ করতেন। নানা প্রতিকূল পরিবেশ এবং অল্প সময়ে ফুল-ফলসহ বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষ হওয়ায় কমে যেতে থাকে আখ চাষ। তবে চলতি মৌসুমে আখের দাম বাড়ানোয় কৃষকরা আবার আখ চাষে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন কৃষক ও মিলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 

উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৭.৯৩ একর নিজস্ব জমির ওপর নেদারল্যান্ডস সরকার মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠাকালীন মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ কর্মদিবস আখ মাড়াই চলে। লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় ১৯৬৭-১৯৬৮ মাড়াই মৌসুম থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু হয়।

সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close