ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবনে ছন্দপতন
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪, ২:১০ এএম  (ভিজিট : ৫৯২)
গতকাল ছিল পৌষের শেষ দিন। এর আগে থেকেই শুরু হয় তীব্র শীত। শীতে কাঁপছে রাজধানীসহ পুরো দেশ। চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশার দাপট। কোথাও কোথাও বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ছে। দিনের অধিকাংশ সময়ই থাকছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। টানা কয়েক দিন থেকে দেখা নেই সূর্যের। হিমেল বাতাসে শীত বেশি অনুভূত হওয়ায় স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত।

হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাটে জনসমাগম কম দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষজন সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে খামারিরা। গরম কাপড় কিনতে নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষ ভিড় করছে মার্কেটগুলোতে। আবার ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুসহ নানা বয়সিদের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। বেশির ভাগ শিশু ও বয়স্করা শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অন্যদিকে, তীব্র ঠান্ডায় নিজেকে বাঁচাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের তাপ নেওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে অনেক স্থানে। ঘটছে অগ্নিদগ্ধের ঘটনাও। কোথাও কোথাও শীত নিবারণে গরম পানি ব্যবহার করতে গিয়েও দগ্ধ হয়েছে কেউ কেউ।

আবহাওয়া অফিস বলছে, রোববার দেশের ২৪ অঞ্চলের তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির নিচে ছিল। তবে রাজধানীতে তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবারও দিনাজপুরেই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়াও রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গা জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শীতের এই তীব্রতা আজ সোমবারও থাকতে পারে। তবে মঙ্গলবার থেকে রাজধানীসহ দেশের কিছু কিছু এলাকায় রোদের মুখ দেখা দিতে পারে। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে দুপুর পর্যন্ত।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, সোমবার তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এর চেয়ে হয়তো কমবে না। তবে মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা একটু করে বাড়তে শুরু করবে। আর বুধবার থেকে দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টিরও সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টির পর কুয়াশা অনেকটা কেটে যাবে। শীতও কমতে শুরু করতে পারে। তবে এ মাসে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা নেই।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও আজ দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশের অনেক জায়গায় দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
এদিকে শীতে কাপছে গোটা দেশ। জনজীবনে দেখা দিয়েছে ছন্দপতন। আমাদের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : 

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস : রোববার সকাল ৯টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সপ্তাহ ধরে মেঘ-কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সূর্য। কুয়াশার কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। 

তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেড়িয়েছে নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। নিম্ন আয়ের মানুষের মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। 

কুড়িগ্রামে বিপর্যস্ত জনজীবন : জেলায় টানা ৫ দিন ধরে মিলছে না সূর্যের দেখা। শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঘনকুয়াশায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। রোববার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরের হাজার হাজার মানুষ। ঠান্ডায় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৩১ শিশু। 

পটুয়াখালীতে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা : জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। বেলা বাড়লেও দেখা মেলেনি সূর্যের। দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলেছে যানবাহন। হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে কাপছে জনজীবন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। দুর্ভোগে রয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছে অনেক হতদরিদ্র মানুষ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন ১২ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

চলনবিল অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ : কনকনে শীত আর শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের জনজীবন। দিনে সূর্যের দেখা মিলছে না। হিমেল হাওয়া বইছে, রাতে পড়ছে ঘন কুয়াশা। বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। কুয়াশায় নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৪ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। লোকজন দিনের বেলায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। 

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস : হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সূর্যের দেখা মিলছে না দিনের বেশির ভাগ সময়। আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। সাধারণ মানুষ শীতে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে। রোববার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
দিনাজপুরে হাড় কাঁপানো শীত : দিনাজপুর জেলায় এবার তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সারা দেশের মধ্যে ও চলতি মৌসুমে দিনাজপুরের সর্বনিম্ন রেকর্ড। হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরের এই জেলার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। এদিকে চলমান এ শৈতপ্রবাহে টানা কয়েক দিন ধরেই দেখা মিলছে না সূর্যের। গভীর রাত থেকে অর্ধ বেলা পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা।

ফরিদপুরে বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ : ফরিদপুরেও কুয়াশা ও প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিম শীতল বাতাস, যাতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধা ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য এই শীত খুবই যন্ত্রণা ও কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। ফরিদপুর জেলায় কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখান মিলছেই না বললে চলে। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিনেও শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে। ফরিদপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অসহনীয় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বরিশালে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ : হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত বরিশালের জনজীবন। বরিশালে গতকাল মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। তীব্র শীতে বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। বরিশাল নদীবন্দরে ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। শনিবার রাত ১১টায় নদীবন্দর ও আশপাশের এলাকার ৫ শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

রাজশাহীতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা : রাজশাহীর ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ উপজেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, রোববার সকাল ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রংপুরে আগুনে ২ জনের মৃত্যু : শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহানোসহ গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে দুই সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ৪৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন-রংপুরের তাজহাট এলাকার বাসিন্দা নাসরিন বেগম (৩৫) ও পীরগাছা উপজেলার বাসিন্দা আমেনা বেগম (৬০)। এর মধ্যে রোববার সকালে নাসরিন ও শনিবার সকালে আমেনার মৃত্যু হয়। রংপুরে রোববার ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

লালমনিরহাটে বেড়েছে শীতজনিত রোগী : লালমনিরহাটে তাপমাত্রা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। তবে চিকিৎসকের অভাবে কষ্ট হচ্ছে রোগীদের। রোববার সকালে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু চিকিৎসক হিসেবে ডা. শাহানা আফরীন কর্মরত থাকলেও তিনি বসেন সদর হাসপাতালে। সপ্তাহে এক দিন প্রতি শনিবার আসার কথা থাকলেও বেশ কিছু দিন ধরে আসেন না। ফলে শিশু রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close