ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট একটি আমানত
প্রকাশ: রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৪, ১:১৬ এএম  (ভিজিট : ১৪২০)
ইসলাম সর্বকালীন, সর্বজনীন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের সব সমস্যার দিকনির্দেশনা ইসলামে বিদ্যমান। ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, আন্তর্জাতিক জীবন, অর্থব্যবস্থা, সমর ব্যবস্থা, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র ব্যবস্থা, আন্তঃদেশীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি, পারস্পরিক সম্পর্ক, চারিত্রিক সংশোধনের দিকনির্দেশনা, সমসাময়িক স্বার্থ সংরক্ষণ, প্রতিরক্ষা নীতি, আইনকানুনের যাবতীয় শাখা-প্রশাখার বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। ইসলামের ইতিহাসে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর কাফন-দাফনের আগে ইসলামী বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান এবং খলিফা নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-কে সাহাবাদের মতামতের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচিত করা হয়। অপরদিকে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন একটি অপরিহার্য বিষয়।

রাষ্ট্রের নাগরিকরা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে বাছাই করার সুযোগ পায়। নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে। প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দল ও প্রার্থীদের জন্য ভোট হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার মোক্ষম হাতিয়ার। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম। নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ইসলাম সর্বদা ব্যক্তির সততা, যোগ্যতা, খোদাভীতি, ঈমান-আমল, জ্ঞান ও চারিত্রিক গুণাবলিকে প্রাধান্য দিয়েছে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া যেমন জরুরি, প্রার্থী বা নির্বাচিত ব্যক্তিও তেমন সৎ-যোগ্য, জ্ঞানী-গুণী, চরিত্রবান, খোদাভীরু, আমানতদার, ন্যায়পরায়ণ, দেশপ্রেমিক, মানবদরদি ও দায়িত্বানুভূতিসম্পন্ন হওয়া তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন।

ইসলাম একটি সামাজিক ও মানবিক ধর্ম। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটিই একটি ইবাদত। এর মাধ্যমে দেশ, ধর্ম ও মানবতার সেবা করার বিরাট সুযোগ লাভ করা যায়। যারা প্রার্থী হবেন তারা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় মানবতার সেবার নিয়তে প্রার্থী হন এবং আমানতদারির সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে আল্লাহকে ভয় করে দায়িত্ব পালন করেন, তা হলে তারা শুধু দুনিয়ায় সম্মানিত হবেন না, বরং আল্লাহর কাছেও বড় মর্যাদার অধিকারী হবেন। ইসলাম সমাজকর্মীদের বড় মর্যাদা দিয়েছে। নিয়ম ও স্তর অনুযায়ী তাদের বিপুল পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে বলে হাদিসে এসেছে। এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক কাজের সফলতা, ব্যর্থতা, সুফল ও কুফল ব্যক্তির নিয়তের ওপর নির্ভর করে’ (বুখারি-মুসলিম)। সুতরাং প্রার্থী যদি নির্বাচিত হয়ে দেশ, ধর্ম ও মানুষের জন্য কল্যাণকর এবং সওয়াবের কাজ করেন, তখনই শুধু তিনি সে সম্মান ও মর্যাদা পাবেন। যারা ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবেন তারাও অনুরূপ সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। কারণ ভোটারদের জন্যই তিনি এমন পুণ্যময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যারা ভালো বা মন্দ কাজ করে বা করার ক্ষমতা ও সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় তারা ওই কর্ম সম্পাদনকারীর সমান সওয়াব বা গুনাহ অর্জন করবে।’ (তিরমিজি)

নেতা নির্বাচনে অত্যন্ত দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দেয় ইসলাম। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট একটি পবিত্র আমানত। এ আমানত ওই ব্যক্তির কাছেই গচ্ছিত রাখতে হবে; যিনি শিক্ষিত, সৎ, যোগ্য, ন্যায়পরায়ণ, নিরপেক্ষ এবং রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করেছেন, করছেন ও করবেন। এ ছাড়া যিনি তার অন্তরে জবাবদিহির ভয় পোষণ করেন, তাকে ভোটদান করলে সমাজের কল্যাণকর কাজ হবে এবং অসৎ, অযোগ্য, পক্ষপাতদুষ্ট, অশিক্ষিত, সমাজবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে তার দ্বারা সমাজের ধ্বংসাত্মক ছাড়া আর কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না।

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে চারটি বিষয়ের সমষ্টি-১. ওকালাহ বা প্রতিনিধি নিয়োগ করা। ২. শাহাদাহ বা সাক্ষ্য দেওয়া। ৩. শাফায়াহ বা সুপারিশ করা। ৪. আদাউল আমানাহ বা আমানত প্রাপকের কাছে অর্পণ করা। প্রথম বিষয়, অর্থাৎ কাউকে ভোট দেওয়া মানে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তাকে নির্বাচন করা। কোনো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, ওই প্রার্থী তার দৃষ্টিতে সৎ ও যোগ্য। দেশ ও জাতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে তিনিই সর্বাধিক উপযুক্ত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের শত্রুতার কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না; সুবিচার করো’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৮)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক, আল্লাহর জন্য ন্যায়সংগত সাক্ষ্যদান করো। তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৩৫)
ভোটের আরেকটি অর্থ সুপারিশ করা। অর্থাৎ প্রার্থীর জন্য এই মর্মে সুপারিশ করা যে, দেশ ও জাতির উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে তিনিই সর্বাধিক যোগ্য। বৈধ কাজের জন্য সুপারিশ করলে সুপারিশকারী সওয়াব পাবে এবং অবৈধ কাজের জন্য সুপারিশ করলে গুনাহ হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎ কাজের জন্য সুপারিশ করবে তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে সে তার পাপের বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুত আল্লাহ সব বিষয়ে ক্ষমতাবান।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৫) 

সুতরাং যে ব্যক্তি অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিল, সে যেন অবৈধ কাজের জন্য সুপারিশ করল। ফলে ভোটদাতাকেও প্রার্থীর অন্যায়-অপরাধের পাপের বোঝা বহন করতে হবে। ভোট দেওয়ার আরেকটি অর্থ হচ্ছে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোটারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগের প্রস্তাব করা। ইসলামের কথা হলো সৎ ও আমানতদার ব্যক্তিকে উকিল বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

কারণ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কাউকে প্রতিনিধি বানালে তার লাভক্ষতি শুধু নিজের ওপরই বর্তায়। কিন্তু জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ তাকে জনগণের প্রতিনিধি নিযুক্ত করা, যার লাভক্ষতি পুরো সমাজ বা জাতিকেই ভোগ করতে হয়।

প্রতিনিধি নিয়োগের অধিকার আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে আমানতস্বরূপ। আমানতের জিনিস তার প্রকৃত পাওনাদারের কাছে হস্তান্তর করে দিতে হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের নির্দেশ দেন, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৮)। আমানতকৃত বস্তু তার যথার্থ প্রাপকের কাছে না পৌঁছানো খেয়ানত আর এটা হারাম ও মুনাফিকের নিদর্শনগুলোর একটি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার মধ্যে ঈমান নেই’ (বায়হাকি)। অতএব, নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট প্রদান ঈমানি দায়িত্ব।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close