ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কমেছে ভোটের হার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪, ১২:৩৪ এএম  (ভিজিট : ১৭৭০)
সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে ভোটার বাড়লেও গত নির্বাচনের তুলনায় এবারে কমেছে ভোট পড়ার হার। তবে ভোটের হার কমলেও প্রাপ্ত ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তরুণ ভোটাররা। অনেকেই মনে করছেন, এ নির্বাচনে তরুণ ও নারী ভোটাররাই বেশি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। 

রোববার ৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের বিপরীতে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন নিবন্ধিত ২৮ রাজনৈতিক দলের ১৯৬০ জন প্রার্থী। এ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী, ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। আর ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ীয় হয়েছেন। এ ছাড়া ১১টি আসনে জাতীয় পার্টি এবং একটি করে আসনে জয় পেয়েছে বংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ কল্যাণপার্টি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

ইসির চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ভোটার তালিকার তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার রয়েছেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭২০ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৯ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৪৮ জন। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে মোট ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ১৩ হাজার ১০৫ জন, আর নারী ভোটার ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন। সে হিসাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৫৬ জন।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচ ভোট পড়েছিল ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ। ওই নির্বাচনে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ৯১১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। সে হিসাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার কমেছে ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও ওই নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ভোটে অংশগ্রহণ করেছিল। ফলে ভোটার উপস্থিতিও বেশি ছিল বলে মনে করছেন অনেকে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অনেকেই বলছেন ভোটের হার কম। হ্যাঁ, এটা কম হতে পারে। বিএনপির মতো একটি বড় দল যদি ভোটে অংশ না নেয় তা হলে ভোটারের উপস্থিতি সংগত কারণেই কম হতে পারে। বিএনপি যদি অংশ নিত তা হলে ভোটটা আরও বেশি কনটেস্টটেড হতো এবং ভোটাররা অধিকতরভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতেন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমার মনে হচ্ছে ৪২ শতাংশ ভোট পড়েছে, এটা ভালো হার। 

এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তরুণ ও নারী ভোটারের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটার ছিল ৫ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৬ জন আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নারী ভোটার রয়েছে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৯ জন। সেই হিসাবে নারী ভোটার বেড়েছে ৭৩ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ জন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছিল ৪৩ লাখ ২০ হাজারের মতো নতুন ভোটার। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন ও তরুণ ভোটার যুক্ত হয়েছে প্রায় দেড় কোটি।

৭ জানুয়ারি ভোটের দিন সরেজমিন কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে, উপস্থিত ভোটারদের মধ্যে বেশির ভাগই নতুন ও তরুণ ভোটার, যারা এবারই প্রথমবার ভোট দিয়েছেন। এ ছাড়াও নারী ভোটারের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা জানান, এবার তরুণ ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। নির্বাচনে সহিংসতা হতে পারে-এ আশঙ্কা থেকে বয়স্ক ভোটাররা তেমন আসেননি। তবে অনেকেই উৎসাহ নিয়ে প্রথমবার ভোট দিয়েছেন। শেরেবাংলা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রথমবার ভোট দিতে এসেছিলেন লাবণী আক্তার। এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে এসেছি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পেরে ভালো লেগেছে। ভোটাধিকারে কোনো বাধা দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, কোথাও কেউ বাধা দেয়নি।

মো. জিসান নামের এক তরুণ ভোটার বলেন, এবারই প্রথম ভোট দিলাম। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভোট দিতে সহযোগিতা করেছেন, অনুভূতি বেশ ভালো। কোনো সমস্যা হয়নি। 

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে অংশ নেন ২৮টি রাজনৈতিক দলের ৮৮ জন নারী প্রার্থী। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৬৯ নারী প্রার্থী। গতবারের তুলনায় এবার ভোটে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বাড়লেও বিজয়ীর সংখ্যা কমেছে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ১২৮ জন নারী রিটার্নিং অফিসারদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাই, নির্বাচন কমিশনে আপিল ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৮৮ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে অংশ নেন ১৬ জন, জাতীয় পার্টি থেকে ৬ জন, স্বতন্ত্র থেকে ২৪ জন। বাকিরা ছিলেন বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি, এনপিপি, বিএসপি এবং বিএনএমসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। এরমধ্যে ১৭ জন প্রার্থী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। 

তারা হলেন-গোপালগঞ্জ-৩ শেখ হাসিনা, রংপুর-৬ শিরীন শারমিন চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-১ সৈয়দা জাকিয়া নূর, মুন্সীগঞ্জ-২ সাগুফতা ইয়াসমিন, গাইবান্ধা-৩ উম্মে কুলসুম স্মৃতি, গাইবান্ধা-১ আবদুল্লাহ নাহিদ নিগার, গাজীপুর-৩ রুমানা আলী, গাজীপুর-৪ সিমিন হোসেন রিমি, শেরপুর-২ মতিয়া চৌধুরী, বাগেরহাট-৩ হাবিবুন নাহার, বরগুনা-২ সুলতানা নাদিরা, সিরাজগঞ্জ-২, মোছা. জান্নাত আরা হেনরী, মাদারীপুর-৩ মোসা. তাহমিনা বেগম, চাঁদপুর-৩ ডা. দীপু মনি, চট্টগ্রাম-২ খাদিজাতুল আনোয়ার, কক্সবাজার-৪ শাহীন আক্তার। হবিগঞ্জ-১ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী সরাসরি নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা ছিল ২২ জন। এরমধ্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ ১৯ জনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন। এর বাইরে জাতীয় পার্টি থেকে দুজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ থেকে একজন নারী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সংসদ নির্বাচনে ওইবারই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী নির্বাচিত হন।

সময়ের আলো/আরএস/ 






https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close