ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
রাজশাহীর এক নৌকার প্রার্থীসহ ৪ স্বতন্ত্র প্রার্থীর নানা অভিযোগ
ভোটের ফলাফল বাতিল ও পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন
প্রকাশ: বুধবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৪, ৯:৩২ পিএম আপডেট: ১০.০১.২০২৪ ৯:৪৩ পিএম  (ভিজিট : ৫৫৯)
সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজশাহীর ছয়টি আসনের এক নৌকার প্রার্থী  এবং ৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্রভাব বিস্তার, ফলাফল বাতিল ও পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে ২ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর আবেদন এবং ৩ জন সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব দাবি জানিয়েছেন।

রাজশাহীর -১ (তানোর -গোদাগাড়ী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীঘ নেতা গোলাম রাব্বানী ভোট কারচুপি, ফল বাতিল, পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। একই সাথে তার সমর্থকদের উপর নির্বাচনত্তোর হামলা মামলা চলছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে গোলাম রাব্বানী বলেন, গত ৭ জানুয়ারির  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি রাজশাহী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করি। আমার মার্কা ছিল কাঁচি। নির্বাচনের শুরু থেকে আমার কর্মী সমর্থকগণ আমার পক্ষে নিরলসভাবে আমার প্রতীক কাঁচি মার্কার জন্য ভোট প্রার্থনা করার ফলে গোদাগাড়ী-তানোরের অধিকাংশ শান্তিপ্রিয় হাজার হাজার ভোটার আমার পক্ষে অবস্থান নেয়। আমিসহ আমার কর্মী-সমর্থনগণ এবং সাধারণ জনগণ সবাই মনে করেছিল যে আমি ভোটে ব্যাপক ভোটের ব্যাবধানে জয়যুক্ত হবো। প্রকৃতপক্ষেই আমি ভোটে জয়যুক্ত হয়েছি বলে মনে করি। কিন্তু ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। যার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আমার নিকট আছে। ভোটের দিন বাহিরের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলেও বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে অদৃশ্য শক্তির ইশারায় গোদাগাড়ী,তানোরের উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ও প্রিজাইডিং অফিসারগণ ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করেছে। কৌশলে প্রিজাইডিং অফিসারগণ আমার এজেন্টদের নিকট থেকে ফলাফলের পূর্বেই ফলাফল শীটে স্বাক্ষর করে নিয়ে তাদেরকে ভোট গণনার সময় কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়।

কারচুপির মাধ্যমে প্রকাশিত ফলাফল স্থগিত করার জন্য আমার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর ভোটের দিনই একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ভোটের দিন নৌকা প্রতীকের সমর্থকগণ মণ্ডুমালা ভোটকেন্দ্রে পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করেছে। আমি এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি এবং পুনঃনির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমার কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা-মামলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি । সংবাদ সম্মেলনে এসময় এই আসনের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তারুজ্জামানসহ গোলাম রাব্বানীর সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রাজশাহী-২ আসনের নির্বাচনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ তুলেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। রাসিকের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ দিয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে তার আইনজীবী ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ৭টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে ১৪ দলের পরাজিত এই নেতা নির্বাচন কমিশনের কাছে এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এই আসনে ‘কাঁচি’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ব্যবহার করে ভোট প্রার্থনা করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী থাকার পরেও উক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দাবি করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া প্রচারণার শুরু থেকে ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশন’ নামক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটি এর কর্মচারীদের সুনির্দিষ্টভাবে ‘কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতায় যুক্ত করে। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় তৈরি করে। ভোটের দিন সকালে সংবাদমাধ্যমের সামনে আমি সিটি করপোরেশনের এই ভূমিকা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করি। এমনকি সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ নিজ নিজ ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোট না দিলে সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত করার হুমকি প্রদান করেন।

সিটি করপোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে এই আসনে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ টিসিবির সরকারি সুবিধাভোগীদের কার্ড আটকে রেখে ‘কাঁচি’ প্রতীকে ভোট না দিলে সেই কার্ড ও সুবিধা ফেরত দেয়া হবে না বলে হতদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমি অভিযোগও করি। নির্বাচনের আগের রাতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উল আজিমকে এসব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যৌথ বাহিনী আটক করেও নিয়ে যায়। যদিও আর সব ওয়ার্ডে সেই একই প্রক্রিয়া চলমান থাকে।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প সিডিসি’র কর্মীদের ‘কাঁচি’ প্রতীকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিডিসি টাউন ফেডারেশন, সিএইচডিএফ, ক্লাস্টার ও সিডিসি কর্মীদের সরকারি সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে এবং হুমকি দিয়ে ‘কাঁচি’ প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোটপ্রদানেও বাধ্য করা হয়।

এর পাশাপাশি নির্বাচনের দিন বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজস্ব বাহিনী প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রে ‘নৌকা’ প্রতীকের ভোটারদের চিহ্নিত করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিত করাসহ অন্যান্য অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে তিনি দাবি করেছেন, স্বতন্ত্র ‘কাঁচি’ প্রতীকের প্রার্থীকে জেতাতে এসব করা হয়।

অপর দিকে রাজশাহী–৪ (বাগমারা) আসনের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে পুনঃতফসিলের আবেদন জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদ্য সাবেক ৩ বারের আওয়ামী লীগের এমপি এনামুল হক। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) নিজেই ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এই আবেদন জমা দেন।  ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনটি নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রতীক ছিল কাঁচি।

সিইসির কাছে দেওয়া আবেদনে এনামুল হক বলেছেন, আবুল কালাম আজাদ নৌকার প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে যেসব সহিংস কার্যক্রম সংঘটিত করেছেন, তা নির্বাচন কমিশনকে আগেই জানানো হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলা করে। দুটি মামলা হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, আবুল কালাম আজাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর অনেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, সেই সব মামলায় বেশ কয়েকজন ক্যাডার গ্রেফতার হলেও জামিনে মুক্ত হয়ে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। এতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে প্রভাব পড়ে এবং সাধারণ জনগণ আতঙ্কিত হয়। নির্বাচনকালীন প্রার্থীসহ তার ক্যাডার বাহিনী কাঁচির এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র ঢুকতে না দেওয়া, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, কর্মী-সমর্থকদের মারধরসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায়।

অভিযোগে এনামুল আরও বলেন, আমি উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শনকালে দেখতে পেয়েছি, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল না। ভোট গ্রহণের শুরু থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫-২০ ভাগ ভোট সংগ্রহ হয়, অথচ বিকেল ৩-৪টার মধ্যে নৌকার প্রার্থীর লোকজন জোরপূর্বক ভোটের ফলাফল তাদের অনুকূলে নেয়। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রের ফলাফল দেওয়া হয়েছে। সেটি হিসাব করলেও সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবি এনামুলের।

এ ছাড়া ভোট-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন এলাকায় তার নেতা-কর্মীর বাড়িতে নৌকার প্রার্থীর সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই আসনে নৌকার প্রার্থীর ফল বাতিল করে নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করার অনুরোধ জানিয়েছেন এনামুল হক।

এছাড়াও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য রাহেনুল হক রায়হান ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে রাহেনুল হক রায়হান বলেন, ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আমি সন্তুষ্ট নয়, আমি মনে করি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী কালো টাকা ব্যবহার করেছেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের পরেও আমাদের কর্মীদের একেরপর এক মারধরসহ বাড়িঘর পুড়ানো হচ্ছে, আমার কর্মীরা অনেকে এখন মেডিকেলে ভর্তি আছেন।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রায়হান বলেন, যারা ভোটের কাজে নিয়োজিত ছিলেন পোলিং অফিসার থেকে শুরু করে প্রিজাইডিং অফিসার সবার আচরণ পক্ষপাতিত্ব মূলক ছিলো। আমি যখন বিভিন্ন কেন্দ্রে যায় তখন দেখেছি কক্ষ বন্ধ রেখে তারা কাজ করছিলো। আমি তাদের প্রশ্ন করলে তারা কোনো সদুত্তর উত্তর দিতে পারেননি।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close