ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

যান্ত্রিক ত্রুটিতে চিনি উৎপাদন অর্ধেক, ২৩ দিনে বন্ধ ১০৪ ঘণ্টা
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪, ১০:৪১ পিএম  (ভিজিট : ৬২২)
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ভারি শিল্প মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের মাড়াই উদ্বোধনের পর প্রায় অর্ধেক সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ ছিল। ফলে চলতি মাড়াই মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত চিনি উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের। গত ২২ ডিসেম্বর মিলের ডোঙ্গায় আখ ফেলে উদ্বোধন করেন বিএসএফআইসির প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম। মাত্র একদিন পরই বয়লারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা পর আবার মাড়াই শুরু করার ১৩ ঘণ্টা পর আবারো যান্ত্রিক ত্রুটিতে মাড়াই বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এদিন মিলের যন্ত্র বিভাগের শ্রমিক কর্মচারীদের চেষ্টায় ৮ ঘণ্টা পর শুরু করে। 

ফলে মাড়াই শুরুর মাত্র ৪ দিনে ২৪ ঘণ্টাই বন্ধ থাকে মিলটি। এভাবে চলতি মৌসুমের ২৩ দিনে প্রায় অর্ধেকটা সময়ই বন্ধ ছিল মিলের মাড়াই। যদিও মিলের রেকর্ড বলছে ২৩ কার্যদিবসে বন্ধ ছিল ১০৪ ঘণ্টা।

চলতি মৌসুমে ৬০ লাখ টাকার বাজেট ধরে পুন:মেরামতের কাজ করা হয়। এদিকে মিলের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিল শুরুর আগেই ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বাজেট ধরে যন্ত্রপাতি পুন:মেরামতের কাজ করা হয়। কিন্তু মোটা অংকের এ পরিমাণ টাকার পুন:মেরামত কোন কাজে আসেনি।

চলতি মাড়াই মৌসুমে ৪০ দিনে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরে মাড়াই শুরু করে। চিনি আহরণের গড় ধরা হয় ৬ শতাংশ। কিন্তু শনিবার (১৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত মিলের চিনি আহরণের গড় ছিল ৪.২ শতাংশ। এদিন পর্যন্ত ২৩ কার্যদিবসে মিলটি চিনি উৎপাদন করে ১৪ হাজার ৪০৪ বস্তা। একই পরিমাণ রিকভারিতে গত বছর ওই সময়ে ২৫ থেকে ২৭ হাজার বস্তা চিনি উৎপাদন করেছিল।

কিন্তু চলতি মৌসুমে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চিনি উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেখা গেছে। যদিও মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন, চিনি উৎপাদন নির্ভর করে মাড়াইয়ের উপর। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাড়াই কম হয়েছে ফলে চিনিও কম হবে এটা স্বাভাবিক। তবে ঘন ঘন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণ হিসাবে বলছেন, মিলের পুরাতন যন্ত্রপাতি হওয়ায় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এদিকে মিলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর মাড়াই শুরুর আগে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বাজেট ধরে পুরাতন যন্ত্রাংশ পরিবর্তন ও মেরামতের কাজ করা হয়। তবে এ পরিমাণ বাজেট ব্যয় করা হলেও তা কাজে আসেনি বলে জানালেন শ্রমিকরা।

অন্যদিকে মিলের এ টাকা খরচ করা হলে সব কিছু করা হয়েছে গোপনে। শ্রমিকরা বলছেন, আগে এসব কাজের জন্য ওপেন টেন্ডার করা হলেও এখন তা হয় না। তাদের অভিযোগ মিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বড় অংকের এ পরিমাণ টাকা শ্রমিক নেতা ও কর্মকর্তারা নামসর্বস্ব কাজ করে বাকিটা আত্মসাৎ করেছেন।

মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম মিলের যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়টি জানিয়ে বলেন, মিলের মাড়াই শুরুর আগেই সকল ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্র পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হয়। চলতি মৌসুমে ৬০ লাখ টাকার বাজেট ধরে পুন:মেরামতের কাজ করা হয়। তারপরও ত্রুটিটা এবার একটু বেশি হচ্ছে। যে কারণে মাড়াই কম হয়েছে, ফলে চিনি উৎপাদনও কম হয়েছে।

রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেন্ডারের বিষয়ে বলেন, সব টেন্ডার ওপেন হয়। তবে অফিসিয়াল যে নিয়ম আছে তা মেনেই সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়। তবে মিলের মাড়াই স্বাভাবিক করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
 
গত ২০২২-২৩ মাড়াই মৌসুম মিলটি আখের অভাবে মাত্র ২৮ দিনে শেষ করে। ওই মৌসুমে কৃষকরা মাঠে আখ রোপণ না করায় মিলের রেকর্ডে সবথেকে কম সময় উৎপাদনে ছিল মিলটি। এ সময়ে মিলটি ৩৫ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১ হাজার ৭৪৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করেছিল। ওই বছর আখের মন ছিল ১৮০ টাকা। যদিও মিলে রেকর্ড বলছে, এর আগে প্রতি মৌসুমে মিল এলাকার কৃষকরা ৮ থেকে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আখ চাষ করতো। নানা প্রতিকূল পরিবেশ এবং অল্প সময়ে ফুল ফলসহ বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষ হওয়ায় কমে যাচ্ছে আখ চাষ। তবে চলতি মৌসুমে আখের দাম বৃদ্ধি করায় কৃষকরা আবার আখ চাষে ফিরছে বলে জানান কৃষকরা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে ১৯৬৫ সালে ৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৭.৯৩ একর নিজস্ব জমির উপর নেদারল্যান্ড সরকার মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি স্থাপন করে। এরমধ্যে ২০.৬২ একর জমিতে কারখানা, ৩৮.২২ একর জমিতে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক কলোনি, ২৩.৯৮ একর পুকুর এবং ১০৭ একর জমিতে পরীক্ষামূলক ইক্ষু খামার। এছাড়া ১৮.১২ একর জমিতে জুড়ে রয়েছে সাবজোন অফিস ও আখ ক্রয় কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠাকালীন মৌসুমে পরীক্ষামূলক ভাবে ৬০ কর্ম দিবস আখ মাড়াই চলে। লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় ১৯৬৭-১৯৬৮ মাড়াই মৌসুম থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু করে। ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা ছাড়াও যশোরের দু’টি উপজেলা নিয়ে গঠিত মিলে আটটি জোনের আওতায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ রয়েছে সাড়ে তিন লাখ একর। আখ ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে ৪৮টি।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  মোবারকগঞ্জ সুগার মিল   যান্ত্রিক ত্রুটি   চিনি উৎপাদন ব্যাহত   ঝিনাইদহ   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close