বাংলার ইতিহাসে বিখ্যাত প্রায় সব ব্যক্তির মধ্যে একটি বিষয়ের মিল পাওয়া যায়। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে তারা পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অর্থাৎ বহু বছর আগে থেকেই পত্রিকা তথা সাংবাদিকতার সঙ্গে বাঙালির বুদ্ধিজীবী শ্রেণির একটি গভীর সম্পর্ক।
সালটা ১৯৬৩। বাংলাদেশে তখন মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষা, মুক্ত জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তখনও সাংবাদিকতার অনুশীলন সেভাবে শুরু হয়নি। ঠিক সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মপ্রকাশ করে সাংবাদিক সমিতি। সভাপতি শাহ মো. রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক তপেন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে দেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রথম সংগঠন হিসেবে শুরু হয় এর পথচলা। স্বাধীনতা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে সংগঠনটির নাম হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস)। গত ২৬ ডিসেম্বর গৌরবময় পথচলার ছয় দশক পূর্ণ করল বাকৃবিসাস। তার হাত ধরে ছয় দশক পূর্ণ হলো বাংলাদেশের ক্যাম্পাস সাংবাদিকতারও।
দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সূচনালগ্ন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতি। দীর্ঘ ছয় দশকে বাকৃবির বহুমুখী গবেষণামূলক তথ্য প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা না থাকার পরও নিজেদের অধ্যবসায় আর একাগ্রতায় তারা নিজেদের নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তবে এই যাত্রা সহজ ছিল না কখনোই। একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি সংবাদ হাতে লিখতে হতো। পরবর্তীতে বিশ^বিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল শাখার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ কার্যালয়ের ফ্যাক্স মেশিন দিয়ে সংবাদগুলো ঢাকার কার্যালয়ে প্রেরণ করতে হতো। সে সময় ফিল্ম ক্যামেরার প্রচলন ছিল। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কোনো ঘটনার ছবি প্রেরণের প্রয়োজন হতো, তখন ময়মনসিংহ শহরের কোনো স্টুডিও থেকে ছবি ওয়াশ এবং প্রিন্ট করে সংবাদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হতো এবং সংবাদসহ ছবিটিকে খাম বন্দি করে পত্রিকা অফিসে পাঠাতেন সাংবাদিকরা।
সমিতির পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধিকে ঢাকায় যেতে হতো, প্রতিনিধি প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসের বার্তা বিভাগে গিয়ে সেসব খাম পৌঁছে দিয়ে আসতেন।
যুগের আধুনিকায়নে সাংবাদিকতা যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি পেয়েছে গতি। ক্যামেরা, ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের যুগে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে দ্রুত তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনলাইন সাংবাদিকতা, মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতাও চালিয়ে যাচ্ছে বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা।
বাকৃবিসাসের ৬০ বছরপূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, ছয় অনুষদের ডিন, শিক্ষক, শুভাকাক্সক্ষী, বাকৃবিসাসের প্রাক্তন সদস্যসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে বাকৃবিসাসের ছিল একাধিক আয়োজন। গত ২৬ ডিসেম্বর কেক কেটে দিবসটি উদযাপন করেন সংগঠনটির বর্তমান ও প্রাক্তন সদস্যরা। একই সময় মোড়ক উন্মোচন করা হয় হীরকজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ স্মরণিকা ‘হীরক’ এর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো হারুন-অর-রশিদ, গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (জিটিআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. বেনতুল মাওয়া, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আসলাম আলী, জিটিআই অধ্যাপক ড. মাছুমা হাবিব, ফিশারিজ টেকনোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা, অধ্যাপক ড. মো. নূরুল হায়দার রাসেল, অধ্যাপক ড. আরিফ হাসান খান রবিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেছবাহ উদ্দীন, পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, সাংবাদিকতা পেশা বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা পেশা। এর সঙ্গে জ্ঞানের গভীরতার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কৃষি খাতের উন্নতির ফলেই বাংলাদেশের এত বিশাল জনগণের খাদ্যের যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নে কৃষি খাত, বাকৃবি ও কৃষিবিষয়ক ইনস্টিটিউট দেশের জন্য যে অবদান রাখছে তা জাতির সামনে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের বিস্তর ভূমিকা আছে। হীরকজয়ন্তীতে বাকৃবিসাসের সদস্যদের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানান উপাচার্য ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অর্জন জাতির কাছে তুলে ধরায় সংগঠনটির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
সময়ের আলো/জেডআই