ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

‘বছরে ২০ লাখ কর্মসংস্থানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বড় ভূমিকা রাখবে’
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪, ৬:১৫ এএম  (ভিজিট : ৬৬৪)
বর্তমান সরকারের গত পাঁচ বছরের মেয়াদে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মেহেরপুর সদর আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. ফরহাদ হোসেন। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি বড় ব্যবধানে জিতে আবারও সংসদ সদস্য হন। গত বৃহস্পতিবার নতুন যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে তাতে এবারও ফরহাদ হোসেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে এবার প্রতিমন্ত্রী নন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রী হিসেবে রোববার প্রথম সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে আসেন ফরহাদ হোসেন।

এদিন সকাল থেকেই নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে সব কর্মকর্তারা যেমন তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান, তেমনই অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এরই এক ফাঁকে ফরহাদ হোসেন সময়ের আলোর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন।

সময়ের আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছর আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবারের ইশতেহারে কর্মসংস্থান তৈরি করার বিষয়ে বলা হয়েছে। প্রতি বছর ২০ লাখ করে আমাদের কর্মসংস্থান হবে। সে ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন একটি বড় ভূমিকা রাখবে।

ফরহাদ হোসেন বলেন, এই পাঁচ বছরে আমার লক্ষ্য থাকবে সরকারি পদগুলো পূরণ করাসহ, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেখানে শূন্যপদ রয়েছে সেগুলো পূরণ করা। বেসরকারিভাবে যাতে আরও অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় সেখানে যাতে আমাদের জনপ্রশাসন থেকে বিভিন্ন সেমিনার, যোগাযোগ-সেই কাজগুলো করে যাতে আমরা এগিয়ে নিতে পারি। সে জন্য আমাদের প্রশিক্ষণটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণের ওপর আমরা বরাবরই জোর দিচ্ছি। অর্থাৎ এই মেয়াদে আমি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেই বেশি জোর দেব। নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করব।

তিনি বলেন, কর্মকর্তারা যাতে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে সে জন্য আমরা গত পাঁচ বছর গুরুত্ব দিয়েছি। আগামী পাঁচ বছর এ বিষয়গুলোতে আরও গুরুত্ব থাকবে। আমরা যেন সেবা ও সেবামুখী মানসিকতা আরও বাড়াতে পারি। যেখানে এখনও কিছুটা ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে ভোগান্তি মুক্ত করে ফেলা।

দেশে বেকারের সংখ্যা এখন তিন শতাংশ জানিয়ে তিনি বলেন, সেটিকে আমরা আরও কমাতে পারি, একটা সন্তোষজনক অবস্থায় নিতে পারি। আগামী দিনগুলোতে দক্ষ জনশক্তি গড়ার দিকে আমরা বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা এখন নিরীক্ষা করব, কোথায় কোন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু পদ সৃজন হয়নি। আমরা আরও দ্রুততার সঙ্গে পদ সৃজন করার চেষ্টা করব। তা হলে আমরা দ্রুততার সঙ্গে সে পদগুলো পূরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।

প্রশাসনকে অনেক সময় দলীয়করণ করা হয় বা রাজনীতিকীকরণ করা হয়, বা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেককে ওএসডি করা হয়। এসব বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি এবং এবারের মেয়াদে কোন বিষয়গুলোকে অগাধিকার দেবেন-এ প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি পাঁচ বছর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছি এবং আমি আমার সাধ্যমতো দেশের ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে আমাকে পূর্ণমন্ত্রী করে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আবারও আমাকে দিয়েছেন-এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি যে প্রত্যাশায় আমাকে আবার দায়িত্ব দিয়েছেন-সে প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব। গত পাঁচ বছর এখানে কাজ করার ফলে আমার বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা আমার জন্য অনেক বড় কিছু।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে স্লোগান রয়েছে-‘জনমুখী জনপ্রশাসন’ আমরা-আমি সেটি বাস্তবায়নে গত পাঁচ বছর কাজ করেছি, সামনের পাঁচ বছরও কাজ করব। আমাদের রূপকল্প, আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী আমরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে যাচ্ছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করবে। গত পাঁচ বছরে আমি চেষ্টা করেছি-ঠিক মানুষকে ঠিক জায়গায় দায়িত্ব দেওয়ার, সামনেও আমি সেটা করব। আমরা দক্ষ প্রশাসন গড়তে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। এসব কারণে জনপ্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে এবং ভালো কাজের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে।

ক্যাডার বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসনে কী পদক্ষেপ নেবেন-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ক্যাডার বৈষম্যের বিষয়গুলো আমরা এরই মধ্যে যথার্থভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। সামনের দিনে এগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করার সুযোগ থাকবে। আমরা চাইব বৈষম্য যাতে শূন্যতে আসে। এ বিষয়ে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অর্গানোগ্রাম যুগোপযোগী নয়, এ বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা অর্গানোগ্রামগুলো পরিবর্তন করছি। এগুলো পরিবর্তন করতে হলে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব আসতে হয়। আমাদের অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে ৪-৫ জন করে অতিরিক্ত সচিব আছেন। কিন্তু সেখানে হয়তো পদ আছে দুটি। তাই সেখানে আমাদের বেশি করে পদায়ন করতে হচ্ছে। আমরা এবার প্রথম দিকেই মন্ত্রণালয়গুলোকে আহ্বান করব বাস্তবতার নিরিখে তারা যাতে আমাদের কাছে তাদের অর্গানোগ্রামে কী পরিবর্তন দরকার যুগোপযোগী করে সেটি যাতে বাস্তবভিত্তিক হয়, সেভাবে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠালে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা অর্গানোগ্রামটাকে আপডেট করব। সেটি করতে পারলে আমরা তখন প্রোপার অ্যাসেসমেন্টটা করতে পারব, কোন জায়গাতে কত লোক লাগবে এটা আমরা প্রথমে শুরু করব ইনশাআল্লাহ। ক্যাডার বৈষম্য নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে শুরুতেই মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোর জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) যুগোপযোগী করা হবে। তা ছাড়া এই ক্যাডার বৈষম্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করব। আপনি গত মেয়াদে যে কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি সেগুলোর মধ্যে কোন বিষয়গুলোকে এবার আপনি গুরুত্ব দেবেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্প শেষে পুলে গাড়ি জমা দেন না প্রকল্প কর্মকর্তারা। প্রকল্প শেষে পরিবহন পুলে গাড়ি জমা না দিলে আগামী দিনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা ১৫ বছরের পুরোনো গাড়িগুলো পরিবর্তন করতে চাচ্ছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প যখন শেষ হয়ে যায়, সেই প্রকল্পের গাড়িগুলো পরিবহন পুলে এসে পৌঁছানোর কথা, কিন্তু বিভিন্ন কারণে গাড়িগুলো এসে পৌঁছায়নি। এবার আমরা খুবই কঠোর পদক্ষেপ নেব। আইএমইডি থেকে আমরা জানব কতগুলো প্রকল্প আছে, সেই প্রকল্প কবে শেষ হয়েছে, গাড়িগুলো কোথায় আছে, সেই গাড়িগুলো আমাদের পরিবহন পুলে জমা দিতে হবে। বিষয়টি এবার আমরা খুব শক্তভাবে দেখার চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে আমি মন্ত্রণালয়ের কাজ বুঝে নিয়েছিলাম। বাজেট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যাপক প্রকল্প গ্রহণ করেছি। আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা সেগুলো অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পেরেছেন। সময়ের সঙ্গে তাল দেখে আমরা কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ওরিয়েন্টেশন করিয়েছি। ঠিক মানুষকে ঠিক জায়গায় বসানো হয়েছে। এ কারণে আমরা যথেষ্ট যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে ভালো কাজ করতে পেরেছি।

নিজ জেলার উন্নয়ন প্রসঙ্গে সময়ের আলোকে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে আমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মেহেরপুরের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। মেহেরপুরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে, রেললাইন নেওয়া হচ্ছে, স্থলবন্দরের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এ ছাড়া হাসপাতাল এবং রাস্তাঘাটসহ মেহেরপুরের সার্বিক উন্নয়নে আমি কাজ করেছি, আগামীতেও মেহেরপুর নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 









https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close