ই-পেপার বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪
বুধবার ১৬ অক্টোবর ২০২৪

প্রচারে নৌকার পালে হাওয়া
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪, ১:০৯ এএম  (ভিজিট : ২৯৩৬)
গাজীপুর দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ হিসেবে পরিচিত। দলীয় কোন্দল, দ্বন্দ্ব এবং হাইব্রিড নেতাদের কারণে এখানকার প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনেকটা কোণঠাসা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুবিধাবাদীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

ফলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের পাঁচটি আসন ঘিরে নির্বাচনি উত্তাপ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে গাজীপুর-১, ২ ও ৫ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচারে অংশ নিচ্ছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। এর আগেও যিনি নানা অনিয়ম এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন। বর্তমানে এই তিনটি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে ফের তিনি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া জাহাঙ্গীর আলম; আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতাকর্মীদের নিয়ে আঁটঘাট বেঁধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। এই তিনটি আসনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি সভাও করেছেন।

তবে নির্বাচনি প্রচারে নৌকার প্রার্থীরাও আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। দিনরাত সভা-সমাবেশ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছেন নৌকার প্রার্থীরা। গত কয়েক দিনের ব্যাপক প্রচারে গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই নৌকার প্রার্থীদের গতির কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গতি অনেকটা কমে গেছে। ফলে বলা যায় গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, নির্বাচনি মাঠে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছেন গাজীপুর-২ আসনের প্রার্থী। এ আসনে শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের পুত্র এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল চারবার নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের কাছে এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জ মনে হলেও গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল স্বাভাবিক গতিতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

গতকাল সোমবার সময়ের আলোকে তিনি বলেন, নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ জোয়ার কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। ইনশাআল্লাহ নৌকার বিজয় নিশ্চিত। জনগণ বুঝেশুনেই আমাকে ভোট দেবেন। কারও ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ বুঝে গেছেন, নৌকার জয় ছাড়া গাজীপুরের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকার পক্ষে ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবেন তারা।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন। সবাই যানে তার অতীত অনেক খারাপ।

গাজীপুর সদরে কথা হয় কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে সময়ের আলোকে তারা জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন রাজবাড়ী সংলগ্ন শ্মশান দখল করে নিয়েছেন। প্রায় ১৬ বিঘা জমি দখল করে এখন পাঁচ বিঘা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন। নির্বাচনের পর দখল করা জমি বুঝিয়ে দেবেন বলেছেন।

এ ছাড়াও গাজীপুর সদরের ছায়াবিথি এলাকায় একাধিক জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে আলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এই আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ঈগল মার্কা। বর্তমানে মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। উত্তরায় মোবাইল চুরির অভিযোগে একসময় জেলও খেটেছেন। কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জামানত হারিয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন প্রচারে সাইফুল ইসলাম ব্যস্ত থাকলেও মাঠে তেমন প্রভাব নেই।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর-২ আসনের নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক কাজী ইলিয়াস সময়ের আলোকে বলেন, আমি জাহাঙ্গীরের বিষয়ে কিছু বলব না, তবে এ আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন জাহিদ আহসান রাসেল। এই এলাকার মানুষ উন্নয়নে বিশ^াসী। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে নৌকার বিকল্প নেই।

গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেলকে নিয়ে গণসংযোগ করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

গতকাল মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সময়ের আলোকে বলেন, এই আসনে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমি এই আসনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ভোটারদের মধ্যে আমাকে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আশা করছি এবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। জাহাঙ্গীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর এমন কিছু হয়ে যায়নি যে তার কথায় এলাকার মানুষ আমার বিপক্ষে ভোট দেবেন। এখানে আমার ও নৌকার শক্তঘাঁটি। কোনো অপশক্তি এখানে কিছু করতে পারবে না।

বাবাদের আসনে উত্তরসূরি তিন কন্যা : গাজীপুর-৩, ৪ ও ৫ আসনে প্রথিতযশা তিন নেতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তাদের মেয়েরা এবার নৌকার মাঝি। গাজীপুর-৩ আসনে প্রথমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মেয়ে কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রুমানা আলী টুসি মনোনয়ন পেয়েছেন। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। তার মার্কা ট্রাক।

রুমানা আলী টুসি সময়ের আলোকে জানান, তার বাবা স্বাধীনতার পর বহুদিন এ এলাকার মানুষের সেবা করেছেন, জাতীয় রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। তিনি বলেন, এবার নৌকার জয় নিশ্চিত।

অন্যদিকে এ আসনে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী সবুজের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে দখলবাজি-চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। তবে এলাকায় তেমন পরিচিতি না হওয়ায় টুসিকে জয় পেতে কিছুটা বেগ পেতে হবে।

গাজীপুর-৪ আসনে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারের হাতেই ছিল নৌকার টিকেট। আগের ধারাবাহিকতায় এবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছেন বঙ্গতাজের মেয়ে ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে রিমির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শহিদ তাজউদ্দীন আহমদের ভাগনে শিল্পপতি আলম আহমেদ। নানা কারণে রিমি এলাকায় বিতর্কিত। এলাকায় শোনা যাচ্ছে, এ আসনে প্রচারে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদ।

আলমের পক্ষে নির্বাচনি মাঠে কাজ করছেন গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা, কাপাসিয়ার সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ একঝাঁক বহিষ্কৃত নেতাকর্মী। তবে গত চার দিন সোহেল তাজ নৌকার পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ায় রিমির পক্ষে মাঠে নেমেছেন নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী।

গাজীপুর-৫ আসনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক শহিদ ময়েজ উদ্দিনের মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি নৌকার প্রার্থী। এ আসনে চুমকির বিরোধিতায় মাঠে নেমেছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ডাকসুর সাবেক ভিপি, সাবেক সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামানের পক্ষে ভোট চাইছেন জাহাঙ্গীর। তবে এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশঙ্কা করা হলেও নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই দলের নেতাকর্মীরা একাট্টা। ফলে এ আসনটি এবারও নৌকার দখলে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close